গুজব রটাবার শিল্পটা বেশ ভালরকমে রপ্ত ছিল টিমের। যা যা আমার কানে এসেছে তার অধিকাংশই মনে হয় তার রটনা করা।
এমন একটা রটনা হয়েছিল যে মলি এক অনুপযুক্ত লোককে বিয়ে করতে জেদ ধরেছিল। তার পরিবারের লোকদের আপত্তির জন্য সেই বিয়ে সম্ভব হয়নি।
আমার ধারণা সেই অনুপযুক্ত লোকটি টিম স্বয়ং। যদিও আমার ধারণা তখন সে অন্য কোন নাম ব্যবহার করেছিল।
মলির বাড়ির লোকেদের জোরালো আপত্তির কথা শুনে টিম কোল হয়তো তার কোন গোপন অপরাধ সম্পর্কে শঙ্কিত হয়েছিল। তাই সে মলির বাড়ির লোকদের সঙ্গে পরিচিত হতে চায়নি পর্যন্ত।
তবে মলির সঙ্গে ঠিক করে সে একটা গোপন মতলব নিপুণভাবে কাজে লাগায় এবং উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে। ওদের দুজনের কাছেই ব্যাপারটা খুব মজার হয়ে উঠেছিল।
মলি বাড়ির লোকেদের কাছে এমন ভাব দেখতে চেয়েছিল যে সে লোকটির জন্য পাগল। ঠিক সেই সময়েই জনৈক টিম কেণ্ডালের আবির্ভাব ঘটে। এই ক্ষেত্রে সে মলির আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের অনেকের নাম করে তাদের বিশ্বাস জন্মাতে সক্ষম হয়। তারাও তাকে আদর অভ্যর্থনার ত্রুটি করে না। আগের অযোগ্য লোকটির বদলে একজন যোগ্য নোক পাওয়া গেছে। বলে তারা নিশ্চয় আনন্দিত হয়েছিল।
মলি আর টিম এই ব্যাপারটি নিয়ে আড়ালে যে খুবই মজা করেছিল, তা সহজেই অনুমান করা চলে।
বিয়েটা দুজনের সুসম্পূর্ণ হয়েছিল। আর মলির টাকা দিয়েই টিম এই হোটেলটা আগের মালিকের কাছ থেকে কিনে নেয়। তারপর দুজনেই এখানে চলে আসে।
টিম কেণ্ডাল যথেষ্ট যোগ্য ও করিকর্মা পুরুষ। মলির টাকা সে যথাসাধ্য তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলে।
আর এমনি এক সময়েই তার পরিচয় ঘটে এসথার ওয়াল্টার্সের সঙ্গে। সে নতুন করে আবার প্রচুর টাকার সম্ভাবনার ইসারা পেয়ে যায়।
টিম কেণ্ডাল বুঝতে পেরেছিল, খুব বেশিদিন তাকে অপেক্ষা করতে হবে না। সময়টাকে সে দ্রুত প্রস্তুতির জন্য কাজে লাগালো। সে নানারকম ছলচাতুরির আশ্রয় নিল।
মলি মানসিক রোগগ্রস্ত একথাটা বিশ্বাস করাবার জন্য সে তার জাল কিভাবে বিস্তার করেছিল দেখুন। মানসিক বিপর্যয় সম্পর্কিত একটা বই সে হাতের কাছেই রেখে গিয়েছিল। তারপর মলি কিছু বুঝতে না পারে সেভাবে তাকে মাদক আর ওষুধ প্রয়োগ করে চলেছিল যাতে সে অলীক কিছু স্বপ্ন দেখে এবং উদ্ভট চিন্তা তার মাথায় আসে।
এখানে এই ব্যাপারে আপনার জ্যাকসন বেশ বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ রেখেছে। মলির কোন কোন উপসর্গ দেখে নিশ্চয় তার মনে খটকা লেগেছিল। সেসব মাদকের প্রতিক্রিয়া বলেই তার সন্দেহ হতে থাকে। এই সন্দেহ ভঞ্জনের জন্যই সেদিন সে মলির বাংলোয় ঢুকেছিল বাথরুমে রাখা প্রসাধনী পরীক্ষা করবে বলে। মলির মুখে মাখার ক্রিম পরীক্ষা করে দেখেও ছিল।
