–মেজর কি কোন ছবির কথা বলেছিলেন?
–ঠিক মনে পড়ছে না।
এই সময় ইভিলিন হিলিংডন ওদের চেয়ারের পাশে এসে দাঁড়ালেন। সুপ্রভাত জানিয়ে আবার তীরের পথ ধরে এগিয়ে গেলেন।
.
১৯.
একসময় ক্যানন প্রেসকট বোনের সঙ্গে হোটেলে ফিরে গেলেন। ততক্ষণে গ্রেগরী ডাইসন জল থেকে উঠে এসেছেন। লাকি বালির ওপরেই শায়িত। ইভিলিন তার দিকে তাকিয়েছিল। তা লক্ষ্য করে মিস মারপল অকারণেই কেমন শঙ্কিত হয়ে উঠলেন।
একটু পরে তিনিও ধীর পায়ে নিজের বাংলোর দিকে হেঁটে চললেন।
পথে মিঃ র্যাফায়েল আর এসথার ওয়াল্টার্সের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। মিঃ র্যাফায়েল তাকে দেখে নিঃশব্দে হাত নাড়লেন।
বাংলোয় ফিরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন। নিজেকে খুবই ক্লান্ত মনে হচ্ছিল তার।
কয়েক মুহূর্তের জন্য বুঝি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। চোখের পাতা খুলতেই মনে হল কেউ যেন বাইরে থেকে জানালায় উঁকি মারবার চেষ্টা করছে। ছায়ার আভাস দেখে তার মনে হল লোকটি জ্যাকসন।
লোকটির এমন ব্যবহারের কারণ বুঝতে পারলেন না। তিনি ঘুমিয়ে রয়েছেন কিনা তাই জানতে কি?
মিস মারপল বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন। বাথরুমে ঢুকে জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেন।
পাশের বাংলোটি মিঃ র্যাফায়েলের। দেখা গেল জ্যাকসন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সচকিতভাবে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে, কারুর চোখে না পড়ে। নিশ্চয় কোন মতলব হাসিল করার সুযোগ খুঁজছে জ্যাকসন, অনুমান করলেন মিস মারপল।
সেই মুহূর্তে সকলেই সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত। কারোর নজরের বাইরে বাংলোয় কিছু করতে চাইলে এই তার সুযোগ। জ্যাকসন নিশ্চিত হওয়ার জন্যই তার জানালায় উঁকি দিয়েছিল।
রবারের চপ্পল পায়েই শিকারী বেড়ালের মত সন্তর্পণে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন মিস মারপল। মিঃ র্যাফায়েলের বাংলোটা ঘুরে কোণের দিকে চলে গেলেন। খুব সন্তর্পণে জানালার নিচে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লেন।
বাংলোর জানালাগুলো খুব নিচু। কিছু লতা গাছের আড়াল থেকে তিনি ঘরের ভেতরে তাকালেন।
দেখা গেল ঘরের মাঝখানে একটা সুটকেসের সামনে বসে আছে জ্যাকসন। সুটকেসের ঢাকনা খোলা। মিস মারপল লক্ষ্য করলেন, বেশ কিছু কাগজপত্র সুটকেস থেকে বার করে আনল জ্যাকসন। দ্রুত চোখ বুলিয়ে কাগজগুলো দেখে চলেছে।
বেশিক্ষণ সেখানে থাকতে চাইলেন না মিস মারপল। জ্যাকসন চুরি করে কাগজপত্র দেখছে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই তিনি সন্তর্পণে সরে এলেন জানলা থেকে। ফিরে এলেন নিজের বাংলোয়।
একটু পরে তিনি তীরের দিকে গিয়ে একটা খালি চেয়ারে বসে পড়লেন। অদূরেই বসেছিলেন মিঃ র্যাফায়েল। তাঁর দিকে না ফিরেই মিস মারপল বললেন, আপনি জানেন, জ্যাকসন আপনার কাগজপত্র হাতড়ে বেড়ায়?
-একবার ধরা পড়েছিল। আপনি দেখেছেন?
