মেলচেট ধীর কণ্ঠে বলল, তাহলে কি তারা ধরে নেবে যে সে গত পরশু দিনের ঘটনা সম্পর্কে বিবৃতি দেবে না?
স্যানফোর্ড বলল, সে পরশু রাতে বেড়াতে বেরিয়েছিল।
মেলচেট তাকে পাল্টা প্রশ্ন করল, সে রোজ-এর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল?
স্যানফোর্ড উত্তর দেয় না, সে একাই বেরিয়েছিল। নদীর ধার দিয়ে বনের অনেক ভিতর।
এমন সময় ড্রেইট তার কোটের পকেট থেকে একটা আধ ভেজা কাগজ বের করে তাকে বলল, এই চিঠিটা সম্পর্কে তার বক্তব্য কি? চিঠিটা পাওয়া গেছে মৃতা রোজ-এর পকেট থেকে। চিঠিটা তাকে আস্তে আস্তে পড়ে শোনায় এবং প্রশ্ন করে সে কি অস্বীকার করতে পারে যে চিঠিটা সে লেখেনি?
স্যানফোর্ড নিজেকে ধাতস্থ করে বলল, চিঠিটা সেই লিখেছে। কারণ রোজ তার সঙ্গে দেখা করার জন্য পীড়াপীড়ি করছিল।
স্যানফোর্ডের স্বীকারোক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ড্রেউইট তাকে বলল গত পরশু রাতে সাঁকোর উপর আসতে সেই অনুরোধ করেছিল।
স্যানফোর্ড বুঝল চিঠিটা লিখে সে বিপদে পড়েছে তাই উত্তরে বলল, সে নদীর পাড়ে যায়নি। না যাওয়াটাই তার পক্ষে মঙ্গল ছিল কারণ আগামীকাল তার লন্ডনে ফিরে যাবার কথা। তাই যাবার আগে দেখা করে তাকে কষ্ট দেবে না। লন্ডনে ফিরে গিয়ে তার জন্য কি ব্যবস্থা করা যায় তাও জানাবে।
মেলচেট গম্ভীরভাবে বলেন, তবে কি সে জানত তার পরিণতির জন্য সেই দায়ী?
অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে স্যানফোর্ড বলল, সেই দায়ী।
ড্রেউইটি হাল্কা স্বরে প্রশ্ন করল, যখন তিনি বেড়াতে বেরোচ্ছিলেন কেউ কি তাকে দেখেছিল বা তিনি কাউকে দেখেছিলেন কিনা?
স্যানফোর্ড উত্তর দেয়, কেউ তাকে দেখেছিল কিনা সে জানে না কিন্তু সে কাউকে দেখেনি। স্যানফোর্ড তাকে প্রশ্ন করে, তার বেড়ানোর সঙ্গে রোজ-এর মৃত্যুর সম্বন্ধ কোথায়, কারণ সে তো আত্মহত্যা করেছে।
ইনসপেক্টর গম্ভীরভাবে বলল, রোজ জলে ডুবে মারা যায়নি। কেউ জোর করে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল। ঘটনাটা নির্মম হত্যা।
স্যানফোর্ড কথাটা শুনে আর্তনাদ করে উঠল।
এইভাবে কয়েক মিনিট কাটায় যখন তারা বেরিয়ে আসছেন তখন মেলচেট বলেন, এই অবস্থায় কালকে লন্ডনে যাওয়া তার পক্ষে নিরাপদ নয়। তাদের বিনা অনুমতিতে সে এখান থেকে যেতে পারবে না।
রাস্তায় পা দিয়ে ড্রেউইট বলল, তার তদন্তের প্রয়োজন নেই। সাক্ষ্য প্রমাণ তাদের হাতের মুঠোয়। এবার স্যানফোর্ডের নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে ওকে গ্রেফতার করতে হবে।
কিন্তু হেনরি ঠিক সন্তুষ্ট হলেন না, কতগুলো বিষয়ে তার মনে সন্দেহ ছিল। তাই মেলচেট এবং ড্রেউইটকে এগিয়ে যাবার পরামর্শ দিয়ে স্যানফোর্ডের কাছে ফিরে এসে বলল, তিনি তাকে সাহায্য করতে চান কিন্তু রোজ-এর সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং কি কি ঘটেছিল সব কথা তাকে খুলে বলতে হবে।
