মারপল বলেন, তিনি এসেছেন রোজ এমটকের ব্যাপারে। ঘটনাটি তিনি নিশ্চয় শুনেছেন। হেনরি বললেন, কর্নেল ব্যানট্রির মুখে আজ তিনি শুনেছেন। হেনরি চিন্তা করতে লাগলেন এমটকের আত্মহত্যার সঙ্গে মারপলের আসার কোনো কার্যকারণ আছে কিনা। এই পর্যন্ত বলে হেনরি চুপ করলেন। এবং উৎসাহ নিয়ে প্রত্যেকের দিকে তাকালেন।
হেনরি আবার শুরু করলেন, গম্ভীর মুখে মারপল তাকে বলেন, তিনি তার মূল্যবান সময় নষ্ট করলেও তিনি কোনো ঘটনা ঘটলেই তার কার্যকারণ খোঁজার চেষ্টা করেন এবং সে ব্যাপারে তিনি মোটামুটি সফল। তিনি মারপলকে অনুনয় করে বলেন তার আসার প্রকৃত কারণ বর্ণনা করতে।
তিনি তখন বলেন–তিনি যদি সাধারণভাবে থানায় জানান তবে ওরা উড়িয়ে দেবেন। এবং বিশ্বাস তার বক্তব্য তিনি গুরুত্ব সহকারে শুনবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
হেনরি মারপলকে আশ্বস্ত করে বলেন, তিনি তার প্রত্যেকটি কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনবেন এবং সাধ্যমতো তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন।
জানলা দিয়ে তাকিয়ে মারপল বলেন, রোজ এমটক আত্মহত্যা করেনি। ওকে খুন করা হয়েছে এবং কে বা কারা খুন করেছে তাও তিনি জানেন। এই অদ্ভুত সংবাদে হেনরি বিমূঢ় হয়ে মারপলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মনে হল কাল মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে সবাই বলেছে আর আজ তিনি বলছেন যে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে অনেক সময় লাগল তার।
হঠাৎ স্বস্তি পেয়ে হেনরি বলেন, তিনি একটি গুরুতর অভিযোগ করলেন কিন্তু।
উত্তরে মারপল বলেন, অভিযোগটি গুরুতর বলেই তিনি তার কাছে এসেছেন।
তখন হেনরি বললেন, এই ব্যাপারে তার আর কিছু করণীয় নেই। সেটা এখন পুলিশি তদন্তের পর্যায়ে চলে গেছে। তিনি বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। স্থানীয় পুলিশ এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে পারেন।
তখন মারপল বলেন, তার পক্ষে এখনই পুলিশের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়। তার কাছে অভিযোগ প্রমাণ করার যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
তখন হেনরি বলেন, তিনি কি অনুমানের উপর নির্ভর করে অভিযোগ করলেন।
মারপল তখন বলেন, অভিযোগটা শুধু অনুমান ভিত্তিক নয়। তিনি পুরো ব্যাপারটা চিন্তা করে বলেন যখন কোনো অংকের উত্তরটা এবং একটি সংখ্যা মিলে যায় তখন অন্য সংখ্যাটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তিনি যদি ইনসপেক্টর ড্রেউইটকে বলেন তার ধারণা অমুক ব্যক্তি এমটককে হত্যা করেছে তাকে গ্রেফতার করুন তবে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে উঠবে। তাকে দোষ দেওয়া যাবে না কারণ এই মুহূর্তে তিনি কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ দাখিল করতে পারবেন না। অনুভূতি এবং অপরাধীর চরিত্র বিশ্লেষণ করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তাও বুঝিয়ে বলা অসম্ভব। হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পর্কে শুধুমাত্র একটা ধারণাই কি যথেষ্ট?
মিস মারপল বলেন, তিনি একটা ব্যাপারে খুব আগ্রহী তা হল মানুষকে বোঝার চেষ্টা।
এত বছর এই গ্রামে থেকে প্রত্যেকের স্বভাব আচার-আচরণ খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনো ঘটনাই তার দৃষ্টি এড়াতে পারে না। তিনি হেনরিকে প্রশ্ন করেন, তার উপর আস্থা রাখতে পারবেন কি না? মারপলের কণ্ঠে প্রত্যয়ের সুর।
মারপলকে আশ্বস্ত করে হেনরি বলেন, তার মতামতের উপর হেনরির যথেষ্ট আস্থা আছে কিন্তু তিনি কি ধরনের সাহায্য আশা করছেন, তিনি বুঝতে পারছেন না।
মিস মারপল চুপ করে থেকে বলেন, যেহেতু তার সাক্ষ্য প্রমাণ নেই তাই এই ব্যাপার নিয়ে তিনি অনেক ভেবেছেন। পুলিশের পক্ষে অনুসন্ধান সম্ভব নয়। যদি তিনি অনুসন্ধান চালান তবে পুলিশ তার ব্যাপারে যেন কোনো অসুবিধা না করে বরঞ্চ ইনসপেক্টর ড্রেউইট বা মেলচেটের পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন।
কিছুক্ষণ ভেবে হেনরি মারপলকে বললেন, মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে এবং কে খুন করেছে তাও তিনি জানেন। এবং তিনি সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা খুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করবেন। কিন্তু তদন্ত শুরু করার আগে কিছু তথ্যের দরকার, সেই ব্যাপারে মারপল কি তাকে কোনো সাহায্য করতে পারবেন?
মিস মারপল তার দিকে তাকিয়ে বললেন, তিনি কোনো তথ্য দিতে পারবেন না। তবে একটা কাগজে খুনির নাম লিখে দেবেন। যাকে তিনি খুনি বলে ভেবেছেন। যদি অনুসন্ধান করে দেখা যায় তিনি প্রকৃত অপরাধী নন তবে পুরো ব্যাপারটা তিনি যেন ভুলে যান।
তিনি মনে করবেন তার অনুমান ভ্রান্ত। কিছুক্ষণ প্রায় অন্যমনস্ক থেকে বলেন, যদি একজন নিরপরাধ লোকের শাস্তি হয় এটা ভাবতেও তার শরীর শিউরে উঠছে। ব্যাপারটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা হবে।
হেনরি বলেন, তিনি বুঝতে পারছেন না, তিনি ঠিক কি বলতে চাইছেন। মিস মারপল তার কথা শুনে যখন মুখ ফেরালেন তখন তার মুখ দেখেই বোঝা গেল তিনি খুব বিচলিত এই প্রসঙ্গে।
তিনি পুনরায় বলেন, যদিও তার ভুল হতে পারে কিন্তু মিঃ ড্রেউইট একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিঃসন্দেহে। তবুও কোনো ভুল সূত্র তাকে ভুল পথে চালিত করতে পারে। এবং তার আরও সন্দেহ যে, বুদ্ধি বা পরিশ্রম খরচ করা উচিত আসল তথ্য বের করতে, তিনি ততটা পরিশ্রম করবেন কিনা সন্দেহ। কারণ সময় সময় এইসব ব্যাপার খুব বিপদজনক হয়ে ওঠে।
কয়েক মিনিট সময় লাগল তার কথার মর্ম বুঝতে। হেনরি বুঝলেন মিঃ ড্রেউইটের তদন্তের উপর তিনি আস্থা রাখতে পারছেন না। আরও ভয় পাচ্ছেন ইনসপেক্টর যদি ভুল পথে চালিত হয় তবে সে ক্ষেত্রে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন।