জয়েসের রক্ত শুনে রেমণ্ড বলল–যদি এটাই গল্পের শেষ হয় তবে বলতে হবে, সেটা তার মনের কল্পনা।
সঙ্গে সঙ্গে জয়েস বলল-ঘটনার কয়েকদিন পর নতুন একটা খবর, আনার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু।
গ্রাম থেকে কিছু দূরে সমুদ্রের তীরের কাছে একটা জায়গায় ক্যাপ্টেন জেনিস জ্যাক্রের স্ত্রী স্নান করতে গিয়ে ডুবে যান। প্রথমে তারা ঠিক করেছিলেন সমুদ্রে স্নান করবেন। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য না গিয়ে গলফ খেলতে গেলেন। কিন্তু আকাশ পরিষ্কার হলে সে তার স্ত্রীকে নিয়ে সমুদ্রে গেল। অনেকক্ষণ ধরে ফিরছে না দেখে কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে স্ত্রীর খোঁজে বেরোল। কিন্তু কোন চিহ্ন খুঁজে পেল না। তিন চারদিন পর পেলেন মাছে ঠোকরানো স্ত্রীর মৃতদেহ। মাথায় ছিল গভীর ক্ষত। প্রথমে স্ত্রীকে চিনতে পারল না কিন্তু বিয়ের আংটি দেখে সনাক্ত করল। অনুমান করা হল ঝাঁপ দেবার সময় মাথায় আঘাত লেগে জ্ঞান হারিয়ে ভেসে যান।
হেনরি হাসতে হাসতে বলেন–এটি নিছক আদি ভৌতিক ব্যাপার। কিন্তু স্বভাবস্নিগ্ধ ভাবে কেশে বলেন, মাথার ক্ষতচিহ্নটি মামুলি নয়।
রেমণ্ড মন্তব্য করল, বদহজমের ফল এবং কাকতালীয়।
ডঃ পেনডার বলেন–বিশেষ কোনো সূত্র নেই যাতে রহস্য ভেদ করা যায়।
এরপর জয়েস আগ্রহ সহকারে মারপলের দিকে তাকাল। তিনি বললেন–এমন কিছু। পোশাক আছে তাতে কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে তা পুরুষের বোঝা অসম্ভব।
মারপলের মন্তব্য শুনে জয়েস বুঝতে পারল যে পিসি রহস্য ধরতে পেরেছে। কারণ ঘটনা শোনার পর আসল রহস্য বোঝা কঠিন হয়নি। কারণ ঝুল বারান্দা থেকে শুকোতে দেওয়া কাপড় থেকে জলমেশানো রক্ত বিন্দু। খুনীর অজান্তেই পোশাকে রক্তের দাগ লেগেছিল।
হেনরি মারপলকে বলে-পুরো ব্যাপারটা তার অন্ধকার লাগছে। তার মনে হল জয়েস এবং মারপল ব্যাপারটা বুঝেছে।
এরপর জয়েস শেষ পর্বটা বলা শুরু করল। আসল ঘটনা হল, জেনিস সব সময় সাদামাটা সরল চেহারার মহিলাকে বিয়ে করে স্ত্রীর নামে প্রচুর লাইফ-ইনস্যুরেন্স করত। স্ত্রীকে বেড়াতে নিয়ে আসত সমুদ্রের কাছাকাছি কোনো জায়গায়। ঘটনাস্থলে হাজির থাকত আসল স্ত্রী। তারপর স্নানের অজুহাতে জলের ভিতর খুন করে ভাসিয়ে দিত জলে আর হোটেলে ফিরত। নববধূর সঙ্গে ক্যারলের পোশাকের মিল থাকায় কেউ সন্দেহ করত না। তারপর জেনিস পেয়ে যেত ইনস্যুরেন্সের সব টাকা। এইভাবে তারা চালাত হত্যাকাণ্ড।
রেমন্ডের প্রশ্নের উত্তরে মারপল বলেন, মার্গারিক যখন খুন হয় ওদের অজান্তেই রক্ত ছিটকে এসে পোষাকের লাল রংয়ের সঙ্গে মিশে যায়। ওরা বুঝতে পারেন। তাই ফুটপাতের উপর রক্তের দাগ দেখা যায়।
মারপলের রহস্য ভেদের প্রখর বুদ্ধি দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন সকলে।
পরিশেষে ভালো গল্প শোনাবার জন্য জয়েসকে ধন্যবাদ দিল না শুধু, বলল-সময়মতো পুলিশকে খবর দিয়ে অনেক নিরীহ মেয়ের জীবনও রক্ষা করেছে।
পরের মঙ্গলবার মিঃ পেথোরিককে রহস্য গল্প শোনাবার অনুরোধ জানিয়ে সভা শেষ করল।
.
