- বইয়ের নামঃ দি মিরর ক্রাকড ফ্রম সাইড টু সাইড
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী
দি মিরর ক্রাকড ফ্রম সাইড টু সাইড
১. জানলার ধারে বসে
দি মিরর ক্রাকড ফ্রম সাইড টু সাইড (মিস মারপল)
জানলার ধারে বসে নিজের বাগানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন মিস মারপল। এই সেদিন পর্যন্ত বাগানের পরিচর্যায় সময় কাটানোই ছিল তার আনন্দ, কি অসীম গর্ব আর পরিতৃপ্তি ছিল একে নিয়ে। কিন্তু উপায় কি? বয়সের শৃংখল আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে, ডাক্তারের কঠোর অনুশাসনে কোনোরকম শারীরিক পরিশ্রম করাই বারণ হয়ে গেছে। কিন্তু জেন মারপলের মনে কিশোরীর মতো অনুসন্ধিৎসা আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির খবর রাখে কজন?
নিজের আশৈশব পরিচিত এই সেন্ট মেরী মিড-এরও কি পরিবর্তন। পথ-ঘাট ও আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাল্টে গিয়েছে। বদলে গেছে দোকানগুলোর চেহারা। বেশির ভাগ বাড়িই হাতবদল হয়েছে, তাদের বাইরের চেহারা অবিকৃত রেখে ভেতরে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। প্রচুর ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরি হয়েছে, সেখান থেকেই আসে মিস মারপল-এর ঘরের কাজে সাহায্য করার মেয়েটি। লেখাপড়া জানা মেয়ে বউরাও আজকাল এই ধরনের কাজ করতে উৎসাহী। কিন্তু মনে মনে পুরানো দিনের পরিচারিকাদের কাজের গুণগত মানের সঙ্গে এদের তুলনা করে মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া উপায় নেই।
অন্যমনস্ক ভাবেই হাতের বোনাটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন মিস মারপল। কাঁধের কাছে ঘর কমাতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন, বহুক্ষণ আগেই একটা ঘর পড়ে গিয়েছে। এই ক্ষীণদৃষ্টি নিয়ে সেটিকে ঠিক লাইন পর্যন্ত তুলে আনা তার পক্ষে এখন আর সম্ভব নয়। মিস নাইট-এর জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।
ওঃ, মিস নাইট-এর কথা মনে পড়লেই মনে মনে অস্বস্তিবোধ করেন যেন মারপল। ভাইপো রেমন্ড কিছুতেই একা বাড়িতে থাকতে দেবেনা তাকে, তাই মিস নাইট-কে নিযুক্ত করে দিয়েছে তার সঙ্গিনী হিসেবে। ভদ্রমহিলা অবশ্য খুবই উৎসাহী, কর্মদক্ষ, কিন্তু তার সস্নেহ ব্যবহারের মধ্যে যেন প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি মমতা দেখানোর প্রয়াস আছে বলে মনে হয় মিস মারপল-এর। আর এটাই ভীষণ বিরক্তিকর বলে মনে হয় তার।
আজ কিন্তু আর ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না তার। মিস নাইটকে কয়েকটা কাজের ছুতোয় বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে একাই বেরিয়ে পড়লেন তিনি। ঐ নতুন ফ্ল্যাটগুলো তো দেখাই হয়নি তাঁর। নতুন মুখগুলোর সঙ্গে তার ফেলে আসা অতীতের মানুষজনের মিল খুঁজে বার করতে পারলে ভারি খুশি হন মিস মারপল। এতে মানুষগুলোকে বুঝতে সুবিধা হয় তার।
একটি অর্ধ সমাপ্ত বাড়ির জানলার ধারে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল একজোড়া তরুণ তরুণী। কথা শুনে মনে হলো, শিগগিরই বিয়ে করতে যাচ্ছে ওরা। এত বড়ড়া বাড়ি কেনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই ছেলেটির, এত টাকা খরচ করতে চায় না সে। কথাবার্তায় এ-ও বোঝা গেল ভাবী শাশুড়ীটিকেও মোটেই পছন্দ নয় ছেলেটির। এমন সময় ঘটলো এক অভাবনীয় দৃশ্য। খোলা জানলায় আড়াআড়িভাবে রাখা একটি আলগা বোর্ডে অন্যমনস্কভাবে হাতের চাপ একটু বেশি দিয়ে ফেলেছিল মেয়েটি। শেষ মুহূর্তে দেওয়াল আঁকড়ে ধরতে না পারলে নির্ঘাৎ ওপর থেকে আছড়ে পড়তো মাটিতে। ছেলেটি কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিয়ে একটু পিছিয়ে পড়লো।
একটু পরেই নিচে নেমে এলো মেয়েটি। ফ্ল্যাটটিতে তালা বন্ধ করে ছেলেটির নামতে যতটুকু দেরি হলো, তার মধ্যেই মিস মারপল ছেলেটি সম্বন্ধে মেয়েটিকে সতর্ক করে দিতে ভুললেন না। দেখে খুশি হলেন তার কথাটি উড়িয়ে দিল না মেয়েটি, রীতিমতো চিন্তিত দেখালো তাকে।
ছেলেটির মুখোমুখি হতে চান না মিস মারপল, একটু তাড়াতাড়িই পা চালালেন তিনি, এবং ভুলটা হলো এখানেই, একটা পাথরে হোঁচট খেয়ে একেবারে পপাত ধরণীতল। বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষটির হাত-পা অবশ্য ভাঙলো না, কিন্তু বিলক্ষণ নাড়া খেলেন তিনি। সামনের বাড়ির মধ্যবয়স্কা মহিলাটি ব্যাপার দেখে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে হাত ধরে তুলে নিয়ে এলেন নিজের বাড়িতে। তাড়াতাড়ি চা নিয়ে এলেন তার জন্য।
অত্যন্ত আলাপী মহিলা এই মিসেস বেডকক। টুকটাক সমাজসেবা করে আনন্দ পান এই প্রাণোচ্ছল মহিলা। একবার যেটা মনে হয়, করেই ছাড়েন। অনেকদিন আগের একটা ঘটনা বললেন, বিখ্যাত অভিনেত্রী মেরিনা গ্রেগ, যিনি বহুবিবাহ করার জন্যও বিশেষ প্রসিদ্ধ, তার সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ পেয়ে ডাক্তারের নিষেধ সত্ত্বেও অসুস্থ শরীর মেক-আপ-এ ঢেকে চলে গিয়েছিলেন মিসেস বেডকক। আরও জানালেন, একটি বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে মেরিনা, চলে যান যবনিকার অন্তরালে। এখন আবার পর্দায় ফিরে আসছেন তিনি। আর ঐ মেরিনা গ্রেগ ও তার পরিচালক স্বামী এই সেন্ট মেরী মিড-এর গসিংটন হলটি কিনেছেন, যে বাড়ির লাইব্রেরিতে একসময় একটি তরুণীর মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়ে যথেষ্ট উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।
পরদিন গসিংটন হল-এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন মিস মারপল। ঐ বাড়িটির আদি মালিক মিসেস ব্র্যান্ট্রি তার অনেকদিনের বন্ধু। স্বামীর মৃত্যুর পর এই বাড়ির সংলগ্ন একটি কুটির আর কিছুটা ঘেরা বাগান নিজের জন্য রেখে, ঐ বিশাল বাড়ি ও জমি বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। অতএব প্রাসাদ রক্ষণাবেক্ষণ করা তাঁর পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। বছরের অনেকটা সময়ই তিনি দেশে বিদেশে ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনিদের কাছে ঘুরে বেড়ান। মাঝে মাঝে এই আরামদায়ক ছোট্ট বাড়িটিতে কাটিয়ে যান।