ডাঃ গ্রাহাম টিমকে আশ্বস্ত করে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
৩. মলিকে দেখাশোনা করা
২১.
মলিকে দেখাশোনা করা, আবার হোটেল চালানো–দুই দিকের চাপে নাজেহাল হতে হতো। টিম কেণ্ডালকে, যদি না ইভিলিন তার কাজের দায়িত্ব কিছুটা হাল্কা করে দিত।
পুরো একটা বেলা মলির কাছে ছিলেন ইভিলিন। কিন্তু পরদিন পেলিক্যান পয়েন্টে পাখি দেখতে যাবার কথা ছিল সঙ্গীদের সঙ্গে। তাই মলির দেখাশোনার দায়িত্ব স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে মিস মারপলই হাতে নিলেন।
–আজ তোমাকে খুব ভাল লাগছে মলি। খুব আনন্দ হল। বললেন মিস মারপল।
–আমি ভালই আছি। কেবল ঘুম পায়।
বেশতো ঘুমোবার চেষ্টা করো। আমি কথা বলব না। চুপচাপ বসে সেলাই করব।
মলি মলিন মুখে সামান্য হেসে বামদিকে পাশ ফিরে শুলো।
–আমি একটু ঘুমোই মিস মারপল।
দীর্ঘকালের সেবাব্রতের অভিজ্ঞতা রয়েছে মিস মারপলের। তাই মলির শ্বাসপ্রশ্বাস খানিক নিয়মিত হলে তিনি উঠে মলির বিছানার চাদর চারপাশ থেকে টেনে গদির নিচে গুঁজে দিলেন।
হঠাৎ গদির নিচে একটা বই হাতে ঠেকল তাঁর। একটু আশ্চর্য হলেও বইটা টেনে বার করলেন।
চকিতে একবার মলির দিকে দৃষ্টি ফেরালেন মিস মারপল। মনে হল নিদ্রিত। তিনি বইটির মলাট উল্টে দেখলেন–একটা স্নায়ুরোগ সংক্রান্ত বই। যেখানে মার্ক রাখা ছিল, সেই পাতায় মানসিক ব্যাধির নানা উপসর্গের কথা লেখা রয়েছে।
কয়েক পাতায় চোখ বোলানোর পরেই মিস মারপলের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। তিনি বই বন্ধ করে কয়েক মুহূর্ত কি ভাবলেন। বইখানা আবার যেখান থেকে বের করেছিলেন সেখানেই রেখে দিলেন।
কি ভেবে পেছনে ফিরে তাকালেন। তার চোখে পড়ল, মলি চোখ মেলে তাকিয়ে, তাকে লক্ষ্য করছিল, আবার চোখের পাতা বুজে গেল।
চকিতের জন্য তার সন্দেহ হল, মলি সত্যিই ঘুমিয়েছে না তার সবটাই ভান। সঠিক কিছু বোধগম্য হল না তার। তবু তার মনে হল মলির চোখে যেন ধূর্ততার ছায়া দেখতে পেলেন। তিনি তাঁর নিজের চেয়ারে ফিরে এলেন।
নানান চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। বেশিক্ষণ চেয়ারে স্থির হয়ে বসতে পারলেন না তিনি। উঠে দাঁড়িয়ে ঘরে খানিকক্ষণ পায়চারি করলেন, দুদিকের জানালায় কিছুক্ষণ দাঁড়ালেন।
তারপর কি ভেবে জানালার পাল্লা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন। তারপর ভেতরে লক্ষ্য করে বললেন, বাংলো থেকে একটু ঘুরে আসি বুঝলে, সেলাইয়ের নক্সাটা ফেলে এসেছি। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত ঠিক থেকো।
কোন জবাব এলো না। তিনি বুঝতে পারলেন, মলি এবারে সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছে।
