–কি ব্যাপার?
–অনেক সময়েই যেন জ্ঞান থাকে না আমার। সেই সময় কিছুই মনে করতে পারি না। মাঝে মাঝে যেন অচেনা কারোর সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু পরে তা আর কিছুতেই মনে করতে পারি না।
–প্রিয় মলি, অবস্থা যা বলছ, তোমার তো ডাক্তার দেখানো দরকার।
-না, না, ডাক্তার দেখাবো না। সব ডাক্তারই এক কথা বলবে-কদিন পরে ঠিক হয়ে যাবে, অসহ্য।
-আচ্ছা, তোমার বাড়ির লোকজন, মানে মা, বোন বা আর কেউ এমন আছেন, এখানে তোমার কাছে আসতে পারেন?
-মায়ের সঙ্গে আমার বনে না। বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে। বললে তারা হয়তো আসবে, কিন্তু আমি ওদের চাই না। কেবল টিম আমার কাছে থাকলেই হয়।
–টিমকে সব বলেছ?
–ঠিক বলিনি। কিন্তু ও বুঝতে পারে। আমাকে লক্ষ্য করে।
–ইভিলিন একমুহূর্ত চিন্তা করে। পরে বলে, আমার মনে হয়, তোমার সবই কল্পনা।
–কল্পনা-হ্যাঁ, তোমার কথাই হয়তো ঠিক। উরেব্বাস, বড্ড দেরি হয়ে গেল। ডাইনিং রুমে এখনই আমার যাওয়া দরকার।
ক্রুদ্ধদৃষ্টিতে পলকের জন্য ইভিলিনকে বিদ্ধ করে মলি দ্রুত হোটেলের দিকে চলে গেল।
.
১২.
ভিক্টোরিয়ার সেই ছোট্ট ডেরা। ভেতরে ওরা দুজন।
–একটা কিছু করব আমি, বুঝলে? বলল ভিক্টোরিয়া।
ব্যাপারটা বলো আমাকে।
–অনেক, অনেক টাকার ব্যাপার’
–দেখ মেয়ে টাকার লোভে কোন ঝামেলায় যেন জড়িয়ে পড়ো না।
কলস্বরে হেসে উঠল ভিক্টোরিয়া।
-তোমার কিছু ভাবনা নেই। তুমি শুধু দেখে যাও । প্রচুর টাকা বুঝেছ। এমন কিছু দেখেছি আমি, বাকিটা আন্দাজ করতে পারছি। মনে হচ্ছে ঠিকই ধরেছি।
-ইভিলিন, আর নয়, চল আমরা ইংলণ্ডে ফিরে যাই।
চমকে স্বামীর দিকে তাকাল ইভিলিন। বলল, আমরা এসেছি এখনো তিন সপ্তাহ পুরো হয়নি।
ইভিলিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে স্বামীকে বুঝবার চেষ্টা করতে লাগল।
-সত্যিই তুমি বাড়ি ফিরে যেতে চাও?
–হ্যাঁ।
–তোমার লাকিকে ছেড়ে?
–তুমি নিশ্চয়ই সব জানেনা। কিন্তু আমাকে কিছু বলনি কেন?
–কার জন্য বলব। বছর কয়েক আগেই তো আমাদের সব মিটে গেছে। সব কিছু ভেঙ্গে দিতে চাইনি বলে আমরা দুজন এখনো অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না, হঠাৎ ইংলণ্ড ফিরবার জন্য উতলা হয়ে উঠলে কেন?
–ব্যাপার কিছু নয়। আমি এ জায়গা ছেড়ে চলে যেতে চাই।
–অর্থাৎ আমাকে বোঝাতে চাইছ তুমি প্রেমের টান কাটিয়ে উঠতে পেরেছ? তার দিক থেকে ব্যাপারটা মিটেছে তো? গ্রেগ জানে তোমাদের এসব?
-তা জানি না। সে বরাবরই বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করে থাকে।
–গ্রেগ, তোমার অস্থিরতার ব্যাপার আমাকে খুলে বলো। এক মুহূর্ত এডওয়ার্ড কি ভাবল। তারপর বলল, লাকির কাছ থেকে এখনই যদি সরে না যাই তাহলে ওকে হয়তো খুন করে ফেলতে পারি।
–লাকিকে খুন করবে? কেন?