–হ্যাঁ, জানালা দিয়ে দেখলাম, আপনার সুটকেস খুলে কাগজপত্র দেখছে।
-হ্যাঁ, উদ্যোগী লোক, কোনভাবে সুটকেসের চাবি হাতড়েছে। তবে ওর কাজে লাগবার মত কোন কিছু ও খুঁজে পাবে না।
আশপাশে কেউ ছিল না। এসথার ওয়াল্টার্স জলে নেমে আছে। মিঃ র্যাফায়েল বললেন, আপনাকে বলছি, বয়সের কথাটা ভাববেন। খুব বেশি ঝুঁকি নেবেন না। ভুলে যাবেন না, এখানে এমন একজন আছে যে বিবেকহীন নির্মম জীব।
.
২০.
স্টীলব্যাণ্ডের বাজনা অনেকক্ষণ থেমে গেছে। চারদিক নিস্তব্ধ। ঘুমিয়ে পড়েছে গোল্ডেন পাম..
সেই রাতে টিম কেণ্ডাল ছুটে গিয়ে ইভিলিনকে তার বাংলো থেকে ডেকে নিয়ে চললো। মলি কেণ্ডাল অসুস্থ হয়ে পড়েছে–
–টিম বলল, মনে হচ্ছে কিছু খেয়েছে।
ইভিলিন গিয়ে দেখল, বিছানায় শায়িত মলির পাশে টেবিলে রয়েছে অর্ধেক ভর্তি একটা জলের গ্লাস। গ্লাসের পাশেই খালি ট্যাবলেটের শিশি।
টিম বলল, ওটা ঘুমের ওষুধের শিশি। মনে হয় সবগুলোই খেয়ে নিয়েছে।
ইভিলিন বলল, আমি রয়েছি এখানে, তুমি শিগগির ডাঃ গ্রাহামকে ডেকে নিয়ে এসো। যাবার আগে কাউকে বলে যাও কড়া এক কাপ কফি বানিয়ে পাঠিয়ে দিতে।
.
ডাঃ গ্রাহাম যাবার মধ্যে টিমকে আশ্বাস দিয়ে বললেন, আর ভয় নেই। সময় মতই আমরা উপস্থিত হতে পেরেছিলাম। তবে বিপদ ঘটাবার মত বেশি খাননি মিসেস কেণ্ডাল।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মলি চোখ মেলে তাকালো।
ইভিলিন পাশেই ছিল। জিজ্ঞেস করল, কেন একাজ করেছিলে মলি?
–ভয়ে। ক্ষীণকণ্ঠে বলল মলি।
–কিসের ভয়?
জবাবে চোখ বুজল মলি।
.
টিমের অফিসে বসে ডাঃ গ্রাহাম বললেন, আপনার স্ত্রীর ব্যাপারে কয়েকটা জরুরী কথা বলতে এলাম। শুনলাম উনি কিছুদিন ধরে নাকি দুঃস্বপ্ন দেখছেন?
–হ্যাঁ। প্রায় মাসখানেক ধরে এরকম চলেছে।
–আমার ধারণা মিসেস কেণ্ডাল কোন বিশেষ লোক সম্পর্কে মনে মনে খুবই ভীত। এব্যাপারে আপনাকে কিছু বলেছেন?
-হ্যাঁ জানিয়েছিল। কেউ নাকি ওকে অনুসরণ করে।
–মিসেস কেণ্ডালের কোন শত্রু আছে বলে জানেন আপনি?
–না, কোন শত্রুর কথা আমি জানি না।
–আপনার বিয়ের আগে মলি কারো বাগদত্তা ছিল কিনা, বলতে পারবেন? ওরকম কারোর পক্ষেই ঈর্ষা বশত তাকে ভয় দেখানো স্বাভাবিক।
–আমার জানা নেই। তবে আমার আসার আগে মলি একজনকে বিয়ের পাকা কথা। দিয়েছিল। কিন্তু বাড়ির সকলে এই বিয়ের বিরুদ্ধে ছিল।
বুঝেছি। টিম, আপনার স্ত্রীর বিষয়ে আমার পরামর্শ হল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো। এই রকম একজন ভাল বিশেষজ্ঞ আছেন কিংসটনে। তাছাড়া নিউইয়র্কে তো রয়েইছে। কোন বিশেষ কারণে আপনার স্ত্রীর মনে ভয় জন্মেছে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলেই তা কেটে যাবে।