–মাত্র একমাস। নিশ্চয় এর সঙ্গে টাকাপয়সার ব্যাপার ছিল।
–ঠিক জানি না। তবে মিঃ ডাইসন তো শুনতে পাই প্রায় নাকি মজা করে বলেন লাকি তার ভাগ্য ফিরিয়েছে।
-হ্যাঁ, আমিও শুনেছি কথাটা।
–দ্বিতীয়জন অবশ্য খুবই সুন্দরী। তবে যতদূর জানি প্রথমা স্ত্রী স্বামীর জন্য যথেষ্ট টাকাকড়ি রেখে যান।
হিলিংডনদের অবস্থাও বোধহয় খুব ভালো।
–আমিও সেরকমই শুনেছি। ইংলণ্ডে নিজস্ব বাড়ি আছে। সারা শীতকালটা বেড়িয়ে বেড়ায়।
এই সময় ক্যানন প্রেসকট এলেন। মিস প্রেসকট তার সঙ্গে বেড়াতে চলে গেলেন। চেয়ারে একাই বসে রইলেন মিস মারপল।
একটু পরে পাশ দিয়ে হোটেলের দিকে যেতে যেতে মিঃ গ্রেগরী ডাইসন মিস মারপলকে দেখে একগাল হেসে চলে গেলেন।
মিস মারপল ভাবতে লাগলেন, সবকিছুই কেমন খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। মিসেস ডাইসনের মৃত্যুর কাহিনী-মেজর প্যালগ্রেভও একজন স্ত্রী-হত্যাকারী পুরুষের কাহিনী বলেছিলেন।
হঠাৎ পেছনে শব্দ পেয়ে চিন্তার সূত্র ছিঁড়ে গেল। তাকিয়ে দেখেন লাকি এগিয়ে আসছে।
গ্রেগকে এদিকে দেখেছেন?
–এইমাত্র তো হোটেলের দিকে গেলেন।
–আশ্চর্য, অথচ আমি—
বলতে বলতে লাকি দ্রুত হোটেলের দিকে চলে গেলেন।
–এই সময় মিস মারপল দেখতে পেলেন মিঃ জ্যাকসনের সাহায্যে হুইল চেয়ারে বসে মিঃ র্যাফায়েল সকালের ভ্রমণে বেড়িয়েছেন। ভদ্রলোকের সঙ্গে একা কিছুক্ষণ কথা বলার ইচ্ছা তার।
হুইল চেয়ার কাছাকাছি আসতেই তিনি সরাসরি বললেন, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল মিঃ র্যাফায়েল।
-বলুন কি দরকার। নিশ্চয় আফ্রিকার কোন মিশন কিংবা গির্জা সারাইয়ের জন্য চাঁদা চাইবেন?
-হ্যাঁ, এসব ক্ষেত্রে কিছু চাঁদা পেলে তো খুশি হওয়াই যায়। তবে আপাতত আমার জিজ্ঞাসা হল, মেজর প্যালগ্রেভ আপনাকে কি কোন খুনের গল্প বলেছিলেন?
ওহ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন মিঃ র্যাফায়েল, আপনাকেও শুনিয়েছিলেন দেখছি।
–আপনাকে ঠিক কি বলেছিলেন জানতে ইচ্ছে করছে।
-মনে হয় স্বর্ণকেশী কোন তরুণী স্বামীকে খুন করেছিল।
একটু থিতিয়ে গেলেন মিস মারপল। তবু জানতে চাইলেন, কিভাবে, বিষ খাইয়ে?
–না। খুব বুদ্ধি খাঁটিয়ে ছিলেন মহিলা। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে গ্যাসের উনুনে চেপে ধরেছিলন। তারপর রটিয়ে দিয়েছিলেন আত্মহত্যা বলে।
–মেজর কোন ফটো দেখিয়েছিলেন আপনাকে?
–কার, সেই স্ত্রীলোকটির? না–
এই সময় ডাঃ গ্রাহাম একটা বই হাতে এসে চেয়ারে বসে পড়লেন। তাকে দেখে মিস মারপল জিজ্ঞেস করলেন, টিম কোল খুব চিন্তিত দেখছি।
–হ্যাঁ। আমরা সকলেই তো চিন্তায় রয়েছি।
–নিশ্চয় মেজর প্যালগ্রেভের মৃত্যুর ব্যাপারে ভাবছেন?