সামনের ফাঁকা জায়গা বরাবর এগিয়ে সিঁড়ি ধরে ডান দিকের পথ ধরলেন। পাশেই চোখে পড়ল একটা হিবিসকাস ঝোপ। তীব্র দৃষ্টিতে ঝোপের ভেতরটা একবার দেখে নিলেন।
ফুলের ঝোপ পার হয়ে বাংলোর পেছনে গিয়ে দ্বিতীয় দরজা দিয়ে আবার ভেতরে ঢুকলেন। সেখান থেকে একটা ছোট ঘর পার হয়ে মূল শোবার ঘরে পৌঁছানো যায়।
ঘরে পরদা ঝোলানো। মিস মারপল চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন, তারপর পর্দার আড়ালে আত্মগোপন করলেন। মলির ঘরে কেউ ঢুকলে এখান থেকে পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যাবে।
মিস মারপল যা দেখতে চাইছিলেন, মিনিট পাঁচ-ছয় পরেই তা দেখতে পেলেন।
আধখোলা জানালা পথে জ্যাকসনের চেহারা ভেসে উঠল। জানালায় আঙুলের টোকা পড়ল। ভেতর থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেল না।
চারপাশে ধূর্ত দৃষ্টি বুলিয়ে নিল জ্যাকসন। পর মুহূর্তেই খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল।
সঙ্গে সঙ্গে মিস মারপল ঘরের লাগোয়া বাথরুমের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। দেখতে পেলেন জ্যাকসন হাত ধোওয়ার বেসিনের ওপরের তাকে চোখ বোলাচ্ছে। মিস মারপলের ওপর চোখ পড়তেই হকচকিয়ে গেল।
–ওহ,…আমি…মানে…আপনি…
–মিঃ জ্যাকসন! বললেন মিস মারপল। কিছু চাইছিলেন বুঝি!
–আমি মিসেস কেণ্ডেলের মুখে মাখার ক্রিমটা দেখতে চাইছিলাম। ব্রাটা–
জ্যাকসনের হাতে ধরাও ছিল একটা মুখে মাখার ক্রিমের কৌটো। তৎপরতার সঙ্গে সে এটাই কাজে লাগিয়েছে।
কৌটোটা নাকের কাছে এনে জ্যাকসন বলল, চমৎকার গন্ধ। এই ব্রাটাই ভালো।
–এ বিষয়ে আপনার কোন জ্ঞান আছে মনে হচ্ছে। বললেন মিস মারপল।
–কিছুকাল এসব তৈরির কারখানায় কাজ করেছিলাম। প্রসাধনী বিষয়ে অনেক কিছুই জানা হয়ে গিয়েছিল।
–এটার জন্যেই আপনি
–ঠিক এজন্যে নয়…মিসেস ওয়াল্টার্স সেদিন তার লিপস্টিক মিসেস কেণ্ডালকে দিয়েছিলেন। সেটাই ওর জন্য নিয়ে যেতে এসেছিলাম।
-বুঝেছি। সেটা পেলেন
–মিসেস কেণ্ডালের হাতবাগেই রয়ে গেছে মনে হয়। যাক মিসেস ওয়াল্টার্স অবশ্য সেভাবে বলেন নি…
জ্যাকসন তাকের বাকি প্রসাধনীগুলো তাকিয়ে দেখতে লাগল।
–আজকাল বাজারে অনেক সস্তার জিনিস বেরিয়েছে। তার কোন কোনটা খুবই বিপজ্জনক। বলল জ্যাকসন।
-হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, বললেন মিস মারপল, আমিও জানি সেটা।
–এসব কথা আপনাকে বোধহয় মেজর প্যালগ্রেভ বলেছিলেন, তাই না?
–হ্যাঁ, মানে তিনিই বলেন। তিনি এসব খবর রাখতেন।
–কিন্তু অনেক ব্যাপারই তো লোককে যা বলতেন তা সঠিক নয়। মেজর প্যালগ্রেভ এমনি অনেক অনাসৃষ্টি ঘটিয়েছেন।
এই সময় লাকি ডাইসনের অবয়ব ভেসে উঠল বেডরুমের জানালায়। মিস মারপল দৃষ্টি ফেরালেন তার দিকে।
–ওহ আপনি, বললেন লাকি, ভাবছিলাম মলির কাছে কিছুক্ষণ বসব কি না। মলি এখনো ঘুমিয়ে রয়েছে?