দৌড়ে গিয়ে দেখি উপুড় হয়ে এলিয়ট। জামা ভিজে গেছে রক্তে, রক্ত মাটিতেও পড়েছে।
ডাক্তার সাইমণ্ডল নাড়ী ধরে দেখে বলল–মরেনি, নাড়ীর গতি ভালোই।
আমি নিচু হয়ে দেখি নিঃশ্বাস পড়ছে ধীরে। একটি সরু ব্রোঞ্জের অস্ত্র কাঁধে বিধে রয়েছে। অস্ট্রটায় হাত দিতে গেলে ডাঃ বলল–অস্ত্রটায় হাত দেবেন না। খুললেই রক্ত পড়তে শুরু করবে। আঘাত লেগেছে কাঁধে, হৃদপিণ্ডে নয়। সব ঘটনা ওর মুখেই শুনব।
ধরাধরি করে আনার পর সাইমণ্ডলের চিকিৎসার গুণে ব্রাণ্ডির প্রভাবে এলিয়ট সুস্থ হয়ে উঠল। আহত হওয়ার ব্যাপারে আলোকপাত করতে পারল না। ভাসা ভাসা বিবরণ। অনেক খুঁজেও কোনো অস্ত্র পাইনি। শান্ত হয়ে মন্দিরের কাছে যেতেই মনে হল গাছের আড়াল থেকে কেউ যেন লক্ষ করছে। হঠাৎ কনকনে হাওয়া বইল, আমার মন হল মন্দির থেকে হাওয়াটা আসছে। ভেতরে উঁকি মারতেই কপালে প্রচণ্ড আঘাতে ছিটকে পড়ে টের পেলাম কাঁধে প্রচণ্ড যন্ত্রণা।
যে ছুরিটি এলিয়টের কাঁধে বেঁধা ছিল সেটি ব্রোঞ্জের তৈরি প্রাচীন অস্ত্র। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া যায়। হেভেন বহু টাকা দিয়ে অস্ত্রটি কেনেন, কিন্তু বাড়িতে না মন্দিরে রেখেছিলেন সঠিক বলতে পারলেন না।
পুলিশের ধারণা হয়েছিল যে, ডায়নাই রিচার্ডকে আঘাত করে। কিন্তু আমাদের দেখে তারা বুঝল এত লক্ষণীয় প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের বিরুদ্ধে ডায়নাকে অভিযুক্ত করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত ঘটনাটি রহস্যজনকই রয়ে গেল।
ডাঃ পেনডার অল্পক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলেন। জয়েস লেমপ্রিয়ের বলে উঠল-চমৎকার কিন্তু বীভৎস ভৌতিক কাহিনী-আমি হত্যাকারীকে খুঁজে পেলাম না।–আপনি জানেন?
বৃদ্ধ পেনডার মাথা নাড়লেন। কার্যকারণ সম্পর্কে তখন একটা অদ্ভুত ধারণা তার হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাতই রয়ে গেছে।
প্রেতচর্চার বৈঠকে উপস্থিত থেকে এই ঘটনাকে জন-সম্মোহন জাতীয় কিছুকে হত্যার কারণ মনে হয়েছে। মেয়েটি অ্যাসটার্টের যাজিকায় রূপান্তরিত হয়ে রিচার্ডকে ছুরি বিদ্ধ করে, পরে ছুরিটি ফেলে দেয় এটুকু বলে জয়েস থামল।
রেমণ্ড মন্তব্য করে, চাঁদের আলোয় সব দেখা না গেলেও মনে হয় বর্শা জাতীয় অস্ত্র দূর থেকে ছুঁড়ে মারাত্মক আঘাত হানা যায়। উপস্থিত সবাই ঘটনাকে সম্মোহন বলে ধরে নিয়েছিল।
হেনরি বলেন, কোনো ওস্তাদ লোক গাছের আড়াল থেকে অস্ত্রটা ছুঁড়েছিল। এলিয়টের মনে হয়েছিল আড়ালে কেউ নজর রাখছে আর ডায়নার হাতে ছুরি ছিল কিনা এ নিয়ে মতভেদ রয়েছেই।
পেথোরিক কেশে গলা পরিষ্কার করে বললেন–আমরা একটা প্রয়োজনীয় তথ্য এড়িয়ে যাচ্ছি।
অস্ত্রটা ডায়না নিশ্চয় লুকোতে পারেনি, আর গুপ্ত ঘাতক অস্ত্রটা ছুঁড়লে রিচার্ডের দেহেই থাকত। যুক্তিপূর্ণ কারণ হচ্ছে রিচার্ড নিজেকে ছুরিবিদ্ধ করেছে। এবং এটি আত্মহত্যাই।
অবিশ্বাসের সুরে রেমণ্ড বলল, উনি কেন আত্মহত্যা করবেন?
