-যতদূর মনে হয় এখানে কম লোকই তা জানে।
–হ্যাঁ। নিজের অসুস্থতা নিয়ে অনেকের মত বলে বেড়ানো আমার অভ্যাস নয়।
–কতগুলো পিল আপনি খান?
–সারাদিনে দু থেকে তিনবার। সবসময়ই কয়েক শিশি সঙ্গে রাখতে হয়।
–সেগুলো কোথায় রাখেন?
–সুটকেসে তালা দেওয়া থাকে। কেবল একটা বাইরে থাকে।
–শুনেছি, সেই বোতলটা কিছুদিন থেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না?
–ঠিকই শুনেছেন। ভিক্টোরিয়াকে খুঁজে দেখতে বলেছিলাম।
–শিশিটা সর্বশেষ কোথায় ছিল?
–আমার বাথরুমের তাকে।
–তারপর কি হল?
–ভিক্টোরিয়া শিশিটা এনে দেয়। বলে মেজর প্যালগ্রেভের ঘরে খুঁজে পেয়েছিল। জানতে চেয়েছিলাম, ওটা ওখানে গেল কি করে?
-উত্তরে ও কি বলেছিল?
-বলেছিল ও জানে না। তবে ওর হাবভাব দেখে সন্দেহ হয়েছিল, সবকথা আমাকে জানায়নি। সামান্য ব্যাপারটা নিয়ে আর মাথা ঘামাইনি। ভেবেছিলাম, ভুলবশত হয়তো কোথাও ফেলে এসেছিলাম। মেজর দেখতে পেয়ে তুলে এনেছিলেন, আমাকে পরে দেবেন বলে।
–এ ব্যাপারে আর কি জানেন আপনি?
–এটুকুই জানি। মেয়েটি ছুরির ঘায়ে মারা গেছে শুনেছি। অবশ্য রাত কটায় মারা গেছে জানি না। আর শুনেছি মিসেস কোল ওকে দেখতে পায়। বেচারি মলি, খুবই ধাক্কা খেয়েছিল অবশ্যই।
-আচ্ছা মিসেস কেণ্ডালকে শেষ কখন দেখেন?
–পোশাক বদলাতে যাবার আগে। টেবিলে ছুরি-চামচ ইত্যাদি সব গুছিয়ে রাখছিল। ঠাট্টা করার মেজাজেই ছিল ও। খুবই হাসিখুশি ভাল মেয়ে ও।
–ঠিক আছে, ধন্যবাদ মিঃ ডাইসন। ভিক্টোরিয়া জনসন পিলের শিশিটা দেবার সময় আপনাকে আর কিছু বলেনি বলছেন?
-না। কেবল জানতে চেয়েছিল, শিশিটা আমার কিনা।
এরপর মিঃ ডাইসন বিদায় নিলেন।
–খুবই বিবেচক মানুষ। নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে খুবই সচেতন। বললেন ওয়েস্টন, ওর সুযোগ কেমন মনে করেন?
ডেভেনটি কি বলতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় ঘরের বাইরে হৈহট্টগোল শোনা গেল। পরক্ষণেই উর্দিপরা একজন পুলিস কর্মচারী ঘরে ঢুকে জানাল, এখানকার একজন রাঁধুনী আপনাদের সঙ্গে দেখা করবে বলে জেদ ধরেছে। জরুরী কিছু নাকি জানাতে চায়।
ওয়েস্টনের ইঙ্গিতে লোকটিকে ঘরে নিয়ে আসা হল। মাথায় রাঁধুনীর টুপি, গাঢ় রঙের লোকটিকে দেখে একজন কিউবান বলেই মনে হয়। লোকটি হড়বড় করে বলতে লাগল, স্যার, উনি রান্নাঘর দিয়ে গিয়ে বাগানে বেরিয়ে গেলেন। আমি স্পষ্ট দেখেছি স্যার, একটা ছুরি ছিল…ওর হাতে একটা ছুরি ধরা ছিল।
-শান্ত হও, ডেভেনট্রি বললেন, তুমি কার কথা বলছ?
–আমাদের মালিকের স্ত্রী স্যার…মিসেস কেণ্ডাল, হাতে একটা ছুরি ছিল। রান্নাঘর দিয়ে অন্ধকার বাগানের দিকে চলে গেলেন। ঠিক রাতের খাওয়ার আগে–আর ফিরে আসেননি–
.