নীল খাম :
ঘটনার কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন বৃদ্ধ মানুষ। নাম সাইমন ক্লড। লন্ডনের অদূরবর্তী শহরতলীতে একটি প্রসাদোপম বাড়িতে বাস করেন।
ছোট্ট টিলার উপরে প্রাসাদ। বড় বড় গাছের বাগান প্রাচীর দিয়ে ঘেরা, চারপাশের দৃশ্য ছবির মতন।
বিত্তশালী লোক। সন্তান জন্মাবার সময়ে স্ত্রী মারা যায়। একমাত্র সন্তান প্রথম মহাযুদ্ধে নিহত হয়। পুত্রবধূও সন্তান জন্ম দেবার সময় মারা যায় সুতরাং নাতনিই একমাত্র বৃদ্ধের অন্ধের ষষ্ঠি।
কিন্তু দুঃখের কথা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে, ডাক্তারের সব চেষ্টাকে বিফল করে দিয়ে ক্রিস চলে গেল। ক্রিসের শোকে তিনি পাগলপারা। স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ল।
দুঃখ বোধহয় একা আসে না। কয়েক মাসের মধ্যে ক্লডের একমাত্র ভাই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। স্ত্রী আগেই মারা গেছে। গ্রেস, মেরী এবং ভাইপো জর্জকে নিয়ে এলেন তার শূন্য ঘরে।
কৈশোর অতিক্রম করে তারা যৌবনে পা দিল। কলেজের পড়াশুনা শেষ করে জর্জ ব্যাঙ্কে চাকরি নিল। কেমিস্ট্রির অধ্যাপক ফিলিপের সঙ্গে গ্রেসের বিয়ে হল। মেধাবী ছাত্র, দুজনে লন্ডনে তাদের বাড়িতে থাকত।
সাইমনের স্ত্রী হল মেরী। শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। গেরস্থালিতে মনোযোগী। মেয়েটির পরিচর্যায় ক্রিসের শোক ক্রমে ভুলতে বসল।
উইল সংক্রান্ত ব্যাপারে একদিন তাকে ডেকে পাঠাল সাইমন। তার অগাধ সম্পত্তি জর্জ মেরী ও গ্রেসের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। এরপর দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ ছিল না।
হঠাৎ একদিন সাইমনের ভাইপো জর্জের সাথে তার দেখা হল। এবং জর্জের মুখ থেকে জানতে পারলাম তার কাকা বর্তমানে প্রেতচর্চার বিষয়ে খুব আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। এবং ইউরিডিস নামে এক মহিলা জিডিয়াসকেও সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন।
জর্জের মুখ থেকে সব শোনার পর হাজির হলাম সাইমনের বাড়িতে। ইউরিডিসকে দেখেই ধারণা হল যে, তিনি একজন চতুর প্রতারক মহিলা। তিনি এবং তার স্বামীটিও পাকাঁপোক্তভাবে ঘাঁটি গেড়েছেন এই বাড়িতে। পতিপ্রবরটির নাম অ্যাবসালোম প্রাগ, পাতলা দুঃখী দুঃখী চেহারা। কিন্তু ছাই রঙের চোখে প্রচ্ছন্ন লোভ।
ইউরিডিসের প্রসঙ্গ তুলতেই সে বলল–তার মতো মহিলা পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করাই অসম্ভব। এত মহান যে তিনি-ক্রিসকেই দেখতে পাই না কিন্তু রোজ রাতে সেই সুরেলা গলা শোনেন। রোজ রাতে ক্রিসকে ডাকে ইউরিডিস। ক্রিস তাকে বলেছে সে প্রেতলোকে বাবা-মার সঙ্গে থাকে আর খুব আনন্দেই দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু একটা কথায় কাটা খচখচ করতে লাগল। যখন জানালাম ক্রিস বলেছে তার বাবা-মাও ইউরিডিস মাসিকে ভালোবাসে।