ডাইনিং হলের পাশে খোলা চত্বরের প্রান্তে দুটো চেয়ারে পাশাপাশি বসে কথা বলছিল টিম আর ইভিলিন।
মলির শরীর সম্পর্কে সবকথা জানিয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইভিলিন। শেষে বলল, আমার মনে হয় এখনই মলিকে ডাক্তার দেখানো দরকার।
–সেটা, জানি, বলল টিম, কিন্তু ও কিছুতেই সেটা করতে দেবে না। মনে হয় ডাক্তারের নামে অকারণ একটা ভয় আছে ওর।
-তোমাদের পারিবারিক কাউকে এসময় কাছে এনে রাখার সুবিধা নেই?
সেরকম সুযোগ নেই। কারোর সঙ্গেই, বিশেষ করে ওর মার সঙ্গে মলির বনিবনা নেই। তবে এই অবস্থাটাই ভাল বলে মনে হয় আমার।
–আমার মনে হয় এক ধরনের বাতিকে ভুগছে মলি।
–তা ঠিক নয়। স্নায়বিক কোন ব্যাপার বলেই আমার মনে হয়।
–সেক্ষেত্রে তো একজন মনস্তাত্ত্বিকের পরামর্শ নিতে পার।
–লাভ নেই। আমি ওসব আলোচনা করতে চাই না, ওর মাও মনস্তাত্ত্বিকের পেছনে কম ঘোরেনি।
–বলতে চাইছ, ওদের পরিবারে এধরনের ব্যাপার ছিল? মানে মানসিক রোগ।
-হ্যাঁ, এসব রোগ কিছুটা বংশানুক্রমিক। তবে তুলনায় মলি সুস্থই আমি বলব। ওই মেজর প্যালগ্রেভের মৃত্যুর পর থেকেই যত গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। একটা মানবিক ধাক্কা পেয়েছে।
টিম, তুমি কি আমায় অনুমতি দেবে–যদি আমি মলিকে নিউইয়র্ক বা মিয়ামিতে নিয়ে গিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাতে চাই?
–তোমার প্রস্তাবের জন্য ধন্যবাদ ইভিলিন। মলি ক্রমেই ভাল হয়ে উঠছে–ও ঠিক আছে।
ইতিমধ্যে বেশির ভাগ অতিথিই নিজেদের বাংলোয় ফিরে গেছে। ইভিলিনও বিদায় নিয়ে পা বাড়াতে গিয়ে থমকে দাঁড়াল।
দেখা গেল উপকূলের দিকে থেকে সিঁড়ির কাছে হেঁটে আসছে মলি। শরীর কাঁপছিল থরথর করে। এলোমেলো হাঁটার ভঙ্গি।
মলিকে দেখে চিৎকার করে উঠে টিম ও ইভিলিন ছুটে গেল তার দিকে।
মলি ততক্ষণে সিঁড়ির মাথায় পৌঁছে দাঁড়িয়ে পড়েছে। হাতদুটো পেছনে রেখে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠল-আমি ওকে দেখেছি…ওই সামনের ঝোপটাতে…আমার হাত দেখ–
ইভিলিন মলির হাত টেনে ধরেই বোবা হয়ে গেল। দুহাত ভর্তি রক্তের দাগ বুঝতে কষ্ট হল না তার।
–কি হয়েছে মলি? আর্তনাদের স্বরে বলে উঠল টিম।
কেমন টলে উঠল মলি। বলল, ওই ওখানে…ঝোপের মধ্যে।
টিম ইভিলিনের দিকে তাকালো। মলিকে তার দিকে সামান্য ঠেলে দিয়ে দ্রুত সিঁড়ির দিকে ছুটে গেল। ইভিলিন দুহাতে মলিকে জড়িয়ে ধরে বলল, শান্ত হও মলি, এখানে একটু বোসো।
মলি অবসন্নের মত চেয়ারে গা এলিয়ে বসে পড়ল। হাত দুটো চোখের সামনে তুলে চিৎকার করে উঠল–ওঃ, আমার কি হয়েছে?
