–এরপর কি ঘটেছে বলুন।
মলি ফিরে এসেছিল। তার হাতে রক্ত ছিল। মেয়েটাকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকতে দেখে ও তাকে তুলবার চেষ্টা করেছিল। তাতেই ওর হাতে রক্ত লেগে গিয়েছিল। আপনারা কি কিছু ইঙ্গিত করতে চাইছেন?
ডেভেনট্রি বললেন, দয়া করে শান্ত হোন। শুনলাম আপনার স্ত্রীর শরীর ইদানীং ভাল যাচ্ছে না।
-বাজে কথা। ও ভালই আছে। মেজর প্যালগ্রেভের মৃত্যুতে স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা । বিপর্যস্ত বোধ করছিল।
মিসেস কেণ্ডাল সুস্থ হয়ে উঠলে আমরা তাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। অবশ্যই তাকে বিরক্ত করব না।
জবাবে টিম চুপ করে থাকল।
.
ইভিলিন হিলিংডন শান্ত ধীর কণ্ঠে বললেন, টিম কেণ্ডালের সঙ্গে যখন আমি কথা বলছিলাম। তখনই সিঁড়ি দিয়ে উঠে তার স্ত্রী খুনের কথা জানায়।
–টিম কেণ্ডালের সঙ্গে আপনার কি বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছিল?
–অদ্ভুত প্রশ্ন। ঠিক মনে পড়ছে না। সম্ভবত ওদের ব্যবসা সংক্রান্ত।
এর পর আর দু-একটির বেশি প্রশ্ন করার দরকার হল না। ইনপেক্টর ওয়েস্টন বললেন, ধন্যবাদ মিসেস হিলিংডন।
.
–আপনার কাছ থেকে কেবল বিষয়টা পরিষ্কার করে নিতে চাইছি মিসেস কেণ্ডাল। ডাঃ গ্রাহাম বলেছেন, আপনি কথা বলার মত সুস্থ হয়েছেন। আচ্ছা, মৃত মেয়েটিকে আপনি কিভাবে খুঁজে পেয়েছিলেন? শুনেছি ডিনারের পর আপনি একটু ঘুরতে বেরিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, প্রায়ই যাই।
–আপনি কোনদিকে হাঁটতে গিয়েছিলেন?
–তীরের দিকের রাস্তায়।
–তারপরে?
–হিবিসকাস ঝোপের মধ্যে কি যেন চোখে পড়ল হঠাৎ, আমি আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়ে টানতে গেলাম।…দেখতে পেলাম ভিক্টোরিয়া…রক্তে আমার হাত ভরে গেল।
–খুবই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। বেড়াতে যাওয়ার সময় হাতে কেন ছুরি নিয়ে গিয়েছিলেন?
–ছুরি? ছুরি নিতে যাব কেন?
–আপনাদের রান্নাঘরের এক অধস্তন কর্মচারী বলেছে, আপনি যখন রান্নাঘর দিয়ে বাগানে গিয়েছিলেন, আপনার হাতে একটা ছুরি ছিল।
-কিন্তু আমি তো রান্নাঘর হয়ে যাইনি। আপনি ডিনারের আগের কথা বলতে চাইছেন—
আপনি টেবিলে ছুরিকাঁটাচামচ গুছিয়ে রাখছিলেন?
মাঝে মাঝে করতে হয়। পরিচারকরা অনেক সময়েই কাঁটা অথবা ছুরি ঠিকঠিক রাখতে ভুল করে।
-ওই অবস্থাতেই সম্ভবত আপনি একটা ছুরি হাতে রান্নাঘর পার হয়ে গেছেন।
-মনে হয় তা করিনি।
–ভিক্টোরিয়া মেয়েটিকে কে মারতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
–আমার কোন ধারনাই নেই।
–ধন্যবাদ, আপাততঃ এটুকুই।
মলি বিদায় নিলে ডেভেনট্টি বলে উঠলেন, টেবিল ছুরিকে খুনের অস্ত্র হিসেবে ভেবে নেয়াটা কষ্টকল্পনা ছাড়া কিছু নয়।
–কিন্তু মিঃ ডেভেনট্টি, ছুরিটা মাংসকাটার ছুরি ছিল। রাতে মেনুতে মাংস ছিল। তাই সব ছুরিই শানানো ছিল।
-না, না, এই মাত্র যে মেয়েটির সঙ্গে কথা বললাম, তাকে একজন হত্যাকারিণী ভাবা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ওয়েস্টন?
