চাঁদের আলোয় চোখ স্থির হল, পরিষ্কার দেখা গেল অন্য এক ডায়নাকে, ডায়না যেন চাঁদের দেবী ডায়না। দ্যুতিতে নিষ্ঠুরতা। অধর জুড়ে মোহময়ী হাসি।
হাত উঁচু করে আবার সতর্কবাণী–অগ্রসর হয়ো না। আমার অভিশাপে অঙ্গ স্পর্শ করলেই মৃত্যু নিশ্চিত।
আবেগতাড়িত রিচার্ড বলল–আর নয় ডায়না, আমার ঠিক ভালো লাগছে না। বলতে বলতে তার দিকে এগোল।
ঠিক তখনই কঠিন স্বরে ডায়না বলল-স্থির হও। আর অগ্রসর হলেই অ্যাসটার্টের মোহিনী অস্ত্রে আঘাত হানব।
উচ্চস্বরে হেসে রিচার্ড এগিয়ে যেতে ঘটল আশ্চর্য ঘটনাটা। থমকে গিয়ে হোঁচট খাবার ভঙ্গিতে রিচার্ড পড়ে গেল। আর উঠল না।
হঠাৎ প্রাণহীন করা হাসির শব্দে কেঁপে উঠলাম। নির্জন বনানীতে ছড়িয়ে পড়ল সেই ভয়ঙ্কর হাসি।
চাপা শপথ বাক্য পাঠ করে এগিয়ে গেল এলিয়ট, আর সহ্য হচ্ছে না। রিচার্ড উঠে পড়ুন। রিচার্ড নিশ্চল হয়ে পড়ে রইল। রিচার্ডের কাছে পৌঁছে হাঁটু গেড়ে বসে চিৎ করে শুইয়ে, ঝুঁকে পড়ল, পরমুহূর্তে ডাক্তার সাইমণ্ডল চিৎকার করে বলল, এদিকে আসুন। মনে হচ্ছে ও মারা গেছে। সাইমণ্ডল দৌড়ে গেল আর এলিয়ট ধীর পায়ে আমাদের দিকে এল। অদ্ভুতভাবে তাকাল হাত দুটোর দিকে।
সেই মুহূর্তে আর্তনাদ করে উঠল ডায়না, হায়! আমি খুন করেছি। এ আমি চাইনি। পরক্ষেণেই মূর্ছা গেল।
মিসেস রজার্স কান্নাভেজা গলায় বলল–অ্যাসটার্টের অভিশাপই কি মৃত্যুর কারণ? এই ভয়ঙ্কর জায়গা ছেড়ে চলুন–আরও ভয়ঙ্কর কিছু ঘটার আগেই।
এলিয়ট কাঁধে হাত রেখে বিড় বিড় করে বলল–এ অসম্ভব। একটা জলজ্যান্ত মানুষ এভাবে খুন হতে পারে?
আমি শান্ত করার চেষ্টার বললাম–রিচার্ডের হৃদপিণ্ড দুর্বল ছিল এবং আকস্মিক উত্তেজনায়
এলিয়ট শেষ করতে দিল না। হাত দুটি মেলল। বিস্ময়ে দেখলাম দুটো হাতে রক্তের ছাপ।
কোনো আকস্মিক ভয়ে মরেনি। ছুরিকাঘাতে মৃত্যু এবং সোজা হৃদপিণ্ডে। অস্ত্রের কোনো চিহ্ন নেই রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। এলিয়ট কষ্টবোধ করল।
সাইমণ্ডল রিচার্ডকে পরীক্ষা করে আমাদের কাছে এল। ফ্যাকাসে চোখ-মুখ। কাদস্বরে বলল–আমরা পাগল হয়ে গেলাম। বিশ্বাস করা যায় দেবীর অভিশাপের কথা! আজকের যুগে–কিন্তু যেটা ঘটল।
অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম–সত্যি কি রিচার্ডমৃত? সম্মতি জানিয়ে সাইমণ্ডল বলল–তীক্ষ্ণ দীর্ঘ অস্ত্রের আঘাত। কিন্তু অস্ত্র তো দেখিনি।
এলিয়ট প্রায় চেঁচিয়ে বলল-কাছাকাছি কোনো অস্ত্র নিশ্চয়ই আছে। খুঁজে দেখি চলুন–বৃথাই খোঁজা।
ডায়োলেট হঠাৎ বলল–জায়না যখন ভয় দেখাচ্ছিল ছড়ি জাতীয় জিনিস হাতে জ্বলছিল।
এলিয়েট মাথা নেড়ে বলল–রিচার্ড তিন গজের মধ্যে যায়নি।
লেডি ম্যানারিং ঝুঁকে ডায়নাকে দেখে বলল-হাতে কিংবা আশেপাশে কিছুই নেই। ডায়োলেট পেয়েছ কিছু?
