হেনরি চুপচাপ সব শুনল এবং বুঝল স্যানফোর্ডকেই তারা নিশ্চিত খুনি বলে ধরে নিয়েছে। তার মনে হল নব্য শহুরে যুবক গ্রামে খুব জনপ্রিয় নয় এবং তার ক্ষেত্রে গ্রাম্য সনাতন বিশ্বাসই কাজ করেছে। হেনরি জিজ্ঞেস করল, রোজের সন্তানসম্ভবার কারণ ছেলেটিই?
ড্রেট তখনই জবাব দিল, রোজ স্যানফোর্ডের সন্তানের মা হতে চলেছে, এই কথা তার বাবার কাছে স্বীকার করেছে। এবং আরও বলেছে স্যানফোর্ড তাকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
গ্রামের অবুঝ তরুণী, শহুরে নব্য প্রণয়ী, দৃঢ় চরিত্রের পিতা, সবই নাটকের মতে, এই নাটকে দরকার শুধু গ্রাম্য প্রেমিক। হেনরি ড্রেউইটকে জিজ্ঞাসা করল–এই গ্রামের মেয়েটির কোনো প্রণয়ী আছে নাকি?
ড্রেউইট তাকে বলল, তিনি জো এলিমের কথা বলছেন কিনা। এলিম ছেলেটি খুবই ভালো ছেলে, ছুতোর মিস্ত্রী। রোজ যদি জোকে ভালোবাসত তবে খুব ভালো হত। কারণ জো রোজকে খুবই ভালোবাসত। কিন্তু মেয়েটা একটা বাজে ছেলের পাল্লায় পড়ল। মেলচেটও ড্রেউইটের কথায় সায় দিল।
হেনরি মেলচেটকে জিজ্ঞাসা করল, জো মেরীর আত্মহত্যাকে কিভাবে গ্রহণ করেছে?
সেটা বলা তার খুব দুঃসাধ্য। জো ধীর-স্থির প্রকৃতির। যদিও মেরী জোকে ছেড়ে চলে গেছে তবুও তার মনে বিশ্বাস ছিল একদিন ঠিক মেরী তার কাছে আবার ফিরে আসবে। এত অটুট ছিল তার ভালোবাসা। ওর চোখে রোজ কোনো দোষী ছিল না।
হেনরি জো’কে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বললে মেলচেট উত্তরে বলেন–তা তারা তাকেও এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। আরও বলেন প্রথমে এমটক, তারপর স্যানফোর্ড এবং সবশেষে জো-এর পালা। এইভাবে এগোলে তার আপত্তির কারণ না থাকার কথা।
হেনরি, ড্রেউইট এবং মেলচেট এই তিনজন জন ব্লু-বোর সরাইখানার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সরাইখানাতেই টম এমটকের দেখা পাওয়া গেল। মধ্যবয়স্ক বিশাল চেহারার মানুষ। সন্দেহপ্রবণ ও কঠিন চোয়ালে বেশ রাগী প্রকৃতির মনে হল। তাদের দেখে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে ভেতরে নিয়ে বসাল। এবং তাদের খাদ্য বা পানীয় গ্রহণের অনুরোধ জানাল।
ভিতরে যেতেই টম এন্টক বলেন, তারা তার মেয়ের ব্যাপারে নিশ্চয় এসেছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, তার কন্যা রোজ খুব শান্ত প্রকৃতির মেয়ে ছিল। স্যানফোর্ডই তার মেয়েকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে তার জীবনের চরম সর্বনাশ ডেকে আনল। ছেলেটির জন্যই রোজ আত্মহত্যা করল শেষ পর্যন্ত। সে তাকে ছাড়বে না। কারণ তার পরিবারে কালি মাখিয়ে দিয়েছে সে।
টম এমটককে মেলচেট প্রশ্ন করে, তার মেয়ের এই পরিণতির জন্য সে স্যানফোর্ডকেই দায়ী করে কিনা।
টম উত্তেজিত হয়ে বলল, এই ঘরে বসেই তার মেয়ে বাবাকে সব খুলে বলেছে। হেনরি জিজ্ঞেস করেন, সব কথা শোনার পর তিনি কন্যাকে কি বলেছিলেন? আপনি কি তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন? হেনরি প্রশ্ন করেন।
এই ধরনের প্রশ্নের জন্য টম বোধহয় প্রস্তুত ছিল না। নিজেকে ধাতস্ত করে বলল, ঘটনাটা তার কাছে এতই আকস্মিক যে প্রথমে তার বিশ্বাস করতেই মন চাইছিল না। খুব বকাবকি করার পর রাগের মাথায় বলেছিল যে তার মতো মেয়ের মুখ দর্শন করাও উচিত নয়। তার মরণই শ্রেয়। মা হারানো মেয়েকে সত্যি সত্যি যেতে বলিনি।
তারপর গম্ভীর হয়ে জোরের সঙ্গে বলল, এই ধরনের অপরাধীর কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। মেলচেট প্রশ্ন করেন, মেয়েকে কখন তিনি শেষ দেখেছিলেন?
