–মনে হয়। তবে ভাল আছে। আপনার তো ওদের সঙ্গে পাখি দেখতে যাবার কথা ছিল।
–তাই যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু বিশ্রী মাথা ধরল বলে শেষ মুহূর্তে আর যাইনি। তাই ভাবলাম, যদি এখানে কোন কাজে লাগতে পারি।
-খুব ভাল কথা। আমি এখানেই রয়েছি।
মিস মারপল তার চেয়ারে ফিরে গিয়ে বসলেন।
লাকি কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে চলে গেলেন। ততক্ষণে বাথরুমের পাশের অন্য দরজা দিয়ে জ্যাকসনও বেরিয়ে গেছে।
জ্যাকসন যে ক্রিমের কৌটো হাতে নিয়েছিল সেটা তাক থেকে তুলে নিয়ে মিস মারপল নিজের পকেটে পুরে ফেললেন।
.
২২.
টিম ইতিমধ্যে ফিরে এসে মলির দেখাশোনা করছিল। নৈশ ভোজের সময় মিস মারপল মলির কাছে থাকবেন এমন ব্যবস্থা হয়েছিল।
টিম মিস মারপলকে জানিয়েছিল, ওই সময়টায় মিসেস হিলিংডন ও মিসেস ডাইসনও মলির কাছে থাকতে পারে।
হোটেলের সামনের পথ ধরে নিজের বাংলোর দিকে ফিরে চলেছিলেন মিস পারপল। এই মুহূর্তে কি কর্তব্য সেকথাই মাথায় ঘুরছিল।
মেজর প্যালগ্রেভ তার বিরক্তিকর গল্প বলার সময়ে এমন হঠকারী মন্তব্য করেছিলেন যে তা অন্যের কানেও ঢুকেছিল। আর তারই পরিণতিতে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হল।
এ পর্যন্ত সবই পরিষ্কার। কিন্তু এরপর থেকেই দেখা দিয়েছে জটিলতা। কেউ যে নিহত হতে চলেছে এই ভাবনা ক্রমশই তার মধ্যে প্রবল হয়ে উঠছিল। কিন্তু সম্ভাব্য সেই ব্যক্তির পরিচয় না জানা পর্যন্ত মনের অস্বস্তি কাটবে না তার।
কে সেই লোক? যোয়ান প্রেসকট? গ্রেগরী ডাইসন? নাকি লাকির স্বামী গ্রেগরী ডাইসন? লাকি কি নতুন স্বামী লাভের জন্য লালায়িত হয়ে পড়েছে? তাহলে অবশ্য তার দুদিক থেকেই লাভ। গ্রেগরী ডাইসনের বিধবা স্ত্রী হিসেবে বিপুল অর্থ আর মুক্তি।
মিঃ র্যাফায়েলকে নিয়ে জ্যাকসন চলে গিয়েছিল। মিসেস এসথার ওয়াল্টার্স বারান্দায় চেয়ারে বসেছিল। মিস মারপলকে দেখে জিজ্ঞেস করল, আজ সারা বিকেল আপনাকে দেখতে পাইনি।
-মলির কাছে ছিলাম আমি। ওকে আজ অনেক সুস্থ দেখলাম। বললেন মিস মারপল।
এসথার মৃদু হেসে বলল, আমার কথা কি কেউ মানবে, আমি জানি ওর কিছু হয়নি।
কপাল কুঞ্চিত হল মিস মারপলের। বললেন, ওর আত্মহত্যার চেষ্টা বলছেন–
-আমি বিন্দুমাত্রও বিশ্বাস করি না ও বেশি মাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল। আমার বিশ্বাস, ডাঃ গ্রাহামেরও তাই অভিমত।
–বুঝতে পারছি না একথা কেন বলছেন?
-ওর উদ্দেশ্য হল, অন্যের নজর আকর্ষণ করা। আমি ওর সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি। ওর এসব ব্যাপারে একজন পুরুষ জড়িত আছে। একসময় সেই লোককে বিয়ে করার জন্যই উতলা হয়ে উঠেছিল মলি। বাড়ির লোকের আপত্তির জন্য অবশ্য তা সম্ভব হয়নি।
–এরকম কিছু আমিও মনে হয় শুনেছি। বললেন মিস মারপল।
-টিমকে বিয়ে করলেও সেই লোক তার পেছন ছাড়েনি। আমার কেমন মনে হয়, মলিকে অনুসরণ করে সেই লোক এখানেও হাজির হয়েছে।
-কিন্তু কে সেই লোক?
–আমি জানি কে সে। ওরা এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক।
–তাহলে মলি কি এখনো সেই লোকের অনুরক্ত?
তা না হলে, সেই লোক পেছন নেবে কেন? কিন্তু আমি জানি, লোকটা ভয়ানক বদ। এই সব মেয়েদের হাত করে কাজ করিয়ে নিতে তার জুড়ি নেই।
–লোকটা অতীতে এ ধরনের কিছু করেছে কিনা আপনি জানেন?
-রটনা কত রকমই হতে পারে–তাতে কি। লোকটি হয়তো বিবাহিত ছিল, সেকারণেই বাড়ির লোকে আপত্তি করেছিল। এমনও হতে পারে সত্যিকারের একজন বদলোক ছিল কিংবা পানাসক্ত। বেআইনী কোন কাজে লিপ্ত থাকাও অসম্ভব নয়।
তবে এটা ঠিক মলি আজও তাকে পছন্দ করে। আমি এব্যাপারে নিশ্চিত।
–আপনি কি নিজে কিছু দেখেছেন, বা শুনেছেন? এসথার বলল, আমি যতটা জানি, ততটাই বলেছি।
–ওইসব খুনের ব্যাপার?
–খুনের ব্যাপারগুলো ভুলে যাওয়াই উচিত। যা ঘটেছে, ঘটে গেছে, তা নিয়ে অত মাতামাতি করার কি আছে। আপনি মিঃ র্যাফায়েলকেও এর মধ্যে জড়িয়েছেন। আমি জানি যতই চেষ্টা করুন আর বিশেষ কিছু জানতে পারবেন না।
–আপনি দেখছি অনেক কিছুই জানেন। বললেন মিস মারপল, সবকিছু আপনার প্রকাশ করা উচিত।
-এতে কি লাভ হবে। আমি কিছুই প্রমাণ করতে পারব না।
–এমনও তো হতে পারে, আপনি কিছু প্রকাশ না করার জন্য আবার একটা খুন হল।
–এরকম কিছুই ঘটবে না, আমি নিশ্চিত। জোরের সঙ্গে বলল এসথার। আমার মনে হয়, মলি যদি লোকটার সঙ্গে কোথাও চলে যায় তাহলে সবদিক থেকেই ভাল হয়। আমাদের কাউকেই আর ভেবে অস্থির হতে হবে না।
কথা শেষ করে এসথার তার ঘড়ির দিকে তাকাল। বলল, রাতের খাওয়ার সময় হয়েছে, আমাকে এখুনি পোশাক বদলাতে হবে।
মিস মারপল এসথারের গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইলেন কয়েক মুহূর্ত।
পেছন থেকে ডাঃ গ্রাহামের কণ্ঠস্বর শুনে ভাবনায় ছেদ পড়ল। ডাঃ গ্রাহামকেই খোঁজ করছিলেন তিনি। ঘুরে তাকিয়ে বললেন, বিকেলটা মলি কোলের কাছেই ছিলাম। ও খুব দ্রুত সামলে উঠেছে দেখলাম।
–এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, বললেন ডাঃ গ্রাহাম, জিনিসটা খুব বেশি মাত্রায় যায় নি।
–আমার ধারণা ছিল, আধ শিশি পিলই বুঝি খেয়ে বসে আছে। বললেন মিস মারপল।
–অতগুলো খেয়েছিল বলে মনে হয় না। ট্যাবলেটের কিছুটা শিশি থেকে আগেই সরিয়ে রাখা হয়েছিল বলে আমার ধারণা।
–এমনও হতে পারে, এ কাজটা ইচ্ছাকৃত। কিছু বোঝানোর জন্যই হয়তো…ওদের দুজনের মধ্যে যদি কোন মনোমালিন্য ঘটে থাকে–