-না।
–আমাকেও বলেনি। অথচ সকলেই এটা মেনে নিয়েছিল।
-আমার ধারণা মেজর লোককে বলে বেড়াতেন। মিঃ ডাইসনের ব্লাডপ্রেসার আছে, ওর স্ত্রী বলেছে।
কাজেই ডাইসনের ঘরের ওষুধের শিশি মেজরের ঘরে রেখে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল অতিরিক্ত ব্লাডপ্রেসারের জন্যই তার মৃত্যু হয়েছে।
-আমারও তাই ধারণা, মিস মারপল বললেন, সেই সঙ্গে রটনা করে দেওয়া হয় যে মেজর প্রায়ই লোককে তার ব্লাড প্রেসারের কথা বলে বেড়াতেন। এ ধরনের গল্প বানানো যায় খুবই সহজে। এখানে-ওখানে কিছু কথা ছড়িয়ে দিলেই কাজ হাসিল হয়।
–অত্যন্ত ধূর্ত কেউ একজন কাজটা সাফল্যের সঙ্গে করেছে, মিঃ র্যাফায়েল চিন্তিত ভাবে বললেন, আমার ধারণা ওই মেয়েটা কিছু দেখেছিল কিংবা জানত আর সে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করেছিল।
–তা, না-ও হতে পারে। কেউ হয়তো ওর মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল।
–এ পর্যন্ত সব ঠিক আছে। এরপর আপনার অভিমত কি শোনা যাক। আপনি আমার চেয়েও বেশি কিছু জানেন বলে আমার ধারণা। ব্যাপারটা আমার আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছে। আমি লক্ষ্য করেছি, মেজর প্রায়ই আপনার সঙ্গে গল্প করে কাটাতেন। অন্যরা বিশেষ আমল দিত না তাকে। মেজর আপনাকে কি বলেছিলেন?
বেশ কিছু গল্প অনেককেই শোনাতেন মেজর। আমাকেও শুনিয়েছিলেন। বলেছিলেন তিনি একজন খুনীকে চেনেন। তার কাছে ছবি আছে। সেটা আমাকে দেখাতে চেয়েছিলেন–কিন্তু পারেন নি।
-কেন?
-কারণ আকস্মিকভাবে কাউকে চোখে পড়েছিল তার। ছবিখানা পকেট থেকে বার করে এনেও আবার ঢুকিয়ে ফেলেছিলেন। পরে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছিলেন।
-প্যালগ্রেভ কাকে দেখেছিলেন?
–সঠিক বলতে পারব না। আমরা বাংলোর সামনে বসেছিলাম। আমার সামনেই মেজর বসেছিলেন। তিনি যাই দেখে থাকুন, দেখেছেন আমার বাম কাঁধের ওপর দিয়ে।
-আপনার ডানদিকের পেছনের পথ ধরে কেউ আসছিল?
–হ্যাঁ। মিঃ আর মিসেস ডাইসন আর হিলিংডন দম্পতি। ওই রেখা বরাবর আপনার বাংলোটাও চোখে পড়ে।
-ওহো, তাহলে আমার এসথার ওয়াল্টার্স আর জ্যাকসনকেও এর মধ্যে ধরা যায়। এদের দুজনের যে কোন একজনের পক্ষেই বাংলো থেকে বেরিয়ে আসা বা ঢুকে পড়া সম্ভব আপনার অজান্তেই।
-হ্যাঁ, সেটা সম্ভব ছিল। আমি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরিয়ে দেখিনি।
–তাহলে দেখা যাচ্ছে–ডাইসন আর হিলিংডনরা এবং এসথার আর জ্যাকসন–এদের কেউ একজন খুনী। আবার আমিও হতে পারি।
মিস মারপল হাসলেন। বললেন, মেজর খুনীকে একজন পুরুষ বলেই উল্লেখ করেছিলেন। ফলে ইভিলিন লাকি আর এসথার ওয়াল্টার্সকে আমরা বাদ রাখতে পারি।
ব্যাপারটা এরকম ঘটেছিল বলে মনে হয়, মেজর পকেট থেকে ছবিটা বের করে লোকটির মুখে দৃষ্টি বুলিয়ে মুখ তুলেই অবিকল একই মুখ দেখতে পেয়ে যান। অতটা না হলেও হয়তো সেই মুখের আদলই তিনি দেখতে পান।