প্রাচীনকালে ডাইনীরা মলমে বেলেডোনা মিশিয়ে দিলে একই ধরনের উপসর্গ দেখা যেত–এই বিষয়টা কোনভাবে জ্যাকসনের মাথায় ঢুকে গিয়েছিল। মাঝে মাঝে কিছু ভুলে যাওয়া, নানা রকম আতঙ্ককর স্বপ্ন–এসব থেকে মলি নিজেও বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
এইভাবে ক্রমে তার মধ্যে মানসিক রোগের সবরকম লক্ষণই দেখা দিতে শুরু করলে জ্যাকসনের সন্দেহও ঘণীভূত হয়। আমার মনে হয় মেজর প্যালগ্রেভের গল্প থেকেও জ্যাকসন এমন একটা ধারণা পেয়ে থাকতে পারে।
–মেজর সত্যিই এক অদ্ভুত লোক ছিলেন বটে। বললেন মিঃ র্যাফায়েল।
নিজেই নিজের মৃত্যু ডেকে এনে ছিলেন। বললেন, মিস মারপল, সেই সঙ্গে প্রাণ হারাল বেচারি ভিক্টোরিয়া। মলিও তো প্রায় শেষ হবার মুখেই চলে গিয়েছিল।
এসব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটলেও তিনি একজন খুনীকে সনাক্ত করতে আমাদের সাহায্য করে গেছেন।
–মেজর প্যালগ্রেভের কাচের চোখের কথা হঠাৎ আপার মনে পড়ে গেল কি করে?
–আমার অবাক লাগছে অমন ধূর্ত টিম কেণ্ডাল ভুল করে লাকিকে খুন করল কি ভাবে? আপনি
–নিছক ভাগ্য বলতে হবে ব্যাপারটাকে। আমার মনে হয় সে নিশ্চিত হয়েছিল যে সকলকে নিঃসন্দেহ করতে পেরেছে মলি মানসিক রোগগ্রস্ত।
একটা কাজ সমাধা হওয়ার পর পরবর্তী কাজের দিকে হাত বাড়ায় সে। মলিকে যে মাদকজাতীয় ওষুধ খাইয়ে চলেছিল, তাই খাওয়ানোর পর ওকে বলে ওরা দুজনে মিলে খুনের ব্যাপারে রহস্য ভেদ করবে।
টিম মলির সাহায্যে চায় এবং বলে সকলে ঘুমিয়ে পড়লে খাড়ির কাছে একটা বিশেষ জায়গায় ওরা দুজনে মিলিত হবে।
টিম নিশ্চয় এমন আভাস দিয়েছিল যে সে জানে খুনী কে। চেষ্টা করলে তারা তাকে ফাঁদে ফেলতে পারবে।
ওষুধ খাওয়ানোর ফলে মলি তার স্বাভাবিক বিবেচনা শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। তাই স্বামীর কথায় বাধ্য মেয়ের মত সে খাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিল।
কিন্তু ওষুধটা এক্ষেত্রে শাপে বর হল। মলির ঠিক যেই সময়ে খাড়ির কাছে পৌঁছনোর কথা, গতি শ্লথ হয়ে পড়ার দরুন, সেই সময় পৌঁছতে পারে না। অনেক পিছিয়ে পড়েছিল ও।
যথাসময়ে টিম নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হয়। সেখানে যাকে সে দেখতে পায় তাকে মলি বলেই ভেবে নেয়। তার মাথায় সোনালী চুল, গায়ে জড়ানো ছিল হালকা সবুজ শাল।
টিম আর বিলম্ব করে না। মেয়েটির পেছনে এসে আচমকা মুখে হাত চেপে ধরে আর সজোরে জলে টেনে নিয়ে গিয়ে ডুবিয়ে চেপে ধরে রাখে।
–আমারও মনে হচ্ছে, ঠিক এরকমটাই করেছিল সে। কিন্তু স্ত্রীকে শেষ করে দেবার আরও সহজ পথ তো হাতেই ছিল। বেশিমাত্রায় মাদক খাইয়ে দিলেই তো কাজটা হাসিল হত।