এবার আসল পরীক্ষার শুরু। তার কাছে জো এবং মিসেস বারলেটের সম্পর্ক জলের মতো পরিষ্কার হয়ে উঠল।
হেনরিকে দেখে অ্যানে হাত মুছে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কি তাকে কিছু বলবেন? হেনরি কঠিন মুখে বলেন তিনি সব জানতে পেরেছেন।
তিনি না বোঝার ভান করে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি কি জেনেছেন।
এবার হেনরি মোক্ষম অস্ত্রটি হানলেন। চোখের উপর চোখ রেখে বলেন, তিনি খুব ভালোই জানেন জো এলিম কোনো অপরাধ করেনি। তিনি কি চান তার ফাঁসি হোক?
মিসেস বারলেট নিচু স্বরে বলেন তাকে–তিনি কি জানতে পেরেছেন।
হেনরি ঘটনাটা সবিস্তারে বলতে শুরু করল–তিনি কাপড় বিলি করে ফেরার সময় দেখেন রোজ স্যানফোর্ডের জন্য সাঁকোর উপর দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন স্যানফোর্ড রোজকে বিয়ে করবেন না। অল্পদিনেই লন্ডনে ফিরে যাবেন। তখন রোজ আবার জো-র কাছেই ফিরে আসবে। কিন্তু জো-কে তিনি নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেন এবং চার বছরে জো-কে আপনার ভাবতে শুরু করেছেন। রোজ জো-কে কেড়ে নেবে এই কথা চিন্তা করে অধীর হয়ে উঠলেন। রাত্রির অন্ধকারে নির্জন সাঁকোর উপর রোজকে দেখে তিনি তাকে সরিয়ে দেবার স্থির করলেন। জো চিরদিনের জন্য তারই থাকবে এই ভেবে তিনি চুপিসারে সাঁকোর উপর উঠে, রোজ-এর কাধদুটো ধরে ঠেলে নদীতে ফেলে দেন। তীব্র স্রোতে সাঁতার না-জানা মেয়েটি ভেসে গেল। ফেরার পথে জো এলিমের সঙ্গে তার দেখা হয়। তারপর তারা দুজনে পেরামবুলেটের ঠেলে গ্রামের দিকে আসছিল। জিমি দূর থেকে সব দেখেছিল কিন্তু ঘন কুয়াশার অন্ধকারে আপনাদের চিনতে পারেনি।
নদীতে ফেলে দেবার পর কেউ যদি জো-কে সন্দেহ করে, এই আশঙ্কায় তাক বানানোর গল্পটা তৈরি করেন এবং জো-কে রাজি করান। আসলে জো-কে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে নয় নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করতেই এই গল্প খাড়া করেছিলেন।
এরপর হেনরি প্রশ্ন করেন, তিনি সঠিক বলেছেন তো?
রুদ্ধ কণ্ঠে মিসেস বারলেট সব স্বীকার করে বলেন, এতকালের নিঃসঙ্গ একাকীত্ব জীবন স্নেহ ভালোবাসায় জো ভরিয়ে দিয়েছিল। বিয়ের পর স্বামী পঙ্গু হয়ে অল্প দিনেই মারা যায়। তার চুল পেকে গেলেও বয়স তিরিশের কোটায়। প্রেম ভালোবাসা পাবার আশায় যখন তিনি হাঁপিয়ে ওঠেন তখন জো এল তার জীবনে। জো কে পেয়ে তার শূন্য মন ভরে উঠল। কিন্তু জো-কে তিনি কোনোদিন জানতে দেননি। মিসেস বারলেট বলেন, যদি তার বয়স পঁচিশ তবুও সে বাচ্চা ছেলের মতো। সব কিছুই তাকে হাতে ধরে দিতে হয়, তার উপর জো-এর অগাধ আস্থা। জো শুধুই তার–এই কথা বলতে বলতে গাল বেয়ে নামল অশ্রু বন্যা।
কিছুক্ষণ পর প্রকৃতিস্থ হতেইমিসেস বারলেট তাকে প্রশ্ন করেন এইসব তিনি কি করে জানলেন?
হেনরি পকেট থেকে মিস মারপলের লেখাটা তার হাতে দিলেন, যাতে লেখা ছিল রোজ-কে নদীতে ফেলে খুন করেছে বারলেট।
বারলেট হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল কাগজটার দিকে।
একনাগাড়ে গল্পটা বলে ক্লান্ত হয়ে হেনরি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। সবাই মুগ্ধ এই অদ্ভুত প্রেমের পরিণতি ও তার রহস্য উদঘাটনের চাতুর্যে।
ডাঃ পেনডার মৃদুস্বরে বলেন–আশ্চর্য গল্প শোনালেন মিঃ হেনরি। মানুষের অতলে কি যে লুকিয়ে থাকে কেউ জানেন না। আর ঈশ্বরের এক আশ্চর্য সৃষ্টি মানুষ। আর তিনি বুঝতেই পারছেন না; কি করে মিস মারপল বুঝতে পারলেন মিসেস বারলেটই খুনি। রেমণ্ড উঠে দাঁড়িয়ে সমবেত অতিথিদের দিকে তাকিয়ে বলল, আজ আমাদের সান্ধ্য বৈঠকের প্রথম পর্বের পরিসমাপ্তি।