ইনসপেক্টর ব্যাজওয়ার্থের আসার কথা জেনে ঝড়বৃষ্টিতে সুবর্ণ সুযোগ বুঝে গুহা থেকে লঞ্চে সোনা এনে লরি করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠায়। টায়ারের দাগ স্পষ্ট করতেই লরিকে পেছন গেট দিয়ে বের করে তারপর চাকা যথাস্থান লাগিয়ে দেয়–যেন, সন্দেহ করে কেলডিনকেই।
মালী সাজা লোকটাকে যাতে সন্দেহ না হয় তাই খোঁড়ার সময় সামনে ছিল গোলাপ চারা। গর্তে সোনা রেখে চারাগুলি পোঁতা হয়। সুযোগ বুঝে পরে তুলবে। তার লোকেরাই হাত-পা বেঁধে তাকে গর্তে ফেলে দেয়।
রেমণ্ডের প্রশ্ন–লোকটা আসল মালী নয়?
উত্তরে মারপল বলল–সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মালীরা সোমবার কাজ করে না।
জয়েস হাসতে হাসতে বলল-প্রমাণ হল, ঘটনাটা বাস্তব বলে বর্ণনা করলেও রেমণ্ড কল্পনা জাগতের মানুষ।
হেনরি বলেন–রেমণ্ড তাদের চমকপ্রদ রহস্যজনক গল্প শুনালে, দ্বিতীয় চিত্রশিল্পীর গল্প শোনার প্রস্তাব দিয়ে সভা শেষ করল।
.
ফুটপাথে রক্তের দাগঃ–
মারপল চুল্লীর পাশে চেয়ারে বোনার সরঞ্জাম নিয়ে হেনরির সঙ্গে গল্প করছেন। পোড়া পাইনের মৃদু সৌরভ। জয়েসের উচ্চকিত স্বর, এবং হাসি শোনা যায়। পরিচারিকা চা নিয়ে প্রবেশ করল। জয়েস পরিবেশন করল। দেরিতে আসার জন্য মিঃ পেথোরিক ক্ষমতা চাইলেন উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল। চায়ের কাপ হাতে পেনডার লেমিপ্রিয়েরকে অনুরোধ করেন গল্প শুরু করতে।
ঘটনাটা যে গ্রামে ঘটে তার নাম রাদোল। ধীবর প্রধান গ্রাম। শান্ত, যেন শিল্পীর তুলির জলরঙের ল্যান্ডস্কেপ।
প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে পনেরো দিনের জন্য গেছিলাম ঐ গ্রামে। উঠেছিলাম পলবারুইথ আরমস পান্থশালায়। যেটি আশ্চর্যজনকভাবে রক্ষা পায় আর্মাডার যুদ্ধ জাহাজের কামান দাগা থেকে। শুধু দিক নির্দেশিকা নষ্ট হয়।
রেমণ্ডের মন্তব্য, ইতিহাস কি তাই বলে?
