মেজর সকলকে যে কাহিনী শোনাতে শুরু করেছিল, তা টিম কেণ্ডালও জানতে পেরেছিল। তাতেই সে বুঝে যায় মেজর তাকে চিনতে পেরেছেন। তাই তাকে খুন হতে হল। পরে ভিক্টোরিয়া মেয়েটিকেও মরতে হয়। সে টিমকে মেজরের ঘরে একটা ট্যাবলেট ভর্তি শিশি রাখতে দেখে ফেলেছিল।
বাংলোতে অতিথিদের ঘরে ঢোকার ব্যাপারটা এমন কিছু অস্বাভাবিক ছিল না। নানা কারণেই টিমকে যেতে হত। তাই প্রথমে এ নিয়ে ভিক্টোরিয়ার মনে কোন সন্দেহ উপস্থিত হয়নি।
কিন্তু যে কোন কারণেই হোক সে এনিয়ে টিমকে নানা রকম প্রশ্ন করতে শুরু করে। বাধ্য হয়েই তখন তাকে শেষ করে দিতে হয়।
টিম আগাগোড়া এই খুনটার জন্যই ছক করে সব কাজ করে চলেছিল। ও একজন স্ত্রী হত্যাকারী–দাগী–
–সমস্ত মিথ্যা কথা–জঘন্য অপবাদ–উন্মত্তের মত চিৎকার করে উঠল টিম। এসথার ওয়াল্টার্স মিঃ র্যাফায়েলের হুইল চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আচমকা অস্ফুট আর্তনাদ করে সে ছুটে গেল টিমের দিকে। জ্যাকসনের হাত থেকে তাকে টেনে ছিনিয়ে আনার বৃথা চেষ্টা করল।
–ওকে ছেড়ে দাও–ছেড়ে দাও–এসব কোন কথাই সত্যি নয়। আমি জানি প্রিয় টিম-এসব সত্যি নয়। তুমি কাউকে খুন করতে পার না। কখনোই না-ওই শয়তানী–ওই যাকে তুমি বিয়ে করেছ, সেই এসব করেছে। ও তোমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছিল। না-না তুমি কাউকে খুন করতে পার না–আমি বিশ্বাস করি না টিম তোমাকে ভালবাসি। আমি…
এরপর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা আর সম্ভব হল না টিম কেণ্ডালের পক্ষে। সে ক্রুদ্ধ আক্রোশে চিৎকার করে উঠল–চুপচুপ কর শয়তানী–একদম, চুপ। ওই নোংরা মুখ বন্ধ কর–আমাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চাস
–তাহলে এইসব ব্যাপার চলছিল? নরম সুরে বলে উঠলেন মিঃ র্যাফায়েল।
.
২৫.
মিঃ র্যাফায়েল আর মিস মারপল নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেছেন।
-তাহলে আমাদের এসথার টিম কেণ্ডালের প্রেমে মজে ছিল। বললেন মিঃ র্যাফ্যায়েল।
–ভবিষ্যতে বিয়ের সম্ভাবনা নিয়ে ওর মধ্যে বেশ রোমান্টিকতা ছিল।
–টিম কেণ্ডালের স্ত্রী মারা গেলে বলছেন?
–আমার ধারণার কথা বলছি শুনুন। মলি মারা যাবে এমন কোন ধারণা এসথার ওয়াল্টার্সের ছিল বলে মনে হয় না। মলির সঙ্গে অন্য একজনের প্রেমঘটিত ব্যাপার রয়েছে এমন একটা ধারণা টিম এসথারকে দিয়েছিল নিশ্চয়, আর সে তা বিশ্বাসও করেছিল। সেই লোক যে মলিকে অনুসরণ করে এখানে উপস্থিত হয়েছে সম্ভবতঃ এমন কথাও টিম বলেছিল। ফলে এসথারের বিশ্বাস হয়েছিল, ওদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ অনিবার্য। এটা ওর কাছে সম্মানজনক হবে বলেই তার মনে হয়েছিল।
বুঝতে পারছি সবই। কিন্তু দুর্বোধ্য ঠেকছে টিম এসথারের প্রতি আকৃষ্ট হল কেন?