–সব ঠিক হয়ে যাবে মলি। ভেবো না।
টিম ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে ওদের কাছে এসে দাঁড়াল। তার মুখ থমথমে।
ইভিলিন সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। টিম বলল, আমাদের একজন কাজের মেয়ে–ভিক্টোরিয়া, কেউ ওকে ছুরি মেরে খুন করেছে।
.
১৪.
মলি শুয়ে আছে বিছানায়। ওয়েস্ট ইণ্ডিজ পুলিশের দুই ডাক্তার ডাঃ রবার্টসন ও ডাঃ গ্রাহাম বিছানার একপাশে। অন্যপাশে টিম দাঁড়িয়ে আছে। ডাঃ রবার্টসন মলির নাড়ী দেখছিলেন।
কাছেই দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ ইনসপেক্টর ওয়েস্টন।
ডাঃ রবার্টসন পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললেন, বেশি সময় নেবেন না। মোটামুটি বক্তব্য শুনতে পারেন।
ইনসপেক্টর দুপা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, মিসেস কেণ্ডাল, মেয়েটিকে আপনি কিভাবে দেখতে পেয়েছিলেন?
-ঝোপের মধ্যে…একটা সাদা কিছু চোখে পড়ল…আমি তুলতে চেষ্টা করলাম..দুহাত রক্তে ভরে গেল।
–উপকূলের রাস্তায় আপনি কি করছিলেন?
–সমুদ্রের বাতাসে ভাল লাগছিল
–মেয়েটিকে আপনি জানেন?
–হ্যাঁ। ভিক্টোরিয়া বড় ভাল মেয়ে। খুব হাসতো-ওঃ, আর ও হাসবে না–
ডাঃ রবার্টসন বললেন, একটা ইনজেকশন দিতে হবে। চব্বিশঘণ্টার মধ্যে ওকে দিয়ে আর কিছু বলানো ঠিক হবে না।
-ধন্যবাদ, আমি পরে খবর নেব। বলে ইনপেক্টর বিদায় নিলেন।
.
টেবিলের সামনে বসে থাকা দুজনের দিকে তাকিয়ে বিশালদেহী সুদর্শন নিগ্রোটি বলে উঠল, শপথ করে বলছি, আমি আর কিছু জানি না। সবই বলেছি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডেভেনট্রি মুখোমুখি চেয়ারে বসা গোয়েন্দা দপ্তরের ইনপেক্টর ওয়েস্টনের দিকে তাকালেন। ওয়েস্টনের ইঙ্গিতে নিগ্রোটি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ওয়েস্টন বললেন, লোকটি যা জানে সবই বলেছে। মনে হয় ওরা দুজনই নির্দোষ।
–হ্যাঁ, ওদের দুজনের সম্পর্ক ভালই ছিল, বললেন ডেভেনট্টি, ওদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়নি। দ্বীপে এরকমই হয়ে থাকে। ওদের দুটো বাচ্চা রয়েছে।
ভিক্টোরিয়া এর মধ্যে ছিল বলে মনে হয় তোমার? ওয়েস্টন জানতে চাইলেন।
খুব সম্ভব না। তবে আমার সন্দেহ, খুনের ঘটনার কিছু মেয়েটা দেখে থাকবে। পিলের শিশি সম্পর্কে। যতদূর জেনেছি শিশিটা মিঃ ডাইসনের। তার কথাটা একবার শোনা দরকার মনে হয়।
একটু পরেই গ্রেগরি হাসিমুখে ঘরে ঢুকলেন।
–আপনাদের সাহায্যের জন্য কি করতে পারি বলুন।
–ভিক্টোরিয়াকে আপনি চিনতেন? ওয়েস্টন জিজ্ঞেস করলেন।
–বিলক্ষণ। তার মৃত্যুটা খুবই দুঃখজনক। আমরা দুজনেই ওকে পছন্দ করতাম। মনে হয় পুরুষ সম্পর্কিত কোন ঝগড়াঝাটি ছিল। গতরাতেই ওর সঙ্গে ঠাট্টা তামাশা করেছি।
–মিঃ ডাইসন, আপনি একটা ওষুধ, সেরেনাইট নাম–
-হ্যাঁ, ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী আমি ওধুষটা খেতাম। বেশি রকমের ব্লাডপ্রেসার আছে আমার।