হোক আম্মাতে পারছি না জীছেছেন আক যা হুকুম কি ব্যাপার আছে যেন সে
সমুদ্র থেকে আসা পথ ধরে এগিয়ে এসে মলি হোটেলের চৌহদ্দির বাইরে নিজেদের বাংলোর কাছে এসে একমুহূর্ত দাঁড়াল। তারপর পাল্লা ঠেলে শোবার ঘরে ঢুকে পড়ল।
ঘরে আলো জ্বলছে। বিছানা খালি। মলি বিছানায় গিয়ে বসল। কয়েক মুহূর্ত পরেই কি মনে হতে বিছানার গদির তলা থেকে লুকিয়ে রাখা বইখানা টেনে বার করল।
ঠিক এই সময় বাইরে পায়ের শব্দ পাওয়া গেল। চমকে উঠে অপরাধীর ভঙ্গীতে বইখানা নিজের পেছনে লুকিয়ে ফেলল।
হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরে ঢুকল টিম।
-ওঃ তুমি এখানে। কোথায় ছিলে? আমি খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছি।
–খাড়ির কাছে গিয়েছিলাম।
–তুমি সেখানে
কি বলতে গিয়ে চেপে গেল টিম।
-খাড়ির কাছে গিয়ে অপেক্ষা করতে পারলাম না। কে যেন জলের মধ্যে মরে পড়ে আছে।
-হ্যাঁ, তোমাকে ভেবে আমি ভয় পেয়েছিলাম। এইমাত্র জানতে পারলাম খাড়িতে লাকি মারা গেছে।
–আমি ওকে মারিনি, বিশ্বাস কর টিম, আমি ওকে মারিনি। মারলে ঠিক আমার মনে থাকত
টিম এগিয়ে মলির পাশে বিছানায় বসল। বলল, না, না, তুমি ওকে মারতে পার না মলি। এ ধরনের চিন্তা একদম মাথায় আনবে না। নিশ্চয় সে নিজেই ডুবে মরেছে। হিলিংডনের সঙ্গে ওর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছিল। তাই ও জলে গিয়ে ডুবেছে
–কিন্তু…লাকি এমন করতে যাবে কেন…কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ওকে মারিনি…
–প্রিয় মলি, বলছিতো তুমি কিছু করোনি। বলতে বলতে টিম ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরল। মলি নিজেকে মুক্ত করে সরে গেল।
এ জায়গাটা আর আমার ভাল লাগছে না। এখানে কেবল ভয় আর আতঙ্ক…কেবল অন্ধকার…আমি তার মধ্যে জড়িয়ে আছি…কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছি না। তীক্ষ্ণ তীব্র স্বরে বলে উঠল মলি।
-চুপ মলি। দয়া করে চুপ করো।
বলে এক লাফে বাথরুমে গিয়ে টিম গ্লাসে কিছু নিয়ে এল। স্ত্রীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এই নাও, এটা খেয়ে নাও। এতে সুস্থ বোধ করবে।
মলি নিজেকে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করল। বলল, আমি কিছু খেতে পারব না..আমার খুব কষ্ট হচ্ছে…
-হ্যাঁ পারবে, বিছানায়, বসে এটা খেয়ে নাও।
টিম দুহাত দিয়ে মলিকে জড়িয়ে ধরল। তারপর গ্লাসটা ঠোঁটের কাছে এগিয়ে ধরল।
–এই নাও, খেয়ে ফেল।
ঠিক এমনি সময়ে জানালার কাছে মিস মারপলের কণ্ঠস্বর শোনা গেল।
জ্যাকসন, ভেতরে গিয়ে ওর হাত থেকে গ্লাসটা কেড়ে নিয়ে শক্ত করে ধরে রাখবে। ও কিন্তু মরিয়া হয়ে উঠতে পারে। সতর্ক থাকবে।
জ্যাকসনের শরীর সুগঠিত। বিনা প্রশ্নে হুকুম পালন করার শিক্ষায় শিক্ষণপ্রাপ্ত সে। পলকের মধ্যে ঘরের ভেতরে একঝলক বিদ্যুতের মতই ঝাঁপিয়ে পড়ল সে।
এক ঝটকায় মলির ঠোঁটের কাছে ধরা টিমের হাতের গ্লাসটা এক হাতে অন্য হাতে সবলে জাপটে ধরল টিমকে।
গ্লাস ধরা হাতে একটা মোচড় দিতেই গ্লাসটা চলে এলো জ্যাকসনের হাতে।
টিম হিংস্র গর্জন তুলে উন্মত্তের মত নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু জ্যাকসনের হাতের বেষ্টনী ছাড়াতে পারল না।
বুনো পশুর মত চিৎকার করতে লাগল টিম–এসব কি হচ্ছে-আমাকে ছাড়ো–শিগগির ছাড়ো
ওকে শক্ত করে ধরে রাখো জ্যাকসন। বললেন মিস মারপল।
-এখানে কি ঘটছে সব?
