.
০৮.
মিঃ র্যাফায়েলের সেক্রেটারী এসথার ওয়াল্টার্স খুব সুন্দরী না হলেও যথেষ্ট আকর্ষণীয়। সেদিন বিকেলে তার সঙ্গে বসে গল্প করছেন মিস মারপল। মেয়েটিকে একটু যাচাই করা তার উদ্দেশ্য।
কথার ফাঁকে মিস মারপল ওয়াল্টার্সের প্রসঙ্গ তুললেন।
-ও খুবই কাজের লোক। অঙ্গসংবাহক হিসেবেও যথেষ্ট দক্ষ। বলল মিস ওয়াল্টার্স।
–মনে হয় অনেক দিন আছে মিঃ র্যাফায়েলের কাছে? জানতে চাইলেন মিস মারপল।
খুব বেশি দিন নয়, আট-ন মাস হবে।
বিবাহিত নিশ্চয়ই?
–মনে হয় না।
–বেশ সুদর্শন যুবক।
–আমারও তাই মনে হয়।
খুবই নিরাসক্ত ভাবে জবাব দিল এসথার ওয়াল্টার্স। মিস মারপলের মনে হল, স্বামীহারা বলেই হয়তো এমন মানসিকতা হয়েছে।
–আপনি কি মিঃ র্যাফায়েলের কাছে অনেকদিন কাজ করছেন?
-বছর পঁচেক হবে। স্বামী মারা যাবার পর মেয়েটির জন্য একটা কাজের দরকার হয়ে পড়েছিল।
দৃষ্টিতে খানিকটা কৌতুক খানিকটা সহানুভূতির আভাস ফুটিয়ে মিস মারপল বললেন, মিঃ র্যাফায়েলের কাজ করা খুবই কঠিন, তাই না?
কঠিন ঠিক নয়, বুঝে চলতে হয়। মাঝে মাঝে পরস্পরবিরোধী কথা বলেন এই যা। মনে হয় খুব অল্পেই কোন মানুষ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা করে ফেলেন। তবে আমি ভালই মানিয়ে চলতে পারছি।
মিঃ জ্যাকসনকেও খুব বাধ্য বলে মনে হয়।
–ও খুব কৌশলী আর যথেষ্ট বুদ্ধিমান।
এমনি কথাবার্তার ফাঁকে নানা প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মিস মারপল এক সময় চলে এলেন চার প্রকৃতিপ্রেমিক ডাইসন আর হিলিংডনদের বিষয়ে।
এসথার ওয়াল্টার্স বলল, ওরা চার বছর ধরে এখানে আসছেন। তবে গ্রেগরী ডাইসন অনেকবার এসেছেন। সম্ভবতঃ প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম এসেছিলেন, তার শরীর তখন ভাল ছিল না।
–তিনি কি মারা যান? না বিবাহবিচ্ছেদ?
-খুব সম্ভব এদেশেই ওয়েস্ট ইণ্ডিজের কোন দ্বীপে মারা যান। মনে হয় কোন গোলমাল ঘটেছিল। তবে স্ত্রী সম্পর্কে উনি কিছু বলতে চান না। সবই অবশ্য আমার শোনা কথা।
–ও আচ্ছা, তার পরই বুঝি কি রে মহিলাকে বিয়ে করেন! নামটা খুব অদ্ভুত।
–শুনেছি আগের স্ত্রী বর্তমান স্ত্রীর আত্মীয়া।
–হিলিংডনদের সঙ্গে ওদের পরিচয় বোধহয় অনেক দিনের।
বছর তিন-চার আগে এখানেই সম্ভবত আলাপ হয়।
–হিলিংডনদের খুবই শান্ত প্রকৃতির বলে মনে হয় আমার।
–হ্যাঁ। দুজনেই খুব নম্র।
–সবার কাছে তো শুনতে পাই ওদের দুজনের মধ্যে মনের টান খুব।
–কেন, আপনার সেরকম মনে হয় না!
বলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল এসথার ওয়াল্টার্স। এর পরে আসল প্রসঙ্গে মোড় নিলেন মিস মারপল। বললেন, আচ্ছা আপনার কি মনে হয়, যা ব্যাপার চলছে সে বিষয়ে মিঃ ডাইসন ওয়াকিবহাল।
–আমার কোন ধারণা নেই।
স্পষ্ট বিরক্তি প্রকাশ পেল এসথার ওয়াল্টার্সের কণ্ঠে।
-যাই বলুন, মিঃ প্যালগ্রেভের ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। কেণ্ডালরাও বিপাকে পড়ে গেল।
-হ্যাঁ, ওদের হোটেলেই তো ঘটনাটা ঘটল। মাত্র ছ মাস হল ওরা স্যানডারসনদের কাছ থেকে হোটেলের দায়িত্ব নিয়েছে।
তবে এখানে তো আনন্দের পরিবেশ। মৃত্যুর ঘটনা অতি অল্প সময়ই মানুষের মনে স্থায়ী হয়।
–একথা আমিও মলিকে বলেছি। ও খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে।
-মিসেস কেণ্ডালকে দেখে অবশ্য খুবই উদ্বেগহীন মনে হয়। আমার মনে হয় ওর স্বামীর দুশ্চিন্তাই বেশি।
–মলি জোর করেই হাসিখুশি থাকে। হোটেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আগে থেকেই ভেবে ভেবে কেমন যেন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে।
-বেচারি। খুবই দুঃখজনক। তবে মৃত্যুটা তত খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ওই ধরনের কিছু নয় তাই রক্ষে। এসবক্ষেত্রেই মানুষের সন্দেহ জাগে। তবে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হল, মেজর প্যালগ্রেভের কাছে কখনো শুনতে পাইনি যে তার উচ্চ রক্তচাপ ছিল। আপনাকে কোনদিন বলেছিলেন?
-কেউ হয়তো মিঃ র্যাফায়েলকে বলে থাকতে পারে। তবে মিঃ র্যাফায়েল আবার উল্টো কথা বলেন। জ্যাকসন একবার আমাকে বলেছিল, মেজরের মদ খাওয়া কমিয়ে দেওয়া উচিত।
মেজর প্যালগ্রেভকে তার বকবকানি স্বভাবের জন্য দেখছি অনেকেই পছন্দ করত না। . বিরক্তিকর ভাবে তিনি বারবার একই কাহিনী শোনাতেন।
–হ্যাঁ, নানা কৌশল করে তার গল্প বন্ধ করতে হত।
–আমার অবশ্য বারবার একই গল্প শুনতে অসুবিধা হয় না। কারণ, শোনার পর তা আর আমার মনে থাকে না।
মৃদু হাসলেন মিস মারপল।
–একটা কাহিনী শোনাতে তিনি খুব ভালবাসতেন, আবার বললেন মিস মারপল, একটা খুনের কাহিনী। আপনাকেও নিশ্চয়ই সেই গল্প শুনতে হয়েছে?
মনে হয় শুনেছিলাম। স্ত্রী তার স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গ্যাসের উনুনে তার মাথা চেপে ধরে খুন করেছিল।
-না, ওই গল্প নয়–একটা ছবি ছিল মেজরের কাছে, সবাইকে দেখাতেন
–ঠিক মনে করতে পারছি না। আপনাকে দেখিয়েছিলেন?
–দেখাতে এনেছিলেন, তখনই বাধা পড়ে যায়।
.
০৯.
অনেক চেষ্টার পর মিস প্রেসকটকে একান্তে পেয়ে মিস মারপল নানা বিষয়ে আলোচনা জুড়লেন। একসময় ডাইসনদের প্রসঙ্গ এলো।
মিস প্রেসকট বললেন, প্রথম স্ত্রীর বিষয়ে মনে হয় কিছু কুৎসা রটনা হয়েছিল। তিনি এখানেই সম্ভবত মার্টিনিক বা টোবাগো দ্বীপে মারা যান। শুনেছি ওই অদ্ভুত নামধারী লাকি প্রথমা স্ত্রীর মাসতুতো বোন। লোককে এ নিয়েও নানা কথা বলতে শুনেছি।
তাই নাকি? বললেন মিস মারপল।
–মিঃ ডাইসন তো শুনেছি প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর একমাসের মধ্যেই দ্বিতীয় বিয়েটা করেছিলেন।