না। ও কথা আমি মানতে পারি না।
দৃঢ়স্বরে বললেন মিস মারপল।
একটু আগেই চাঁদ ঢাকা পড়েছিল মেঘের আড়ালে। এবার মেঘ সরে গেল। মুক্ত চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়ল চরাচরে। উজ্জ্বল রুপোলি আলোয় মলির ছড়িয়ে থাকা সোনালী চুল ঝকমক করে উঠল।
মিস মারপল হঠাৎ একটা অস্ফুট শব্দ করে নিচু হয়ে বসলেন। তারপর হাত বাড়িয়ে সোনালী চুলে হাত রাখলেন।
–আমাদের নিশ্চিত হওয়া দরকার। বললেন তিনি।
–কিন্তু আপনি যে টিমকে কিছু স্পর্শ না করার কথা বললেন। ইভিলিন বললেন।
–তা জানি। তখন চাঁদের আলো ছিল না, তাই আমি দেখতে পাইনি…
মিস মারপল ধীরে আঙুল চালিয়ে চুলের গোছা ফাঁক করতেই চুলের গোড়া দেখা গেল। ইভিলিন সঙ্গে সঙ্গে তীক্ষ্ণ বিস্ময়সূচক শব্দ করে উঠল।
–একি…এ লাকি–মলি নয়–
-হ্যাঁ। দুজনের চুলের রঙ প্রায় এক। কিন্তু মলির চুলের গোড়ার দিকটা গাঢ় রঙেরও কলপ লাগাতো
–কিন্তু লাকি মলির শাল গায়ে দিয়েছিল কেন?
–শালটা ও পছন্দ করত। লাকি বলেছিল এরকম একটা শাল কিনবে। বোঝা যাচ্ছে সেটা কিনে নিয়েছিল।
-ওটা দেখেই তো আমরা ভুল করেছিলাম…
–কেউ একজন টিম কেণ্ডেলকে খবর দিলে ভালো হত। ইভিলিন বলে উঠলেন, ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি।
বলতে বলতে তিনি দ্রুত পায়ে পাম গাছের সারির মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেলেন।
কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন মিস মারপল। পরে মাথাটা সামান্য ঘুরিয়ে অনুচ্চ কণ্ঠে বললেন, তারপর বলুন কর্ণেল হিলিংডন?
পাম গাছের আড়াল ছেড়ে বাইরে আত্মপ্রকাশ করলেন এডওয়ার্ড হিলিংডন।
–আপনি জানতেন আমি ওখানে ছিলাম?
–আপনার ছায়া পড়েছিল। বললেন মিস মারপল।
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর এডওয়ার্ড হিলিংডন নিজের মনে বলে উঠলেন, নিজের খেলায় ও বড় বেশি দূর চলে গিয়েছিল।
–ও মারা যাওয়ায় আপনি বোধ হয় খুশি?
–অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? অস্বীকার করব না। ও মারা যাওয়ায় সত্যিই আমি খুশি।
–হ্যাঁ, মৃত্যু অনেক সময় সমস্যার সমাধান করে দেয়। শান্ত ধীর দৃষ্টিতে তাকালেন মিস মারপল।
এবারে ভীতি প্রদর্শনের ইঙ্গিত প্রকাশ পেল এডওয়ার্ড হিলিংডনের কণ্ঠস্বরে।আপনি যদি ভেবে থাকেন
বাধা দিয়ে শান্ত স্বরে বললেন মিস মারপল, যে কোন মুহূর্তে আপনার স্ত্রী মিঃ ডাইসনকে নিয়ে এসে পড়বেন। তাছাড়া ডাঃ গ্রাহামকে নিয়ে মিঃ কোলও আসতে পারেন।
মুহূর্তে স্বাভাবিক হয়ে গেলেন এডওয়ার্ড হিলিংডন। ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
মিস মারপল আর একটি শব্দও উচ্চারণ না করে নিঃশব্দে সরে এসে বাংলোর দিকে হেঁটে চললেন।
.
২৪.