বলতে বলতে এসথার ওয়াল্টার্সের সাহায্যে ঘরে ঢুকলেন মিঃ র্যাফায়েল।
-আপনার লোক বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে। ওকে বলুন আমাকে ছেড়ে দিতে। চিৎকার করে উঠল টিম।
-না। কিছুতেই না। দৃঢ় স্বরে বললেন মিস মারপল।
মিস মারপলের দিকে তাকিয়ে মিঃ র্যাফায়েল বললেন, এই কাণ্ড…এবার তাহলে শোনা যাক বৃত্তান্ত
-এতদিন বোবা আর মূর্খ সেজে ছিলাম। এখন আমি আর তা নই। মিঃ র্যাফায়েল, ওই গ্লাসের পদার্থটুকু ও তার স্ত্রীকে জোর করে পান করাতে চাইছিল। এটা পরীক্ষা করলেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে।
আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি এরমধ্যে রয়েছে মারাত্মক পরিমাণের মাদকদ্রব্য। মেজর প্যালগ্রেভের বলা কাহিনীর মধ্যে যে নকশা পাওয়া যেত এখানেও রয়েছে তাই। মানসিক অবসাদগ্রস্ত স্ত্রী, আত্মহত্যার হাত থেকে তার জীবন রক্ষা করেছে।
সেই স্ত্রী দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় সফল হয়। ঠিক এরকমই ছিল মেজরের গল্পের কাঠামো। তিনি এমনি গল্প শুনিয়ে আমাকে একটা ছবি দেখাতে গিয়ে মুখ তুলে তাকিয়েই…
-হ্যাঁ, আপনার ডান কাঁধের ওপর দিয়ে…বললেন মিঃ র্যাফায়েল।
-না, আমার ডান কাঁধের ওপর দিয়ে কিছুই দেখা সম্ভব ছিল না তার। কিছুই দেখেন নি তিনি।
তবে যে আপনি বলেছিলেন–
–আপনাকে ভুল বলেছিলাম। সেটাই ছিল আমার বোকামি। আমার ডান কাঁধের ওপর দিয়ে তাকিয়ে ছিলেন বটে, কিন্তু তার বাঁ চোখটা ছিল কাচের–ওই চোখে কিছু দেখা সম্ভব ছিল না।
-হ্যাঁ, মনে পড়েছে আমার, বললেন মিঃ র্যাফায়েল, ব্যাপারটা আমিও ভুলে গিয়েছিলাম। তার মানে তিনি কিছুই দেখেননি।
–দেখতে পেয়ে ছিলেন অবশ্যই–তবে এক চোখে। তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন তার ডান চোখ দিয়ে। আর নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। সেই চোখে আমার ডান কাঁধের ওপর দিয়ে নয়। আমার বাঁ দিক থেকে।
-কেউ ছিল সেই দিকে?
–হ্যাঁ, টিম কেণ্ডাল আর তার স্ত্রী কাছাকাছি বসে ছিল। পাশেই ছিল মস্ত একটা হিবিসকাস গাছ। সম্ভবত তারা হোটেলের হিসাবপত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
মেজর প্যালগ্রেভের কাচের বাঁ চোখ জ্বলজ্বল করছিল। অন্য চোখ দিয়ে পরিষ্কার দেখতে পেয়েছিলেন হিবিসকাস গাছের কাছে যে লোকটি উপবিষ্ট, তার মুখ অবিকল ছবির মুখ। সেই ছবিটাও ছিল হিবিসকাস ঝোপের পাশে।