–ও একটা জঘন্য কাজ করতে আমাকে বাধ্য করেছিল–একটা খুন করতে ওকে আমি সাহায্য করেছিলাম।
–গ্রেগ, তুমি এসব কি বলছ?
–বিশ্বাস কর ইভিলিন, আমি কি করছি তখন জানতাম না। ওর কথায় কেমিস্টের দোকান থেকে একটা কিছু কিনে দিয়েছিলাম আমি। সেটা ও কি কাজে লাগাবে আমি জানতাম না। পরে ডাক্তারের একটা ব্যবস্থাপত্র আমাকে দিয়ে কপি করিয়ে নেয়।
কবে হয়েছিল এসব?
–চার বছর আগে। আমরা মার্টিনিতে ছিলাম। গ্লেগের প্রথমা স্ত্রী
–মানে? তুমি বলছ লাকি তাকে বিষ খাইয়েছিল?
–হ্যাঁ। আর আমি ওকে সাহায্য করেছিলাম। পরে বুঝতে পেরে
ইভিলিন বাধা দিয়ে বলল, কাজ শেষ হলে নিশ্চয় লাকি তোমাকে বলে তুমিই ব্যবস্থাপত্র কপি করেছ, ওষুধ এনে দিয়েছ। তুমিও তার সঙ্গে ছিলে তাই তো?
-হ্যাঁ। ও আমাকে বলেছিল, সে নাকি লাকিকে অনুরোধ করেছিল তাকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে। সেই অনুকম্পার বশেই কাজটা করেছে।
–অনুকম্পার বশে খুন! আর তুমিও তাই বিশ্বাস করেছিলে?
–অত তলিয়ে ভাবিনি। আমি তখন ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি।
–লাকি যখন গ্রেগকে বিয়ে করল, তখনো তোমার ভুল ভাঙ্গেনি? গ্রেগ জানতো না কিছু?
–কিছুই জানত না।
–অবিশ্বাস্য। মোটেই বিশ্বাস করতে পারছি না।
–ইভিলিন, এডওয়ার্ড হিলিংডন সহসা আর্তনাদ করে উঠল, আমি এর থেকে মুক্তি চাই। ওই নচ্ছার মেয়েটা আমি যা করেছি তার জন্য এখনো আমাকে ব্যঙ্গ করে। ও জানে ওকে আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করি। কিন্তু এমন ভাব করছে যেন আমি তার কাছে বাঁধা পড়ে আছি।
ইভিলিন চিন্তিতভাবে ঘরে পায়চারি শুরু করল। পরে এডওয়ার্ডের সামনে এসে বলল, তোমার আসল গোলমালটা আমি ধরতে পারছি এডওয়ার্ড। তুমি অতি আবেগপ্রবণ আর সরল মানুষ। সেই সুযোগ নিয়েই শয়তানী মেয়েটা তোমাকে তার ইচ্ছামত কাজে লাগিয়েছে। ব্যাভিচারের পাপবোধ তোমার মধ্যে ছিল।
তুমি লাকির সঙ্গে ব্যাভিচারে লিপ্ত ছিলে। সেকারণেই খুনের মতলবে সে তোমাকে এমনভাবে কাজে লাগিয়েছে যাতে এ ব্যাপারে জড়িত বলে তুমি আরও অপরাধবোধে আচ্ছন্ন থাক। কিন্তু এডওয়ার্ড, যা বললে, সবই সত্যি না তোমার বানানো?
–সত্য না হলে এভাবে তোমাকে বলতে পারি ইভিলিন। আমি আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। চলো ইভিলিন আমরা ইংলণ্ডে ফিরে যাই।
-হ্যাঁ, তাই যাবো। তবে এখনই নয়।
–কেন?
বাকিটা দেখতে হবে। আমরা যেমন চলছি তেমনই চলব। আমাদের উদ্দেশ্য কোনভাবেই যেন লাকি জানতে না পারে। বুঝতে পেরেছ এডওয়ার্ড?
.
১৩.
সন্ধ্যা উতরে গেছে। রাত নেমে আসছে শিকারী বিড়ালের মত। সমাপ্তির সুর বাজছে হোটেলের স্টিল ব্যাণ্ডে। একে একে অতিথিরা ডাইনিং হল ছেড়ে শুতে চলে যাচ্ছে।