ডাক্তার সাইমণ্ডল ডায়নাকে পরীক্ষা করে দেখল; অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শিথিল, আস্তে নিশ্বাস পড়ছে। কপালে ঘাম। নার্ভের গতি ধীর। এখনি বাড়ি নিয়ে যেতে হবে।
লেডি ম্যানারিং, সাইমণ্ডল, রজার্স মিলে মূৰ্ছিতা ডায়নাকে নিয়ে গেল। মৃতদেহ পাহারা দিচ্ছি আমি, ডায়োলেট আর রজার্স। অস্ত্রের সন্ধান করলাম। কিন্তু চাঁদের আলোতেও কোনো অস্ত্র পাওয়া গেল না। রিচার্ডের দেহ তোলার সময়ও ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরছিল। মিসেস রজার্স ডুকরে কেঁদে উঠল। ডায়োলেট যেন মূর্ছা যাবে।
চারিদিকে চোখ বুলিয়ে পেনডার বলেন, গোয়েন্দা গল্প পড়ে জানা যায় মৃতদেহ সরাতে নেই। তথ্যটি আমাদের অজানা ছিল। তাই রিচার্ডের দেহ বাড়িতে আনলাম।
মালিকের মৃত্যুতে পরিচারক-পরিচারিকা সবাই বারহিত। যে বৃদ্ধা পরিচারিকা ছোটোবেলা থেকে মানুষ করেছিল রিচার্ডকে, সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। পুলিশ চৌকিতে খবর পাঠাল এক পরিচারক।
আমাকে ডেকে এলিয়ট বলল–সেই জঙ্গলে আবার যাবে। অস্ত্রটি খুঁজে বার করবেই। অস্ত্র না পাওয়ার সন্দেহের কথা জানিয়ে বললাম, ওখানে না যাওয়াই ভালো।
ঝাঁকুনি দিয়ে এলিয়েট বলল–আপনি মনে করেন অপ্রাকৃত শক্তিই মৃত্যুর কারণ। যে অস্ত্রটি মৃত্যুর কারণ সেটা খুঁজে বের করবই। এখন জঙ্গলে গিয়ে অস্ত্রটা নিয়ে ফিরব।
নানাভাবে এলিয়টকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করলাম। অরণ্যের নিবিড়তায় মনে হচ্ছিল ভয়ঙ্কর বিপদ ওত পেতে আছে। রহস্য ভেদের জন্য আলো নিয়ে এলিয়েট বেরিয়ে পড়ল।
ভয়ঙ্কর রাত্রি। কেউ ঘুমোতে পারিনি। সাইমণ্ডল এবং মেয়েরা ডায়নার পরিচর্যায় ছিল। সার্জেন্টের নেতৃত্বে তিনজন পুলিশ ঘোড়ায় চড়ে এল, ঘটনাটা শুনে অবিশ্বাস্য ধরে নিয়েছিল। ডায়নাকে জিজ্ঞেস করার আগ্রহ দেখালে ডাঃ সাইমণ্ডল তীব্র প্রতিবাদ করেন। কয়েক মিনিটের জন্য ডায়নার জ্ঞান ফিরলেও ঘুমের ওষুধ দিয়ে আবার ঘুম পাড়ালেন। মৃতদেহ পরীক্ষার জন্য পুলিশ ডাক্তার আনবে এবং অকুস্থলে গিয়ে অনুসন্ধান করবে।
পরদিন সাতটায় চায়ের টেবিলে খোঁজ পড়ল এলিয়টের। সাইমণ্ডলকে গত রাতের সব কথা জানালাম। গম্ভীর হয়ে বলল গিয়ে বোকামী করেছে। আমরা দুজনে অরণ্যে প্রবেশ করলাম। ডাকতে ডাকতে ভোলা জায়গাটায় এলাম। বিবর্ণ ভৌতিক জায়গা। বিস্ময়কর শব্দে সাইমণ্ডল হাত জাপটে ধরল। দেখি যেখানে রিচার্ডের মৃতদেহ ছিল, সেইখানে উপুড় হয়ে আর একটি দেহ।