পেথোরিক বলেন, আমি অনুমানে না গিয়ে তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তেই আসতে পারি যে নিজেকে ছুরিবিদ্ধ করার পর মাটিতে পড়ার সময় ছুরিটি ছিটকে পড়ে।
মারপল বলেন–আমি আপনার সঙ্গে একমতনই। ঘটনাটা বিভ্রান্তিজনক। সেদিন চড়ুইভাতিতে গলফ নম্বর প্লেট সাজাতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে লোকটা পাঁচ মিনিট অজ্ঞান ছিল।
রেমণ্ড পিসিকে বলল-লোকটা তো ছুরিবিদ্ধ হয়নি।
পিসি বলেন–একজনেইর সুযোগ ছিল ছুরি মারার। সুযোগ উপস্থিত হতেই মানসিক ইচ্ছা পূরণ করতে রিচার্ডকে খুন করে। তার দৃষ্টি ছিল ডায়নার দিকেই, তাই গাছের শিকড়ে বা পাথরে হোঁচট খান।
পেনডনার বিস্মিত হয়ে মারপলের দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনি বললেন না একজনেরই সুযোগ ছিল।
মারপল বলেন–হ্যাঁ-এলিয়ট জনজাতি মানুষ ছিলেন তো? আমি নিশ্চিত; নিজেই নিজের কাঁধে ছুরি মেরেছিল। যেমন আবাস-এর যুদ্ধের পর জ্যাক বেনেস নিজের পায়ে নিজেই গুলি করেছিল। যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে আর গোলাগুলি দেখে যাতে ওকে যুদ্ধে যেতে না হয়। হাসপাতালে সব খুলে বলে লজ্জিত হয়েছিল। এলিয়ট কি জঘন্য অপরাধটি করে খুব লাভবান হয়েছে।
এলিয়ট হেভেন?–চিৎকার করে ওঠে রেমণ্ড।
অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে মারপল বলেন–অন্য কেউ খুন করতে পারে না। মিঃ পেথোরিক বাস্তব দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ। তাই প্রকৃত তথ্য হল মাটিতে পড়ার সময় প্রথম এলিয়েটই কাছে যায়। চিৎ করে শোয়ানোর সময় ঘটনাটি ঘটায়।
মারপলের কথা শেষ হলে পেনডার ধীরে ধীরে বলেন, সত্যটা পাঁচ বছর পর জানতে পারি। এলিয়টের মনে হয়েছিল প্রথম থেকেই ও সন্দেহের তালিকায় ছিল। তাৎক্ষণিক প্ররোচনায় ঘটে ব্যাপারটি, কারণ সে ডায়নাকে তীব্র ভালোবাসত। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে ব্যর্থ ব্যারিস্টার। রিচার্ড যদি মারা যায় উত্তরাধিকারী হবে এলিয়ট। পথের কাঁটা সরে যাবে। ডায়না তারই হবে।
রিচার্ডের কাছে উপুড় হয়ে বসতেই প্রলোভনে বিভ্রান্ত হয়ে রিচার্ডকে আচমকা ছুরিবিদ্ধ করে। স্বস্তি ফিরে আসতেই কোমর বন্ধনীতে ছুরি রেখে দেয়। সন্দেহমুক্ত হতে নিজেকে আহত করার মতলব আঁটে। নিজেকে ছুরিবিদ্ধ করে, যাতে সবার ধারণা হয় অশরীরী কেউ ফিনিশীয় অস্ত্র দিয়ে হত্যা করতে এসেছিল অরণ্যে প্রবেশ করার অপরাধে। ঘটনার পর ডায়না অপ্রকৃতিস্থ থাকলেও তার মনে হয়েছিল রিচার্ডকে সেই খুন করেছে।