-আমাকে কেন?
-কারণ আপনি অর্থবান এবং গুরুত্বসম্পন্ন ব্যক্তি। আমাকে এখানে কেউ জানে না। আপনার কথা লোকে গুরুত্ব দেবে।
–বেশ, আপনি এখানেই থেকে সব ব্যাপার ফয়সালা করুন। হিলিংডন, ডাইসন আর আমার লোক জ্যাকসন–এই তিন জনের মধ্যে যে কোন একজনকে খুনী হতেই হবে।
.
১৭.
–এ ব্যাপারে এখনো আমি নিশ্চিত নই। বললেন মিস মারপল।
-কেন নয়–তিনজন সন্দেহভাজন আমাদের সামনে রয়েছে। তাদের একে একে যাচাই করে দেখা চলতে পারে। তাহলে হয়তো একজন কাউকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে পারবেন। বললেন মিঃ র্যাফায়েল।
কিন্তু এডওয়ার্ড হিলিংডন এবং জ্যাকসনকে নিয়ে বিচার করে কোন সন্তোষজনক মীমাংসায় পৌঁছনো সম্ভব হল না।
ওদের আলোচনার মধ্যেই এসথার ওয়াল্টার্স সেখানে এল। মিঃ র্যাফায়েল তার দিকে তাকিয়ে কৃত্রিম স্বরে বললেন, এতক্ষণে এলে? কোথায় আটকা পড়েছিলে?
-সকলেই চলে যাবার জন্য তাড়াহুড়ো করছে–এসব নিয়েই। বলল এসথার।
চলে যেতে চাইছে কি ওই খুনের জন্য?
–তাই মনে হচ্ছে। টিম কেণ্ডাল বেচারা খুবই চিন্তায় পড়ে গেছে। ব্যবসাটা সবে জমে উঠতে শুরু করেছিল–
–খুবই স্বাভাবিক। আমরাও এতক্ষণ খুনের বিষয় নিয়েই আলোচনা করছিলাম।
মনে হল এসথার ওয়াল্টার্স চমকে উঠল। সে মিস মারপলের দিকে তাকাল।
মিঃ র্যাফায়েল বললেন, মিস মারপলকে বুঝতে আমি ভুল করেছিলাম। ইনি অন্য বয়স্ক মহিলাদের থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ইনি চোখ কান যথাযথ ব্যবহার করতে জানেন।
বাংলোর বারান্দা থেকে একটা চেয়ার টেনে এনে বসলো এসথার।
মিঃ র্যাফায়েল বললেন, আমরা মৃত মেজরের গল্পের ঝুলির বিষয়ে আলোচনা করছিলাম।
-ওহ, ওর গল্পের ভয়ে আমি এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করতাম।
–তিনি কি তোমাকে কোন খুনীর বিষয়ে কিছু বলেছিলেন? প্রশ্ন করলেন মিঃ র্যাফায়েল।
–হ্যাঁ, অনেকবার বলেছিলেন।
–গল্পটা ঠিক কি রকম আমাদের শোনাও তো।
–আমার মনে হয় খবরের কাগজের কোন খুনের ঘটনার খবর থেকেই প্রথম প্রসঙ্গটা উঠেছিল। বলেছিলেন, একজন খুনীকে মুখোমুখি দেখেছিলেন। আর বলেছিলেন আমাকে একজন খুনীর ছবি দেখাবেন।
–কোন ছবি তিনি দেখিয়েছিলেন তোমাকে?
–না, ফটো দেখাননি। তবে আমি ধরে নিয়েছিলাম তিনি যে কাহিনী আমাকে বলেছিলেন ফটোটা সেই কাহিনীতে বলা খুনীরই।
এই সময় আর্থার জ্যাকসন নিঃশব্দে সেখানে এসে দাঁড়াল।
–আপনার মালিশের সময় হয়েছে স্যার।
মিঃ রাফায়েল বললেন, চল তাহলে।
দক্ষ হাতে জ্যাকসন হুইল চেয়ার ঘুরিয়ে নিল। মিস মারপলও উঠে দাঁড়িয়ে তীরের পথ ধরে হাঁটতে লাগলেন।
.
১৮.
