উল্লাসিত জয়েস বলল,-বাঃ, আমি এইরকমটাই চেয়েছিলাম। সত্যি রহস্যময় ঘটনা।
স্যার হেনরি আবার শুরু করলেন–সব সন্দেহই গিয়ে পড়ল স্বামীর উপর। তিনি আর্থিক ভাবে উপকৃত। রটেছিল হাজার হাজার, লাখ লাখ কিন্তু প্রায় আট হাজার পাউন্ডের মালিক হলেন। চাকুরির টাকা ছাড়া সঞ্চিত অর্থ ছিলই না। মহিলা সংসর্গে মুক্ত হস্তে খরচা করতেন। আমরা সন্তর্পণে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল এক সময় উভয়ের মধ্যে সত্যিই গভীর সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মাস দুয়েক আগে বিচ্ছেদ ঘটে। দুজনকে আর একসঙ্গে দেখা যায়নি। ডাক্তারবাবু ভোলামেলা সরল মানুষ, কোনোরকম সন্দেহই করা যায় না। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হতবাক। ঘটনার দিন রাত্তিরে তাকে যখন ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়, তিনি দেখেন তিন জনই অসুস্থ। মিসেস জোনসের অবস্থা বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ একজনকে পাঠান কিছু আফিমের বড়ি আনতে। কিছুটা ব্যথা উপশমের জন্য। কিন্তু সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও মিসেস জোনস মারা গেলেন। কিন্তু ডাক্তারবাবুর একটু খারাপ সন্দেহ হয়নি। খাবারের মধ্যে ছিল টিনে ভর্তি গলদা চিংড়ি। স্যালাড, ঝটি বিজ এবং প্রচুর সরে তৈরি মিষ্টি। টিনজাত চিংড়ি মাছই মৃত্যুর কারণ।
দুর্ভাগ্যবশত চিংড়ি মাছের এককণাও অবশিষ্ট ছিল না। সবটাই খেয়ে নিন ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ডাক্তারবাবু রাধুনি গ্ল্যাডিস লিচেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সে একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছিল। সবসময় কাঁদছিল আর উত্তেজিতও ছিল। গ্ল্যাডিসের কাছ থেকে কোনো হদিশ পাননি। কিন্তু গ্ল্যাডিস বলেছিল, ও মাছে হাতই দেয়নি আর মাছটা খুব ভালোই ছিল।
যার উপর নির্ভর করে আমরা এগোচ্ছিলাম এই হচ্ছে সেই সব তথ্য। যদি ধরে নিই যে, জোনস স্ত্রীকে বিষ প্রয়োগ করেছিল এটা ঠিক যে জোনস খাবারে বিষ মেশায়নি। কারণ তারা খাবারগুলি খেয়েছিল। তাছাড়া আর একটা সূত্র যে, জোনস বারমিংহাম থেকে সোজা খাবার টেবিলে আসে সুতরাং আগে সে বিষ মেশাতে পারে।
জয়েস বলে ওঠে–ওই সঙ্গিনী হাসিমুখ ভদ্রমহিলাটির কি ব্যাপার?
সম্মতি জানিয়ে হেনরি বলেন, মিস ক্লার্ককেও অবজ্ঞা করিনি। কিন্তু তার কি উদ্দেশ্য, মিসেস জোনস তো তার উত্তরাধিকার নয় বরং মহিবাণীর মৃত্যুতে চাকরি খুঁজতে হয়েছিল।
জয়েস ভেবে বলল,–তাকে বাদ দিতেই হয়। স্যার হেননি বলে চলেন,এক ইনসপেক্টর একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করে। খাবার পর সেই রাত্রে জোনস একবাটি কর্নফ্লাওয়ার চেয়েছিল, স্ত্রী অসুস্থ বোধ করায়। গ্ল্যাডিস কর্নফ্লাওয়ার তৈরি করা পর্যন্ত জোনস রান্নাঘরেই ছিলেন। এরপর নিজে খাবার নিয়ে স্ত্রীর ঘরে যান। কেসটা নতুন মোড় নিল।
আইনজীবী পেথোরিক মাথা নাড়েন। কর গুনে বলেন এক নম্বর উদ্দেশ্য এবং দুই সুযোগ। ওষুধ সংস্থার কর্মী হিসেবে বিষ পাওয়া সহজ জোনসের।
যাজক পেনডার মন্তব্য করেন,–ভদ্রলোক যখন দুর্বল প্রকৃতির মানুষ।
রেমণ্ড ওয়েস্ট হেনরির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,–এখানেই কোথাও জটটা আছে। আপনারা জোনসকে গ্রেপ্তার করলেন না কেন?