–একথা বিশ্বাস করবার মত অবস্থা এখনো হয়নি। এমনতো হতে পারে, ডিনারের আগে বাগানে যাওয়ার সময় একখানা ছুরি তুলে নিয়েছিলেন। অন্যমনস্ক ভাবেই হয়তো ব্যাপারটা করেছিলেন। মিসেস কোল কোথাও ছুরিটা ফেলে রেখে দিতে পারেন। অন্য কেউ সেটা খুঁজে পেয়ে…তবে এটা ঠিক, আমি নিজেও ওকে খুনী বলে ভাবতে পারছি না।
ডেভেনট্রি চিন্তিত ভাবে বললেন, তবে আমার ধারণা উনি যা জানেন তার সব বলেননি।
–আমি ভাবছি অন্য কথা। ডিনারের সময় স্বামী সেখানে থাকলেও স্ত্রীকে কেউ সেখানে দেখেনি।
–কারও সঙ্গে তিনি দেখা করতে যান তুমি বলতে চাইছ?
–সম্ভবত ভিক্টোরিয়া জনসনের সঙ্গে। অথবা ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল এমন কাউকে দেখে থাকবেন।
নিশ্চয় গ্রেগরী ডাইসনের কথা ভাবছ?
.
১৬.
কিছু একটা করতেই হবে এবং নষ্ট করার মত সময় হাতে নেই–এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। মিস মারপল।
ইতিমধ্যে অনেক কথাই তিনি জানতে পেরেছেন। তবে সেটুকুই যথেষ্ট নয়।
মিঃ র্যাফায়েল তার নিজের বাংলোর সামনে বসেছিলেন। মিস মারপলকে তিনি খবর পাঠালেন।
তার নিজের বাংলো আর মিঃ র্যাফায়েলের বাংলোর দুরত্ব কয়েক কদম মাত্র। মিস মারপল ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়লেন।
–আপনি আমাকে ডাকছিলেন?
নিশ্চয়ই ডাকছিলাম; বললেন মিঃ র্যাফায়েল, আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। দ্বীপে যা সব অদ্ভুত ব্যাপার চলছে। নানান ফিসফাস কানে আসছে। এসবের একেবারে বাইরে রয়েছেন কেবল আপনি আর ওই পাদ্রী-মিঃ প্রেসকট আর তার বোন।
–অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এরকম ফিসফাস অস্বাভাবিক নয়। বললেন মিস মারপল।
দ্বীপের মেয়েটাকে ছুরিবিদ্ধ অবস্থায় ঝোপের কাছে পাওয়া গেল, বললেন মিঃ র্যাফায়েল, সম্ভবত ঈর্ষাঘটিত কোন ব্যাপার-ওর সঙ্গী লোকটার হয়তো কোন নতুন মেয়ে জুটে ছিল। এই এলাকার যৌন জীবন এই ধরনেরই।
–আমার অবশ্য তা মনে হয় না।
কর্তৃপক্ষও তা মানেননি। মেজর প্যালগ্রেভকে মনে হয় খুন করা হয়, আপনি কি মনে করেন?
-আমার আশঙ্কা সেটাই ঠিক কথা।
-হ্যাঁ, সম্পূর্ণ ঠিক। ক্যাভেনট্রির কাছে সবই শুনলাম। আপনি ডাঃ গ্রাহামকে কিছু বলেছিলেন। সে ডেভেনট্রিকে তা জানায়। তখন যোগাযোগ করা হয় গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে। তারা বুঝতে পারে ব্যাপারটা গোলমেলে, তাই মেজরের মৃতদেহ কবর থেকে তুলে পরীক্ষা করে।
–ওরা কি জানতে পেরেছে?
–ওরা জেনেছে, প্যালগ্রেভকে বেশিমাত্রায় এমন কিছু খাওয়ানো হয়েছে যার সঠিক পরিচয় ডাক্তাররাই জানে। যতদূর সম্ভব জিনিসটা ডাই-ফ্লোর, হেক্সাগোনাল বা ইথাইল কারবেনজোল জাতীয় কিছু। এসব বেশিমাত্রায় খাওয়াতে পারলে মৃত্যু নিশ্চিত। উপসর্গ দেখে বেশিরকমের ব্লাড প্রেসার বলেই মনে হবে। এক্ষেত্রে তাই সবই স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল, তাই কেউ প্রশ্ন তোলেনি। আচ্ছা মেজরের ব্লাড প্রেসার ছিল আপনাকে কখনো বলেছিল?