মিস মারপল নিজের কীর্তির কথা বলতে সংকোচ করছেন। মিঃ পেনডোর মিঃ পেথোরিকের উৎসাহে শেষ পর্যন্ত স্যার হেনরি গল্প শুরু করেন।
ঘটনাটা ঘটেছিল তার রিটায়ার করার কয়েক মাসের মধ্যেই, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কমিশনার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করার পর এই গ্রামে পুরানো বন্ধু কর্নেল ব্যানট্রির বাড়িতে অতিথি হয়ে যান। মিসেস ব্যানট্রিও হাসিখুশিতে ভরা প্রাণবন্ত মহিলা। খেলা, বেড়ানো এবং মিসেস ব্যানট্রির নিত্য নতুন রান্না খেয়ে সুখেই দিন কাটছিল। শহরের ব্যস্ত ভিড় কর্মচাঞ্চল্য আর অপরাধ জগত থেকে মুক্তি পেয়ে হাঁফ ছাড়লেন।
একদিন সকালে প্রাতঃরাশের টেবিলে দেখেন গৃহকর্তা এবং গিন্নী দুজনেই গম্ভীর। মিসেস ব্যানট্রি খাবার গুছিয়ে দিয়ে চলে গেলেন কিন্তু এলেন না। অন্যদিন আমরা টেবিলে অন্তত ঘণ্টাখানেক গল্প করতাম। কফি খেতে খেতে ব্যানট্রি বলেন, তিনি যেন কিছু মনে না করেন, তার স্ত্রী ডলির মন ভোর থেকে খুবই খারাপ।
হেনরি জিজ্ঞাসা করেন, তার মন খারাপের কারণ তিনি কি কোনো দুঃসংবাদ পেয়েছেন?
তখন কর্নেল বলেন, তাদের গ্রামে একটি মেয়ে জলে ডুবে মারা গেছে। তার স্ত্রী ডলি এই সংবাদে খুব ভেঙ্গে পড়েছে। মেয়েটিকে তার স্ত্রী খুব স্নেহ করতেন।
হেনরি প্রশ্ন করেন, মেয়েটি কিভাবে জলে ডুবেছে। উত্তরে কর্নেল বলেন, মেয়েটি হল স্টু বোর সরাইখানার মালিক এমটকের মেয়ে। শোনা যায় মেয়েটি জলে ডোবেনি ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
হেনরি তাকে জিজ্ঞেস করে, কেন সে আত্মহত্যা করল? কোথায় করল, কারণ সেখানে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার মতো কোনো বড় জলাশয় ছিল না।
দুঃখিত স্বরে কর্নেল বলল, নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোজ সন্তানসম্ভবা ছিল। পরিণতির কথা না ভেবে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল ছেলেটির কাছে। এটাই বোধহয় যৌবনের ধর্ম। তার স্ত্রী ডলির সঙ্গে এই ব্যাপারে বহু মতানৈক্য হয়। স্ত্রীর বক্তব্য এই অবস্থার জন্য শুধু পুরুষরাই দায়ী। কর্নেল স্ত্রীকে বোঝালেন উভয় পক্ষই দায়ী মেয়েটির লজ্জাকর পরিস্থিতির জন্য।
ছেলেটির পরিচয় জানতে পাওয়ায় কর্নেল বলেন, সে এই গ্রামের ছেলে নয় তবে সেখানে থাকে। নাম স্যান্ডফোর্ড। কিন্তু ছেলেটি অসৎ চরিত্রের নয়। কর্নেলকে হেনরি প্রশ্ন করেন, তারা কি নিশ্চিত যে, মেয়েটির পরিণতির জন্য দায়ী ছেলেটি? কর্নেল বলেন তিনি নিশ্চিত নন। কারণ দুজনের ঘনিষ্ঠতা ছিল, মেলামেশা ছিল। তাই পুরোটাই ছেলেটিকে অপরাধী ভাবা যায় না।
মানে ঘটনাটা গ্রাম্য গুজব। কারণ গ্রামে ঘটনা ঘটলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। গ্রামের লোক স্যান্ডফোর্ডকেই দোষী করছে। ছেলেটি মেয়েটির সর্বনাশের কারণ, ময়নাতদন্তে সবই বোঝা যাবে।
