ইতিমধ্যে মারপল ব্যাগ থেকে একটি নোটবই থেকে পাতা ছিঁড়ে পেনসিল দিয়ে একটি নাম লিখলেন এবং সেটিকে ভাজ করে তার হাতে দিলেন।
হেনরি কাগজ খুলে নাম পড়লেন যার নাম লেখা আছে তাকে তিনি চেনেনও না জানেনও না। সুতরাং আবার ভাজ করে সেটি পকেটে রাখলেন। পুরো ব্যাপারটা তার কাছে রহস্যময় লাগছে।
হেনরি মারপলকে বলেন, ম্যাডাম, এই ধরনের তদন্ত তিনি পুলিশ-জীবনে করেননি। যেহেতু তার অনুমানকে, তার বিচার-বিবেচনাকে উড়িয়ে দিতে পারছেন না, তাই তিনি এই তদন্তের দায়িত্ব নিলেন।
পরদিন সকালে তিনি স্থানীয় থানায় গেলেন এবং দেখলেন সেখানে উপস্থিত ইনসপেক্টর মিঃ ড্রেউইট এবং থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার মিঃ মেলচেট, দুজনে তাকে দেখে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল। মিঃ মেলচেট খুবই যোগ্য অফিসার। চালচলন পুরোটাই ফৌজি অফিসারের মতন। ইনসপেক্টর ড্রেউইটকে আগে থেকে চিনতেন তিনি। খুঁটিনাটি সমস্ত ব্যাপারে তার ছিল সতর্ক। দৃষ্টি। তিনি তাদের তার আসার কারণ জানালেন। কারণ শুনে তারা অত্যন্ত হকচকিয়ে গেল। তিনি তখন বললেন, তাদের স্থানীয় ব্যাপারে নাক গলানোটা খুব অন্যায় কিন্তু ঘটনাটা এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন নিজের অজান্তেই।
ড্রেউইট তখন বলেন, তার মতো একজন গুণী মানুষের সাহায্য পাবে জেনে তারা খুব আনন্দিত। মিঃ মেলচেটকে একটু চিন্তান্বিত দেখা গেল। যেন তিনি কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাকে সংশয়মুক্ত করতে হেনরি বলেন, ব্যানট্রিদের বাড়িতে গিয়ে বসে তার সময় কাটছিল না তাই সময় কাটাবার জন্য তাদের সঙ্গে তিনি ঘুরবেন এবং সময়ও ভালোই কেটে যাবে।
ড্রেউইট বলেন, কিন্তু একটা জলের মতো পরিষ্কার ব্যাপার ইংল্যান্ডের সবচেয়ে দামী মস্তিষ্ক, সাধারণ অনুসন্ধানে খরচ হবে।
মেলচেট ড্রেউইটের কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বলল, স্যার ঘটনাটি জলের মতো পরিষ্কার। মেয়েটি সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ায় খুবই বিপদে পড়েছিল। পুলিশ সার্জেন হেডক যিনি মৃতদেহ পরীক্ষা করেছিলেন তিনি মেয়েটির দুই বাহুতে জোড়ে চাপ দেবার চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন। তার ধারণা কেউ মেয়েটিকে জোরে চেপে ধরে নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল।
হেনরি প্রশ্ন করলেন, মেয়েটির চেহারা কেমন ছিল এবং তাকে ছুঁড়ে ফেলতে কতটা জোর খাটাতে হয়েছিল।
মিঃ মেলচেট বললেন, তার কিন্তু তা মনে হয়নি। মেয়েটিকে হঠাৎই আক্রমণ করা হয়েছিল। এবং সাঁকোটি কাঠের তৈরি। কাঠগুলি খুব পিছল। এবং সাঁকোর দুপাশে কোনো রেলিং ছিল না। তাই মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলতে খুব একটা শক্তির প্রয়োজন পড়েনি।
হেনরি প্রশ্ন করেন মেয়েটিকে কি সত্যিই সাঁকো থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এটাই কি তার বিশ্বাস?