–একথা তো আপনার অজানা থাকার কথা নয়।
–ধারণা একেবারেই করতে পারছি না তা নয়। তবু আপনার ব্যাখ্যা শুনতে চাই। আপনার বুদ্ধি অসাধারণ।
আমি ব্যাখা করলে তা করব কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নিয়ে। যাই হোক, নিশ্চয়ই আপনার মনে পড়বে, একবার আমি আপনাকে বলেছিলাম, জ্যাকসন আপনার কাগজপত্র সুযোগ পেলেই ঘাঁটাঘাঁটি করে।
-হ্যাঁ। তবে আমি এ বিষয়ে সতর্ক ছিলাম। ওর কিছু পাবারই সম্ভাবনা ছিল না।
–আমার ধারণা আপনার উইলের ব্যাপারটা ও জানতে পেরেছিল।
–হ্যাঁ তা সম্ভব। সুটকেসে উইলের একটা নকল রাখা ছিল।
–আপনি একবার, ওদের কানে যায় এভাবেই আমাকে বলেছিলেন, এসথার ওয়াল্টার্সের জন্য আপনার উইলে কোন ব্যবস্থা রাখেননি। এ বিষয়টা এসথার আর জ্যাকসনকে ও জানিয়ে রেখেছিলেন। এটা ঠিকই যে জ্যাকসনকে আপনি কিছুই দিয়ে যাননি। তবে এসথারকে উইলে টাকা দিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। যদিও এই বিষয়ে বিন্দুমাত্র আভাস আপনি কাউকে দেননি। তাই কি?
–ঠিক তাই। কিন্তু আপনি এসব জানলেন কি ভাবে?
–খুব বেশি বুদ্ধি খরচ করতে হয়নি, হাসলেন মিস মারপল; আপনি যেভাবে জোর দিয়ে বারবার কথাটা জানাতে চেয়েছিলেন, তাতেই আসল ব্যাপারটা আমার জানা হয়ে যায়। কেউ মিথ্যা বললে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই আমি তা বুঝতে পারি।
-সত্যিই আপনি অসাধারণ মহিলা। আমি আমার উইলে এসথারের জন্য পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ডের ব্যবস্থা রেখেছি। আমি মারা যাবার পরে জানতে পেরে নিশ্চয় ও অবাক হয়ে যেত।
এবারে বুঝতে পারছি। টিম কেণ্ডাল উইলের কথা জানতে পেরেই লোভে পড়ে যায়। স্ত্রীকে বেশি মাত্রায় মাদক খাইয়ে বা অন্য উপায়ে শেষ করে পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড সেই সঙ্গে এসথারকে বিয়ে করার পরিকল্পনা ছকে নিয়েছিল।
কোন একসময়ে, টাকাটা হাতে এসে গেলে সম্ভবত তাকেও একইভাবে সরিয়ে দিত। কিন্তু ঠিক কিভাবে জানতে পারল এসথার পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড পেতে চলেছে?
মিস মারপল বললেন, জ্যাকসনই টিমকে সেকথা জানায়। ওদের দুজনের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। কোন দিন গল্পচ্ছলেই সম্ভবতঃ জ্যাকসন কোন কিছু খেয়াল না করেই প্রকাশ করে ফেলেছিল, এসথার বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পেতে চলেছে।
আমার অনুমান, নিজে সে এসথারকে বিয়ে করার চেষ্টা করে চলেছে। এমন ইঙ্গিতও করে থাকতে পারে। যদিও সে তখনো পর্যন্ত এসথারের কাছ থেকে তেমন সাড়া পায়নি।
–আপনার ব্যাখ্যায় কল্পনার প্রশ্রয় থাকলেও সবই সম্পূর্ণ যুক্তিপূর্ণ।
–সব ব্যাপারই সুন্দর ভাবে মিলে যাচ্ছে, এটা সত্যি। তবে আমি এতই মূর্খ ছিলাম যে ধূর্ত টিম কেণ্ডালের একটা মোক্ষম চাল একদম ধরতে পারিনি।