-হ্যাঁ, এটা হওয়া সম্ভব। মিঃ র্যাফায়েল বললেন।
নিশ্চিত চমকে গিয়েছিলেন মেজর। এবং সঙ্গে সঙ্গেই ছবিটা পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে গল্প জুড়েছিলেন। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে পরে এক সময় তিনি ছবিটা ভাল করে পরীক্ষা করে দেখতেন আর লোকটাকেও দেখে মিলিয়ে সিদ্ধান্ত করার চেষ্টা করতেন দুজনে একই ব্যক্তি কিনা।
-হ্যাঁ, এটাই সম্ভব বলে আমি মনে করি। কথা শেষ করে মিঃ র্যাফায়েল স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মিস মারপলের দিকে। পরে আবার বললেন, যাই হোক, এবারে আপনি কি ভাবছেন তা জানতে ইচ্ছা করে।
–ঘটনাগুলোর পেছনে জোরালো কোন্ উদ্দেশ্য আছে বোঝা যাবে যদি খুব শিগগিরই আর একটা খুনের ঘটনা ঘটে যায়।
চমকে উঠলেন মিঃ র্যাফায়েল কথাটা শুনে। বললেন, ব্যাপারটা ভাল করে বুঝিয়ে বলুন।
-বুঝিয়ে বলার ব্যাপারে আমার খুব একটা দক্ষতা নেই মিঃ র্যাফায়েল। তবে মেজরের গল্পটা নিশ্চয় আপনার মনে আছে, একজন স্ত্রীলোক খুন হয়েছিল। কিছু সময় পরে একই রকম পরিস্থিতিতে আরও একটা খুনের ঘটনা ঘটে। অন্য নামের একজন ভদ্রলোকের স্ত্রী একই রকম অবস্থায় মারা যান। এর থেকে আমি যা বুঝতে পারছি তা হল, খুন করা খুনীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল।
আপনি নিশ্চয় স্বীকার করবেন, কোন লোক একবার কোন খারাপ কাজ করে রেহাই পেয়ে গেলে স্বভাবতই তার উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। ব্যাপারটাকে সহজ বলেই সে ভাবতে থাকে। ফলে সে আবার অপরাধ করতে উৎসাহী হয়।
তবে প্রতিবারেই সে নিজের নাম আর ঘটনাস্থল বদলে নেবে। আমি ঠিক ভাবছি কিনা বুঝতে পারছি না।
মিঃ র্যাফায়েল কোন মতামত ব্যক্ত করলেন না। তিনি স্থির দৃষ্টিতে অপেক্ষা করতে থাকেন।
–ঘটনার স্রোত যদি এরকমই হয় তাহলে খুনী এখানেও স্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বলে ধরে নেওয়া যায়। আর যদি অল্পদিনের মধ্যেই এমন কোন খুনের ঘটনার মতলব এঁটে থাকে তাহলে সে কখনোই চাইবে না মেজর প্যালগ্রেভ, লোককে খুনের কাহিনী শোনায় কিংবা ছবি দেখিয়ে বেড়ায়।
কথা শেষ করে মিঃ র্যাফায়েলের দিকে কাতর ভাবে থাকালেন মিস মারপল।
-তাহলে তো দেখছি, ধীরে ধীরে বললেন মিঃ র্যাফায়েল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিছু একটা করা দরকার।
-হ্যাঁ। তবে সে ঘটনা শেষ হয়ে গেছে। এখন ভবিষ্যতের কথাই ভাবতে হবে আমাদের। কেন না মেজর প্যালগ্রেভকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, ছবিটা নষ্ট করা হয়েছে, এবারে লোকটা তার ছক মত এগিয়ে যাবে। এখন আমাদের ঠেকাতেই হবে, মিঃ র্যাফায়েল, আর ঠেকাতে হবে আপনাকে।