রাস্তা পর্যন্ত ছড়ানো ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলি জয়েস আঁকত।
একদিন রৌদ্রকরোজ্জ্বল সকালে একটা গাড়ি পান্থশালায় এসে দাঁড়াল। গাড়ি থেকে নামল একজন পুরুষ এবং উজ্জ্বল পোশাক পরিহিতা মহিলা। পান্থশালা পার হয়ে এগোলেন সমুদ্রের দিকে।
কিছুক্ষণ পরে অন্য গাড়ি থেকে নামলেন কমলা রংয়ের পোষাকে সজ্জিত এক মহিলা যিনি গাড়িটির চালক। মাথায় খড়ের টুপি তাতে বাঁধা ছিল হলুদ লাল ফিতে।
আগের গাড়িতে আসা ভদ্রলোক শব্দ শুনে তাকিয়ে আনন্দে চিৎকার করে বলেন–তুমি ক্যারল না? আরও বললেন, তার স্ত্রী তাকে দেখে খুব অবাক হবে। এই বলে উপরে উঠে এল।
সুপুরুষ লোকটি জেনিস। তারা বেড়ানো, সমুদ্র স্নান নিয়ে কথা বলছিল। পান্থশালার থেকে কিছুটা দূরত্বে একটা পাহাড়ের গুহা আছে যেখান থেকে পুরো অঞ্চল দেখা যায়। পরে স্থির হয় ক্যারল পদব্রজে এবং জেনিস মার্জারি বোটে করে গিয়ে সেখানে মিলিত হবে।
স্নানের পোশাক নিয়ে তারা বেরিয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পরে জয়েসও স্নানের পোশাক এবং খাবার-দাবার নিয়ে বেরোল।
স্নান সেরে টিনের খাবার ও কফি দিয়ে দুপুরের খাবার শেষ হল। অলস মহ্যাহ্নে গ্রামটি ঘুমিয়ে পড়েছে। সূর্য পশ্চিম গগনে; আঁকার উপযুক্ত পরিবেশ।
কিছুক্ষণ পর মুখ তুলতেই দেখা গেল একটি লোক পিলারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোদে পোড়া তামাটে চেহারা ও পোশাক দেখে মনে হল তার পেশা মাছধরা। লম্বা কালো দাড়ি, চওড়া কাঁধওলা টুপিতে যেন ছবির জলদস্যু।
স্থির করলাম তার ছবি আঁকার। তবে হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিল সে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকবে। আঁকা যখন প্রায় শেষ তখন দেখা গেল সে জয়েসের দিকে এগিয়ে আসছে। এবং বলল এই রদোল আকর্ষণীয় সুন্দর। ছবি আঁকার জন্য উপযুক্ত। তার নানা ঘটনা বলতে লাগল।
লোকটির বর্ণনা শুনে জয়েসের মনে হল তার চাউনি এবং বলার ভঙ্গিতে কোথাও যেন নিষ্ঠুরতার মানে লুকিয়ে আছে।
তার কথা শুনতে শুনতে আঁকতে লাগলাম। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম সূর্য রশ্মির বদলে একেছি রক্তের ছাপ। হঠাৎ রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ফুটপাথে লাল আভার পরিবর্তে রক্ত পড়ে রয়েছে। চোখ খুললেই দেখা যাচ্ছে রক্তের ছোপ। লোকটিকে জিজ্ঞেস করায় সে বলল, আজকাল রক্ত দেখা যায় না। কারণ ঘটনাটা কয়েকশো বছরের পুরানো।
সেই সময় রাস্তায় বেরিয়ে এলেন জেনিস। বিমূঢ় চোখে তাকিয়ে শুকনো জামাকাপড় তুলতে লাগলেন।
জেনিস কিছুটা এগিয়ে এসে দাড়িওলা ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করল তার সঙ্গী মহিলাটি ফিরেছেন কিনা? কিন্তু জানা গেল বহুক্ষণ আগেই তিনি ফিরে গেছেন। বহুক্ষণ হয়ে গেল তবুও সে ফিরল না। মনে হয় পাহাড়ের রাস্তা ছিল পিছল।
জেনিস তার স্ত্রীকে জানাল এখনও ক্যারল ফিরল না, তার কি করা উচিত। তারপর জেনিস বলল, তারা তার জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবে না। পেরিনদার-এ আজকের মধ্যে যেতে হবে।
কিছুক্ষণ পরে কালো দাড়িওয়ালা লোকটির গলা তার কানে এল। জিজ্ঞেস করল জয়েসকে যে, তিনি সত্যিই রাস্তায় রক্তের দাগ দেখেছেন কিনা? যদি সত্যিই দেখেন তবে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই কোনো জায়গায় রক্তপাত বা খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। লোকটি আরও বলল, এখানকার গীর্জায় একজন ব্যক্তির মৃত্যুর বর্ণনা আছে।
কিছুক্ষণ পরে জয়েস দেখতে পেল ক্যারল নামে ভদ্রমহিলাটি ফিরে আসছে কিন্তু মনে হল যেন উনি রক্ত মেখে আসছেন।