হেনরি প্রশ্ন করেন, ময়নাতদন্ত কেন? তিনি, বলেন মেয়েটি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তদন্ত হবেই। এবং তা দরকারই।
হেনরি বলেন, এই ধরনের ঘটনা আজকাল প্রতিদিন ঘটছে কারণ এখন ছেলেমেয়েরা বাধাবন্ধনহীন মেলামেশা করেন। শহরের ছেলেমেয়েদের কাছে এগুলি মামুলি ব্যাপার। কিন্তু মেয়েটি আত্মহত্যা না করে অন্যভাবেও ব্যাপারটা মেটাতে পারত।
কথার উত্তরে ব্যানট্রি বলে, মেয়েটির বাবা অত্যন্ত কড়া। এই ধরনের গুরুতর অন্যায় তার বাবা সহ্য করবেন না। তাই বাবার ক্ষমা না পাওয়ার আশংকায় নিজের জীবনকে বিসর্জন দেওয়াই শ্রেয় মনে করল।
মেয়েটি কোথায় ডুবেছে জানতে চাওয়ায় কর্নেল বললেন, গ্রামের কাছে যে কারখানাটি আছে তার কাছে নদীতে। নদীতে একটা কাঠের সাঁকো আছে। নির্জন ঘন জঙ্গলময় স্থান। প্রত্যেকের অনুমান সাঁকোর উপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছে।
মেয়েটিকে হেনরি চোখেই দেখেননি, কোনো দুঃখ না হলেও, যে কোনো অপরিণত মৃত্যুই শোকাবহ। বুঝলাম দম্পতিদের দুজনেই খুব আঘাত পেয়েছেন। তাদের বিরক্ত করা ঠিক হবে না ভেবে হেনরি খবরের কাগজটি নিয়ে বাইরের লনে চেয়ার নিয়ে বসলেন। এমন সময় বেয়ারা বলল, মিস মারপল দেখা করার উদ্দেশ্যে বসার ঘরে অপেক্ষা করছেন।
মিস মারপলের কথা হেনরি আগেই শুনেছিলেন। ধীর স্থির শান্ত প্রকৃতির, সাহস অসাধারণ, বুদ্ধিমতী। ব্যানট্রি দম্পতি এবং সেখানকার পুলিশ মহলও জানিয়েছে যে অনেক রহস্যময় অপরাধের জট এই শান্ত নিরীহ মহিলা অদ্ভুত অনায়াসেই খুলে ফেলেছেন। কিন্তু তার আসার কারণ বুঝতে পারলেন না।
সুন্দর প্রশান্ত মুখ। বুদ্ধিদীপ্ত চোখে কৌতুকের হাসি, হাতে বড় সজির ব্যাগ। তাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে অসময়ে এসে বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাইলেন। আসন গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়ে বললেন, তিনি তার জন্য কি করতে পারেন।
শান্ত গলায় মারপল বলেন, তার দেখা পেয়ে খুব উপকার হয়েছে। তিনি শুনেছেন তিনি ব্যানট্রিদের বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছেন। এবং হঠাৎ আগমনের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন। কিন্তু না এলেও উপায় ছিল না। বাধা দিয়ে হেনরি বলেন, তার বিব্রত হওয়ার কারণ অবান্তর। তার সাক্ষাৎ পেয়ে তিনি খুব আনন্দিত। আরও জানালেন মিসেস ব্যানট্রি এসময় ঘরে উপস্থিত নেই। মারপল বলেন, প্রয়োজনটা মিসেস ব্যানট্রির সঙ্গে নয় তার সঙ্গেই। তার সঙ্গে প্রয়োজনের কথা বলতেই সে একটু অবাক হল। প্রকৃত কারণ হেনরি জানতে চাইল।