মিঃ র্যাফায়েল তার বিছানায় গভীর নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন। এত আতঙ্ক হৈ চৈ কোন কিছুই তার। কানে পৌঁছায়নি। হঠাৎ দুই কাঁধে মৃদু ঝাঁকুনি খেয়ে জেগে উঠলেন তিনি।
–কি…কি হয়েছে।
–আমি। হাঁপতে হাঁপাতে বললেন মিস মারপল। বালিশে উঁচু হয়ে বসবার চেষ্টা করলেন। মিঃ র্যাফায়েল। স্থির চোখে তাকালেন মিস মারপুলের দিকে।
–এই মাঝরাতে আমাকে এভাবে…
–আমাদের যা করবার তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমি একটা অকাট–ঘটনার গতিপ্রকৃতি বুঝতে ভুল করেছিলাম। অথচ অতি সহজ ব্যাপার।
-একটু পরিষ্কার করে বলুন। কি সহজ ব্যাপার?
–আপনি গভীর ঘুমে ছিলেন বলে কিছুই জানতে পারেন নি। এদিকে একটা দেহ পাওয়া গেছে খাড়ির ধারে। প্রথমে আমরা মলির বলেই ভেবেছিলাম। পরে দেখা গেল লাকি ডাইসনের মৃতদেহ। খাড়িতে জলে ডুবেমরেছে।
লাকি–ডুবে গেছে? নিজেই ডুবেছিল না কেউ…
–কেউ ডুবিয়ে দিয়েছে। বললেন মিস মারপল।
-বুঝতে পেরেছি। এজন্যেই বললেন এত সহজ ব্যাপার। গ্রেগ ডাইসন…তাই তো? সে গা ঢাকা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন?
মিস মারপল বললেন, মিঃ র্যাফায়েল, যা বুঝতে পারছি, আমাদের একটা খুন ঠেকাতে হবে।
-খুনটা হয়ে গেছে বললেন যে
–এটা ভুলবশতঃ হয়ে গেছে। যে কোন মুহূর্তেই আর একটা খুন হতে পারে। যে করেই হোক আমাদের ঠেকাতে হবে। এখনই আমাদের যেতে হবে। •
-বুঝতে পারছি না কি বলতে চাইছেন। কিন্তু আমি আর আপনি খুন ঠেকাবো কি করে? আপনি প্রায় একশোতে পৌঁছেছেন আর আমি আমার ভাঙাচোরা শরীর।
-আপনি বলেছিলেন, জ্যাকসনকে যা হুকুম করবেন তাই সে করবে, তাই না? –অবশ্যই করবে, তবে তার জন্য তাকে পুষিয়ে দেবার ব্যাপার আছে।
–তাকে এক্ষুনি ডেকে পাঠান। আর বলে দিন, আমি যা বলব, তাই যেন সে করে।
কয়েক সেকেণ্ড কি ভাবলেন মিঃ র্যাফায়েল। তারপর হাতের নাগালের কলিংবেল টিপলেন। সেই সঙ্গে জ্যাকসনের নাম ধরে গলা তুলে হাঁক ছাড়লেন।
মাঝখানের দরজা দিয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ঢুকল জ্যাকসন।
–আমাকে ডেকেছেন স্যার? কোন গোলমাল কিছু? মিঃ র্যাফায়েল বললেন, শোন জ্যাকসন, তুমি মিস মারপলের সঙ্গে যাবে। তিনি তোমাকে যেখানে নিয়ে যেতে চাইবেন কিংবা যা করবেন বিনা আপত্তিতে তাই পালন করবে। ওতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না। এজন্য বাড়তি পুরস্কারের ব্যবস্থা করব আমি। বুঝতে পেরেছ, এই আমার হুকুম।
-ধন্যবাদ স্যার-সব বুঝতে পেরেছি।
–তাহলে আসুন মিঃ জ্যাকসন, বললেন মিস মারপল, মিঃ র্যাফায়েল, মিসেস ওয়াল্টার্সকে বলে যাচ্ছি আপনাকে তুলে নিচে চলে আসতে।
-কোথায় যেতে হবে? জানতে চাইলেন মিঃ র্যাফায়েল।
–কেণ্ডালদের বাড়িতে। আমার ধারণা মলি সেখানেই ফিরে আসবে। বললেন মিস মারপল।