স্যার হেনরি হতাশভাবে হেসে বললেন,–দুর্ভাগ্যটা এইখানেই। এতক্ষণ সব কিছু ঠিক ঠিক এগোচ্ছিল, গ্রেফতারের জায়গায় হোঁচট খেলাম। মিস ক্লার্ককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারলাম বাটিভর্তি কর্নফ্লাওয়ারটি খেয়েছেন তিনি, মিসেস জোনস নয়।
মিস ক্লার্ক যা বললেন তা হল, তিনি রোজকার মতো মিসেস জোনসের ঘরে গেলেন। মিসেস জোনস বলেন, মিলি (মিস ক্লার্কের ডাক নাম) আমি ভালো বোধ করছি না। চিংড়িটা আমার ছোঁয়া উচিত হয়নি। আমি অ্যালবার্টকে একবাটি কর্নফ্লাওয়ার দিতে বলেছি। কিন্তু এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
ক্লার্ক বলেন- গ্ল্যাডিস এত সুন্দর কর্নফ্লাওয়ার তৈরি করেছে। আজকাল মেয়েরা এত ভালো বানাতেই পারবে না। আমার তো দেখেই খিদে পাচ্ছে। আস্তে আস্তে খেয়ে নিন, আমার খাওয়া উচিত নয়।
স্যার হেনরি একসময় বলেন,-মিস ক্লার্ক ওজন কমানোর জন্য ডায়েটিং করেন, মিসেস জোনস তাকে বলেন, তোমার ডায়েটিং করা উচিত নয়। ভগবান যদি মোটা দেখতে চান তবে তাই হও। তুমি কর্নফ্লাওয়ারটা খেয়েই নাও।
উপায়ন্তর না দেখে এক চুমুকে বাটি শেষ করলেন মিস ক্লার্ক। জোনসের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ নষ্ট হয়ে গেল। জোনসকে চিঠির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, অস্ট্রেনিয়া তার এক ভাই অর্থ সাহায্যের জন্য চিঠি লেখায় তিনি এই উত্তর দেন। চিঠিতে লেখেন সম্পূর্ণভাবে তিনি স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি অর্থের মালিক হলে তখন কিছু সাহায্য করবেন। আরও লেখেন, পৃথিবীতে হাজার হাজার শয়ে শয়ে মানুষ এইরকম দুর্ভাগা।
ডাঃ পেনডার বলেন, তাহলে কেসটা একদম নস্যাৎ হল।
স্যার হেনরি বলেন, একেবারেই নস্যাৎ। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জোনসকে গ্রেফতার করা গেল না।
সবাই চুপচাপ নিথর নৈঃশব্দ। জয়েস বলে উঠল, সব শেষ, না কি?
স্যার হেনরি বলেন,–গত বছর পর্যন্ত এর বেশি জানা যায়নি। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে সমাধানে পৌঁছে গেছে। দুই তিন দিনের মধ্যে কাগজে পড়বেন সবটা।
জয়েস বলে,–আসল রহস্যটা কি? মিনিট পাঁচেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেব।
রেমণ্ড মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ঘড়ি দেখল। পাঁচ মিনিট পার হলে ডাঃ পেনডারের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি প্রথমে বলবেন?