বৃদ্ধ পেনডার হতাশভাবে বলল,-আমি স্বীকার করি আমি বিভ্রান্ত। আমার মনে হয় পতিটি কোনোভাবে দোষী। কিন্তু কি উপায়ে কার্য সমাধা করলেন তা জানি না। এখনও আবিষ্কৃত হয়নি কিভাবে বিষ প্রয়োগ করা হল। এতদিন পরে কি করে রহস্যের সমাধান হল তাও বোধগম্য হচ্ছে না।
এবার জয়েসের পালা। নিশ্চিতভাবে বলল-সঙ্গিনী ভদ্রমহিলাটিই অপরাধী। কি উদ্দেশ্যে কে জানে? বৃদ্ধা মোটাসোটা কুৎসিত হলেও জোনসের প্রেমে পড়তে বাধা কোথায়? কোনো কারণে মিসেস জোনসকে আন্তরিকভাবে ঘৃণা করতেন। সদা হাস্যময়ী কিন্তু ভিতরে ভিতরে কষ্ট চেপে রেখেছেন। আর একদিন না পেরে খুন করে বসলেন। সন্তর্পণে কর্নফ্লাওয়ারের বাটিতে আর্সেনিক মিশিয়ে এবং মিথ্যে রটিয়ে দিলেন উনি নিজেই সেটা খেয়েছেন বলে।
মিঃ পেথোরিক কোর্টে সওয়াল করার ভঙ্গীতে হাতজোড় করে বললেন, যা তথ্য জেনেছি তাতে এখন কিছু বলা উচিত নয়।
জয়েস জোসের সঙ্গে বলে উঠলেন আপনাকে বলতেই হবে। সব সময় আইন মেনে মতামত চেপে রাখতে পারেন না। এটা নিছক খেলা। আপনি খেলবেনই।
মিঃ পেথোরিক বলেন–বর্তমান তথ্যে কিছুই বলার নেই। আমার ব্যক্তিগত মত হল এই ধরনের কেসে প্রকৃত দোষী স্বামী। তথ্য বিশ্লেষণে একটাই মত, সেটা হল মিস ক্লার্ক কোনো কারণে বা ইচ্ছাকৃতভাবে জোনসকে আড়াল করছেন।
তাদের হয়তো গোপন আর্থিক চুক্তি ছিল। জোনস জানত সেও সন্দেহভাজন তালিকায় এবং ক্লার্কের কষ্টের জীবন ফিরে আসছে বুঝে দুজনেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। টাকার বিনিময়ে কর্নফ্লাওয়ার খাওয়াতে নিজেকে জড়ায়, যদি এটাই সত্যি হয় তবে বুঝতে হবে ঘটনাটা খুবই গোলমেলে।
রেমণ্ড বলে উঠল, আমি একমত নই, আপনারা ভুলে গেছেন উল্লেখযোগ্য তথ্য নেই। সেই টিনে ভর্তি গলদা চিংড়ি সত্যি খারাপ ছিল। বিষক্রিয়ার কারণে ডাক্তার ডাকা হলে তিনি দেখেন মিসেস জোনস প্রচণ্ড ব্যথায় কাতর। অবস্থা বুঝতে পেরে আফিমের বড়ি আনালেন।কিন্তু নিজে যাননি। মেয়েটিই ওষুধপত্তর দিয়ে থাকে। তিনি ডাক্তারের প্রণয়ী। তখনই আদিম প্রবৃত্তি জেগে উঠল। মাহেন্দ্রক্ষণেই সে পাবে ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। পাঠানো বড়িগুলি আর্সেনিকের, আফিমের নয়।
জয়েস ধৈৰ্য্য ধরতে না পেরে বলল–স্যার হেনরি বলে দিন না।
স্যার হেনরি বলেন–মিস মারপল কিছু বললেন না তো।
মিস মারপল এদিক ওদিক মাথা নেড়ে চোখ তুলে বললেন–হ্যায়রে গোনায় ভুল হল। এই দুঃখজনক ঘটনা আমাকে মিঃ হারগ্রেভের কথা মনে করিয়ে দিল। হারগ্রেভের মৃত্যুর পর সমস্ত টাকা পেল অন্য মহিলা। তাদের পাঁচটি সন্তান ছিল। একসময় মহিলা হারগ্রেভের পরিচারিকা ছিল।
রেমণ্ড অধৈৰ্য্য হয়ে বলল, পিসি, মৃত হারগ্রেভের সঙ্গে এর মিল কোথায়?