–না, স্ত্রীকে নিয়েই ভাবনায় পড়েছি। মাঝে মাঝেই খুব খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয় পায়।
–কি ধরনের স্বপ্ন দেখে?
–কারা সব ওকে তাড়া করে, তার ওপরে নজর রাখে। জেগে উঠেও সেই রেশ থেকে যায়। ইদানিং মেজর প্যালগ্রেভের মৃত্যুর পর থেকে কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে দিন দিন।
কোন ডাক্তার
–ডাক্তারের নাম একদম শুনতে পারে না। দেখি কি করা যায়। এবারে উঠি মিস মারপল–কিছু কাজ পড়ে আছে।
বিদায় নিল টিম কেণ্ডাল।
অদূরে একটা চেয়ারে বসেছিলেন ডাঃ গ্রাহাম। তার দিকে তাকিয়ে মনস্থির করে নিলেন মিস মারপল। তারপর উঠে ডাঃ গ্রাহামের মুখোমুখি চেয়ারে বসে পড়লেন।
–আপনার কাছে মাপ চাইতে এলাম ডাঃ গ্রাহাম। সেদিন ইচ্ছে করেই মিথ্যা কথা বলেছিলাম।
অবাক হয়ে তাকালেন ডাঃ গ্রাহাম। বললন, এ নিয়ে অত ভাববার কি আছে? বলুন শুনি।
–এক ভাইপোর ছবির বিষয়ে বলেছিলাম মেজর প্যালগ্রেভকে দেখিয়েছিলাম। তিনি সেটা আমাকে ফেরত দেননি।
-হ্যাঁ, মনে পড়েছে। ফটোটা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
–আসলে এরকম কোন ফটো ছিল না।
–কি বলছেন? তাহলে বলেছিলেন কেন?
এরপর মিস মারপল সবকথা খুলে বললেন। মেজর প্যালগ্রেভের খুনের কাহিনী-একটা ফটো বার করা, তারপর কিভাবে দেখাতে গিয়ে ব্যর্থ হন।
সবশেষে দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, আমার মনে হয়েছিল মিথ্যা কিছু বললে হয়তো ফটোটা দেখা সম্ভব হতে পারে।
–কোন খুনীর ফটো আপনাকে মেজর দেখাতে চেয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, ওরকমই বলেছিলেন তিনি। আশ্চর্য ব্যাপার হল তার পরদিনই তিনি মারা যান। আর ফটোটাও অদৃশ্য হয়।
ডাঃ গ্রাহাম অদ্ভুত দৃষ্টিতে মিস মারপলের দিকে তাকালেন। মিস মারপল ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, এখন আপনি আমার কথা নিশ্চয়ই অবিশ্বাস করবেন না। আমি পরে স্থির করি সবকথা আপনাকে বললে হয়তো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
.
১০.
সেদিনই ডাঃ গ্রাহাম জেমসটাউন অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের অফিসে তার বন্ধু ডেভেনট্রির সঙ্গে দেখা করলেন। গোড়া থেকে সব ঘটনা তাকে খুলে বললেন। সবশেষে বললেন, মেজরের মৃত্যুটাকে স্বাভাবিক বলেই অন্য সকলের মত আমিও মেনে নিতে পারতাম যদি না ফটো অদৃশ্য হয়ে যেত। তাছাড়া হোটেলের পরিচারিকাটিও জোরের সঙ্গেই ওষুধের বোতলের কথাটা জানিয়েছিল।
ডেভেনট্রি বললেন, মেজর ব্লাডপ্রেসারে মারা না গিয়ে থাকলে, তুমি বলতে চাইছ আসল ওষুধের বদলে কেউ অন্য ওষুধ রেখে দিয়েছিল?
ডাঃ গ্রাহাম বললেন, ভিক্টোরিয়া ওরকমই ভেবেছে। তবে আসল ঘটনা তা নয়। মেজরকে কেউ মারার উদ্দেশ্যে পানীয় বা অন্য কিছুর সঙ্গে কিছু খাইয়ে দিয়েছিল। আর মৃত্যুটাকে স্বাভাবিক রূপ দেওয়ার জন্য ব্লাডপ্রেসারের ওষুধের শিশি তার ঘরে রেখে দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে রটনা করে দেওয়া হয় মেজর উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। ব্যাপারটা অত্যন্ত বুদ্ধির সঙ্গে করা হয়েছে।