মিঃ মেলচেট বলেন, এটাই তার স্থির বিশ্বাস। কারণ জিমি ব্রাউন নামে গ্রামের একটি ছেলে তখন নদীর অপর পারে উপস্থিত ছিল। সাঁকোর উপর থেকে সে আর্তনাদ শুনতে পায় এবং ঝপ করে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পেল। তাকিয়ে দেখে সাদা মতো একটি জিনিস নদীতে ভেসে যাচ্ছে। ছেলেটি গ্রামবাসীকে জড়ো করে মেয়েটিকে জল থেকে তুলল। কিন্তু যখন তাকে ভোলা হল তখন সব শেষ।
হেনরি মেলচেটকে প্রশ্ন করে, ছেলেটি কি তখন সাঁকোর উপর কাউকে দেখেছিল?
মেলচেট সঙ্গে সঙ্গে বলল, না সে কাউকে দেখতে পাইনি। কারণ জায়গাটা নির্জন এবং সন্ধ্যার অন্ধকারে কুয়াশা থাকায় সব কিছু দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু ছেলেটির ধারণা মেয়েটি ঝাঁপ দিয়েছিল এবং গ্রামের লোকেরাও তাই বিশ্বাস করেছিল।
এই সময় ড্রেউইট বলে উঠল, আমরা কিন্তু মেয়েটির পোশাকের পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ উদ্ধার করেছি। হেনরি মেলচেটের দিকে তাকাতেই সে বলল, যে কাগজটি পাওয়া গেছে তাতে শিল্পীরা যে ধরনের স্কেচ পেন ব্যবহার করে তা দিয়ে লেখা ছিল, ঠিক সাড়ে আটটায় সাঁকোতে তোমার সঙ্গে দেখা করব। নিচে নাম ছিল (আর.এস.)। আর.এস. স্যানফোর্ডের নামের আদ্যক্ষর। আর ঘটনাটি ঘটে ঠিক সাড়ে আটটায়।
হেনরি স্যানফোর্ডের সম্পর্কে জানতে চাইলে মেলচেট বলেন, কয়েক মাস হল সে এই গ্রামে এসেছে এবং নিজেকে একজন স্থপতি বলেই পরিচয় দেয়। এই গ্রামে অর্লিটনদের বাড়ি সে তৈরি করেছে। স্বভাবেও ছেলেটি ভালো নয়। আজকালকার আধুনিক ছেলেদের মতো। মেয়েটিকে স্যানফোর্ডই নষ্ট করেছে।
মিঃ হেনরি মৃদু হেসে বলেন মেলচেটকে, ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করাটা অপরাধ নিশ্চয়ই কিন্তু খুনের অভিযোগ বা ধর্ষণের অভিযোগের মধ্যে বিরাট তফাৎ।
মেলচেট বলল, সেটা অবশ্য সত্যি।
ড্রেউইট এতক্ষণ তাদের কথা শুনছিল। হঠাৎ বলে উঠল, তিনি যা তদন্ত করে জেনেছেন তাকে তা বলেছেন। প্রথমদিকে ছেলেটি রোজের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে। পরে ওর দুর্বলতার সুযোগ নেয়। এবং শেষে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে। অন্যদিকে লন্ডনে আবার একটি মেয়েকে স্যানফোর্ড বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছে। ওদের বাগদানও হয়ে গিয়েছিল। এদিকে রোজ সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ায় স্যানফোর্ড বিচলিত হয়ে পড়ে। রোজ তাকে বিয়ে করার জন্য কাকুতি-মিনতি করত। ওর হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য চিঠি পাঠিয়ে তাকে সাঁকোর উপর ডেকে পাঠায়। এবং সুযোগ বুঝে নদীতে ঠেলে ফেলে দেয়। এবং অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলে তার ধারণাই সত্যি।