টমের উত্তর, গত পরশুদিন চা খাবার সময়।
মেলচেট প্রশ্ন করেন, সে সময় তিনি তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পান?
উত্তরে টম বলেন, তেমন অস্বাভাবিকতা তিনি দেখেননি। যদি তিনি জানতেন যে, তার মেয়ে এই পথ বেছে নেবেন বলে কেঁদে ফেলেন।
সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে মেলচেট বলেন,টম প্রচণ্ড রেগে রয়েছেন। স্যানফোর্ডকে বাগে পেলেই শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে। হেনরি বলেন, টমের মধ্যে শোকের বিশেষ লক্ষণ দেখা গেল না। ব্যাপারটা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক।
টমের বাড়ি থেকে বেরিয়ে, তারা হাজির হল স্যানফোর্ডের বাড়িতে। ড্রেউইট এবং মেলচেটের মুখে যে বর্ণনা শোনা গিয়েছিল, গিয়ে দেখলেন কোনো মিল নেই বর্ণনার সঙ্গে। লম্বাটে গড়ন, চব্বিশ-পঁচিশের কাছাকাছি বয়স। স্বপ্নালু নীল চোখ, ঝাকড়া ঝাকড়া চুল, এবং কণ্ঠস্বরটি খুব মোলায়েম। এই ধরনের পুরুষের প্রতি যে কোনো মেয়ের আকর্ষণ আসাটা প্রকৃতিগত ব্যাপার।
তাদের পরিচয় জানিয়ে তাদের আসার কারণ বর্ণনা করল। গত পরশু দিনের ঘটনার বিবরণ দিতে বলল, পুলিশি ভাবভঙ্গিতে এও জানাল এই ধরনের বিবৃতি দিতে সে অস্বীকার করতেও পারে। কিন্তু সে যা বলবে তার বিপক্ষে সাহায্য নেবার অধিকার পুলিশের আছে।
মেলচেটের কথা শুনে স্যানফোর্ড হকচকিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, তিনি কি বলছেন তা সে বুঝতে পারছে না।
মেলচেট তাকে প্রশ্ন করল, সে কি জানে যে রোজ এমটক নামে একটি মেয়ে গত পরশু রাতে জলে ডুবে মারা গেছে?
এতক্ষণে স্যানফোর্ড ব্যাপারটা বুঝতে পারল। সে স্বীকার করল ঘটনাটা শোনার পর থেকে রাতে ঘুমোত পারে না। কোনো কাজে মন বসাতে পারছে না। রোজ-এর শোচনীয় মৃত্যুর জন্য সে নিজেকে দায়ী করল। ডুকরে কেঁদে উঠে বলল, সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে, রোজ নিজেকে এইভাবে শেষ করে দেবে। কিন্তু কিছু পরে সে দুচোখ মেলে তাকাল।