১৫.
–এই হোটেলের পেছনে আমাদের সর্বস্ব ঢেলে দিয়েছিলাম। আমার আর মলির অনেক স্বপ্ন ছিল। দেখছি সবই ডুবতে বসেছে। সবাই চলে যেতে চাইছে। জানি না এর পরে কি হবে। সব তাড়াতাড়ি মিটে গেলে বাঁচা যেত। বলল টিম।
বুঝতে পারছি মিঃ কেণ্ডাল, বললেন, ইনপেক্টর ওয়েস্টন, আপনাদের ওপর খুবই চাপ পড়ছে।
–বেচারি ভিক্টোরিয়া। খুবই ভাল মেয়ে ছিল। মনে হয় প্রেমঘটিত কিছু ছিল, হয়তো ওর স্বামী–আপনাদের যেমন দরকার আমাকে প্রশ্ন করুন।
–হ্যাঁ, তাই করছি। গতরাতে দশটা তিরিশ মিনিটের পর থেকে যে কোন সময় ভিক্টোরিয়া জনসন নিহত হয়। সেই সময়ে গান বাজনা নাচ নিয়ে সকলেই মেতে উঠেছে। ইচ্ছেমত ঘোরাফেরা করছে।
-হ্যাঁ, আমারও তাই ধারণা। অতিথিদের মধ্যেই কেউ ওকে খুন করেছে বলে মনে হয়? টিম বলল।
–সবই তদন্ত সাপেক্ষ মিঃ কেণ্ডাল। আপাতত একজন রাঁধুনী যে মন্তব্য করেছে সেসম্পর্কে আপনার কি মত?
-ওঃ এনরিকো? সে কিউবার লোক। সে কি বলেছে?
–আপনার স্ত্রী লোকজন ডাইনিং রুমে পৌঁছনোর আগে, রান্নাঘরের মধ্য দিয়ে বাগানের দিকে চলে গিয়েছিলেন। তার হাতে একটা ছুরি ছিল।
মলির হাতে ছুরি? হতবাক টিম। লোকজনরা জিনিসপত্র অগোছালো করে রাখে, তাই মলি সবসময়ই গোছগাছ করে রাখতো। কঁটাচামচ ইত্যাদি সব। বাড়তি একটা চামচ বা কাটা হয়তো ওর হাতে ছিল।
–ডাইনিং রুমে আপনার সঙ্গে তার কথা হয়েছিল?
–হ্যাঁ, হয়েছিল। কার সঙ্গে কথা বলছিল জানতে চেয়েছিলাম।
–কার সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি?
–গ্রেগরী ডাইসনের সঙ্গে।
–হ্যাঁ, উনিও সেকথা বলেছেন।
–গ্রেগরীর একটু গায়েপড়া স্বভাব আছে, বিশেষ করে মেয়েদের। মলি তাই বলেছিল। আমি বলেছিলাম লোকটাকে একটু কড়কে দেওয়া দরকার।
–ওদের মধ্যে কোন কথা কাটাকাটি হয়েছিল?
–ঠিক মনে পড়ছে না। সেরকম কিছু হয়েছিল বলে মনে হয় না।
–কিন্তু আপনার রাঁধুনী বলেছে আপনার স্ত্রী রান্নাঘর দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল–তার হাতে একটা ছুরি ছিল।
-ওসব কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। টিম অস্বস্তির সঙ্গে তাকালো, ডাইনিং রুমে খাবার সময় মলির হাতে ছুরি থাকাটা খুবই স্বাভাবিক।
–আপনার স্ত্রী ডাইনিং রুমে খাওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন?
–আমি…ওঃ হ্যাঁ, আমরা দুজনেই অতিথিদের আপ্যায়ন করি।
উনি উপকূলের পথ হয়ে আসছিলেন কেন বলতে পারেন?
–ডিনারের পরিশ্রমের পর একটু ঘুরে আসতে পছন্দ করত।
–তিনি যখন ফিরে আসেন, তখন বোধহয় আপনি মিসেস হিলিংডনের সঙ্গে কথা বলছিলেন?
-হ্যাঁ। মলিকে নিয়ে হোটেল চালানো, ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলছিলাম আমরা।