সমুদ্রতীর আজ প্রায় ফাঁকাই ছিল। গ্রেস জলের মধ্যে আলোড়ন তুলছিলেন। লাকি বালির ওপর শুয়ে রোদ-স্নান নিচ্ছেন। হিলিংডনরা কেউ নেই।
ক্যানন প্রেসকট আর মিস প্রেসকট দুটো চেয়ারে পাশাপাশি বসেছিলেন। মিস মারপল এগিয়ে এসে মিস প্রেসকটের চেয়ারের পাশে বসলেন।
লোকজন নাকি সব চলে যাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ওঃ খুবই দুঃখজনক অবস্থা। বললেন তিনি।
মিস প্রেসকট বললেন, কেণ্ডালরা এদের সর্বস্ব হোটেলের জন্য ঢেলেছে। যাই ঘটুক এটা তাদের চালিয়ে যেতেই হবে।
–মেয়েটি খুবই মিষ্টি। বললেন মিস মারপল।
-কিন্তু ওর মায়ের মতই স্নায়বিক হয়ে পড়েছে। ওর পরিবারের সবাই আমাদের দিকেই থাকে। বললেন প্রেসকট।
মিস প্রেসকট বললেন, জানেন, একবার একটা নিতান্ত অযোগ্য লোককে বিয়ে করবে বলে মলি উতলা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বাড়ির লোকের বাধায় তা আর সম্ভব হয়ে ওঠে নি। এর পরেই ভাগ্যক্রমে মলির দেখা হয় টিমের সঙ্গে।
–এরকম তো কতই হয়। বললেন মিস মারপল, আপনারা তো বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে আসছেন, তাই না? নিশ্চয় হিলিংডন আর ডাইসনদের ভালই জানেন।
–তা বলতে পারেন। মিস প্রেসকট জবাব দিলেন।
–মেজর প্যালগ্রেভ একটা অস্বাভাবিক কাহিনী আমাকে শুনিয়েছিলেন। কিন্তু কানে কম শুনি বলে, সেই কাহিনী ভালভাবে বুঝতে পারিনি।
-আপনি কি বলতে চাইছেন জানি। এসম্পর্কে অনেক রটনা শোনা গিয়েছিল।
–মানে যখন
-হ্যাঁ, প্রথম মিসেস ডাইসন মারা যান। আচমকা রোগের আক্রমণে মারা যাওয়াতে লোকের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল।
-তারপর? বললেন মিস মারপল।
–সেই তরুণীর নাম ছিল মিস গ্রেটোরেক্স। মিস ডাইসনের সম্পর্কীত বোন ছিল সে। তাদের মধ্যে বনিবনা ছিল না বলেই শোনা গিয়েছিল। আরও রটনা হয়েছিল, এডওয়ার্ড হিলিংডন নাকি স্ত্রীর জন্য কেমিস্টের কাছ থেকে কিছু কিনে এনেছিলেন।
-ওঃ তিনিও এর মধ্যে ছিলেন?
-দারুণ ভাবে জড়িত ছিলেন। মিস গ্রেটোরেক্স আর নাকি–দুজনকে দুজনের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়েছিলেন। পুরুষও দুজন ছিল। গ্রেগরী ডাইসন আর এডওয়ার্ড হিলিংডন।
সেই কেমিস্টের ব্যাপার জানাজানি হল কি করে?
–ওরা সে সময়ে মার্টিনিতে ছিল। ফরাসীরা ওষুধপত্রের ব্যাপারে অনেক শিথিল। কেমিস্টই হয়তো কাউকে কিছু বলে থাকবে।
–কিন্তু এর মধ্যে কর্নেল হিলিংডন কেন জড়ালেন? বলতে চাইলেন মিস মারপল।
–আমার ধারণা তাকে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল? অদ্ভুত ব্যাপার হল, স্ত্রীর মৃত্যুর একমাসের মাথায়ই গ্রেগরী ডাইসন বিয়ে করেন।
–মেজর প্যালগ্রেভ আপনাকে এরকম কিছু বলেছিলেন?
-হ্যাঁ, একদিন ওকে দেখিয়ে বলেছিলেন, দেখুন ওই মেয়ে মানুষটি একজনকে খুন করেও কেমন বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই সময় ডাইসন আর হিলিংডনরা কাছাকাছি টেবিলেই বসেছিলেন। আমার খুব ভয় হচ্ছিল তারা না কথাগুলো শুনে ফেলে।