মারপল বলেন–মিলগুলি খুব আশ্চর্যজনক। বেচারী সব স্বীকার করায় আপনারা জানতে পারলেন। তাই না, মিঃ হেনরি।
রেমণ্ড বলল–পিসি তুমি কোন মেয়েটির কথা বলছ?
মারপল বললেন-বেচারী গ্ল্যাডিস লিচেন, ওকে যখন ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসাবাদ করছিল, উত্তেজিত হয়ে কেঁদেও ফেলেছিল। অসহায় মেয়েটিকে খুন করানোয় জোনসের ফাঁসি হবে। মেয়েটিরও ফাঁসি হবে।
মিঃ পেয়োরিক হতাশ হয়ে বললেন–আপনি ভুল বুঝলেন।
কিন্তু মিস মারপল জোরের সাথে মাথা নেড়ে হেনরির দিকে আশান্বিত চোখে তাকিয়ে বললেন–হাজার হাজার মিষ্টি খাবার এগুলি কিভাবে চোখ এড়াল।
রেমণ্ড প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল–কি বলছ তুমি, হাজার মিষ্টি খাবার…
মিস মারপল রেমণ্ডের দিকে ঘুরে বললেন, রাধুনীরা প্রচুর মিষ্টি তৈরি করে। এই ছোটো ছোটো পিঠের মতো মিষ্টিগুলির নাম শয়ে শয়ে, হাজার হাজার। যেগুলি ছিল ওদের খাদ্যতালিকায়। দুটো জিনিসকে একত্র করাতে বোঝা গেল আর্সেনিকের প্রয়োগ কৌশল। এবং ভার পড়ল রাঁধুনির উপর।
জয়েস তাড়াতাড়ি বলল–তিনজনেই তো মিষ্টি খেলল, কি করে সম্ভব?
মারপল বললেন, না না। মিস ক্লার্ক আহার প্রস্তুত করছিলেন। মেদ কমাতে চাইলে মিষ্টি ছোঁয়া উচিত নয়। আমার ধারণা খুব সুচতুরভাবে জোনস মিষ্টিগুলি সরিয়ে রাখে।
প্রত্যেকে হেনরির দিকে তাকাল। ধীরে ধীরে বললেন–খুব আশ্চর্যজনকভাবে মারপল সত্য উদঘাটন করলেন। সন্তানসম্ভবা গ্ল্যাডিসকে জোনস বলেছিল স্ত্রীকে সরিয়ে তোমাকে বিয়ে করব। আর্সেনিকের বড়ি তৈরি করে মিষ্টির সঙ্গে মেশাতে তাকে শিখিয়ে দিয়েছিল। গ্ল্যাডিসের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে গর্ভের বাচ্চাটিও মারা যায়। মৃত্যু শয্যায় গ্ল্যাডিস সব কিছু স্বীকার করে।
নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে জয়েস বলল–সাবাস পিসি, তুমি এক পয়েন্ট এগিয়ে রইলে। আমার তো ভাবতেই অবাক লাগছে তুমি কি করে রহস্যটা ধরলে। কারণ রাঁধুনিটার সাথে এই ঘটনার মিল কোথায়?
মারপল বললেন-সোনা, মানুষকে আমি যতটা জানি তুমি ততটা জানো না। যখন শুনলাম গ্ল্যাডিস নামে একটি সুন্দরী যুবতী আছে, জোনসের মতো মানুষ তাকে ছাড়বে না। শয়তানের কবলে পড়ে একটি মেয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করল। এটা বোঝাবার নয় যে, মিসেস হারগ্রেভের দুঃখে গ্রামের মানুষের বারুদ্ধ হয়েছিল।
রেমণ্ড উঠে দাঁড়িয়ে বলল–আজকের মতো বৈঠক শেষ। রাত হয়েছে। পরের মঙ্গলবার কে বলবেন? চারিদিকে তাকিয়ে বলল–ডঃ পেনডার।
জয়েস তাকে সমর্থন করল।