স্যানফোর্ড তার কাহিনী শুরু করল। এখানে আসার কিছু দিনের মধ্যে তার সঙ্গে মেয়েটির আলাপ হয়। রোজ ছিল সুন্দরী এবং অত্যন্ত ভালো মেয়ে। প্রথমদিনই বুঝতে পারি মেয়েটি আমার প্রতি আকৃষ্ট। তাছাড়া অজানা অচেনা জায়গায় ওর সাহচর্য তাকে সব ভুলিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে লন্ডনে তার বাগদত্তা আছে জেনেও সে কিছুই মানতে চাইল না। তার মতো প্রাণবন্ত মেয়ে তাকে দুর্বল করে দিয়েছিল। কিন্তু কোনো এক অসতর্ক মুহূর্তে তাদের মিলনের ফলে সে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে। তাই সে ভেবেছিল ব্যাপারটা যখন এমন গুরুতর মোড় নিয়েছে তখন উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করে শেষে একটা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ।
স্যানফোর্ড হেনরিকে বলে পুলিশ তাকে অকারণ সন্দেহ করছে। তার ধারণা রোজ আত্মহত্যাই করেছে।
হেনরি প্রশ্ন করে, রোজ কি তাকে এই আত্মহত্যার কথা কিছু বলেছিল? মাথা নেড়ে স্যানফোর্ড বলে এই ধরনের মানসিকতা তার ছিল না।
এরপর হেনরি জো-এর পরিচয় জানতে চাইল। উত্তর সে বলল, সে জোকে চেনে, ছেলেটি একটু বোকা ধরনের। রোজের জন্য সে পাগল ছিল। কথা বলার জন্য ছটফট করত কিন্তু রোজ তাকে পাত্তা দিত না।
হেনরি বলেন, তাহলে ঈর্ষান্বিত হয়ে জো রোজ-এর ক্ষতি করতে পারে, তখন স্যানফোর্ড বলে যদিও এটা হওয়া স্বাভাবিক তবুও ক্ষতি করার ছেলে জো নয়। হেনরি সব শুনে বিদায় নিলেন।
মেলচেট হেনরিকে স্যানফোর্ডের গ্রেফতারের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার কথা বলতেই তিনি বলেন, তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়। জো এলিম সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নিতে হবে। যদি স্যানফোর্ডকে গ্রেফতার করার পর দেখা যায় সে নির্দোষ তবে ব্যাপারটা খুব অপমানজনক হয়ে দাঁড়াবে। হেনরির বারবার মনে হচ্ছিল স্যানফোর্ড সম্পর্কে তাদের ধারণা খুব মধুর নয়। এবং এই একটা সুযোগ; যাতে তাদের দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরে যায়। তাই তিনি বলেন, জো এলিমকে সন্দেহের বাইরে রাখা উচিত নয় কারণ রোজকে সে ভালোবাসত। বিয়ে করতে চেয়েছিল কিন্তু রোজ তাকে পাত্তা দিত না। তাকে প্রত্যাখ্যান করে স্যানফোর্ডকে ভালোবাসত। সুতরাং খুনের পেছনে ঈর্ষাই অন্যতম কারণ হতে পারে।
এরপর জো-এর পালা এল। জো কোথায় থাকে হেনরি জিজ্ঞেস করলেন। মিঃ ড্রেউইট জানালেন সে থাকে মিসেস বারলেটের বাড়িতে। খুব সৎ মহিলা, ধোবীখানার মালিক। জো তার কাছে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকে।