মেঘ কেটে ঝঝকে নীল আকাশ। সমুদ্রে বেড়াতে যাবার ইচ্ছা জাগল। গ্রাম থেকে আসা স্ত্রীলোক প্রাতঃরাশের টেবিল সাজাল।
সকালে নিউম্যানের খোঁজ করে জানা গেল, সে সকালেই বেড়িয়েছে।
কথাটা শুনেই ছুটলাম শোবার ঘরের দিকে। গিয়ে দেখলাম গতকালের নিউম্যানের পোশাক নেই। সম্ভবত কাল রাত্রে উনি বেরিয়েছেন।
আশংকায় মন দৃঢ় হল। বলেছিলেন ঝড় থামলে বেরোবেন। না ফেরার কারণ হিসেবে মনে হল পাহাড় থেকে পড়া বা কোনো দুর্ঘটনা।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিছু লোক জোগাড় করে বেরিয়ে নিউম্যানের খোঁজে চূড়া থেকে নেমে সমুদ্রতীরে তন্নতন্ন করে খোঁজা হল। কিন্তু কোথাও তাকে না পেয়ে ব্যাজওয়ার্থের শরণাপন্ন হলাম।
সব শুনে বললেন–নিশ্চয় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ সন্দেহজনক অপরাধী লোক প্রচুর রয়েছে। থ্রি-অ্যাসকোরের মালিকের সঙ্গে আলাপের কথা জানালাম। ব্যাজওয়ার্থ বলল-গুণ্ডামী এবং মারদাঙ্গার অভিযোগে সে জেল খেটেছে।
কেলডিনদের ধারণা বিদেশী হয়েও ওদের ব্যাপারে সে নাক গলাচ্ছে। ব্যাজওয়ার্থ যোগ দিল তল্লাশীতে। নতুন উদ্যোগে খোঁজা শুরু হল। বিকেলে সন্ধান পাওয়া গেল। বাগানে গভীর খাদে পড়েছিল। মুখ, হাত-পা শক্ত করে বাঁধা, যাতে আওয়াজ না করতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ বন্দী থাকায় প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছে। কিছুক্ষণ পরে সুস্থ হয়ে আমাকে এবং ব্যাজওয়ার্থকে সব বলল।
বলল–ঝড়জল থামলে বেড়াতে বেরিয়ে ভালোই লাগছিল। হাঁটতে হাঁটতে সে সমুদ্রতীরে পাহাড়ের গায়ে যে গুহা আছে যা চোরাচালানকারীদের গুহা বলে পরিচিত সেখানে চলে আসে।
হঠাৎ জ্বলা-নেভা আলো দেখে এগিয়ে দেখতে পেল কিছু লোক মোটর বোট থেকে ভারী জিনিস তুলে গুহার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কৌতূহলী হয়ে একটু বেশি এগোতেই কেউ একজন তাকে দেখে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীদের সতর্ক করে দেয়। ওরা আসছে বুঝতে পেরে নিউম্যান পালাতে গেলে শক্ত দুটো হাত ওকে ধরে ফেলে। প্রচণ্ড আঘাতে সে জ্ঞান হারায়। জ্ঞান ফিরলে দেখল সে লরির ভিতর বন্দী। লরির গতিবিধি দেখে বুঝল লরিটা ওর বাড়ির গেটে ঢুকছে। কিছু দূর গিয়ে ওরা একটা গভীর খাদে তাকে ফেলে দিল।
সঠিক তথ্য দিতে না পারলেও মনে হল তারা কর্নিল প্রদেশীয় নাবিক। তারা কিন্তু তাকে ভালোই চেনে।
বিবরণ শুনে ব্যাজওয়ার্থ বলেন–সোনাগুলি চোরাই। কিন্তু সোনার সন্ধানে বেরোলে বুঝতে পারি সোনা স্থানান্তরিত হচ্ছে। এবং সম্ভবত এই জায়গা থেকে সোনা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
লোকজন নিয়ে ইনসপেক্টর সেই গুহায় গেল। প্রমাণও পেল সোনা রাখার, কিন্তু সন্ধান পেল না কারণ বোঝা গেল দূরতম দ্বীপে বা গুহায় তা সরিয়ে ফেলেছে।
ব্যাজওয়ার্থের একটা ক্ষীণ সূত্র মিলল। গুহার পাশে চাকার দাগ এবং দাগটা নিউম্যানের বাড়ি পর্যন্ত গেছে। এবং লরিটা পেছনের গেট দিয়ে বেরিয়েছে। নিউম্যান ছাড়া কেলডিনের একটি লরি আছে।
তরুণ বয়সে কেলডিন ডুবুরি ছিল জানতে পেরে অনুমান করল সেই চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। সোনা তুলতে কেলডিনের মতো ডুবুরিই দরকার।
ধারণা বদ্ধমূল করতে তারা হাজির হল গ্যারাজে। তন্নতন্ন করে খুঁজে হঠাৎ উল্লসিত হয়ে পড়ল। বলল–যে ভাঙ্গা টায়ারের দাগ মিলেছে, এটি সেই টায়ার। ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সোনার হদিশ মিলবে।
রেমণ্ড সবাইকে জিজ্ঞেস করল তারা কি কিছু অনুমান করতে পেরেছে? কারা পাচারকারী?
জয়েস অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করল, সোনা কি পাওয়া গেছে?
রেমণ্ড বলল, সোনা মেলেনি এবং কেলডিনকেও গ্রেফতার করা যায়নি। নির্দোষিতা প্রমাণের পক্ষে দুটি সাক্ষ্যই যথেষ্ট।
প্রথম প্রমাণ একজন নার্স। যিনি রাতের ডিউটিতে সারারাত বসেছিলেন জানালার ধারে। তিনি কোনো গাড়িকে বের হতে দেখেননি।
দ্বিতীয় হল, মহিলা শিল্পী স্বয়ং কোমরের ব্যথা বাড়ায় সে রাত্রে যন্ত্রণায় ঘুমোতে পারেনি।
রেমণ্ড বলল, টায়ারের ব্যাপার ছাড়া আর কোনো প্রমাণ কেলডিনের বিরুদ্ধে ছিল না।
হেনরি বলেন–ঘটনাটা সে আগাগোড়া জানে কারণ সেই সময় তিনি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে ছিলেন। রহস্য প্রকাশ এখন নয়।
রেমণ্ড মারপলকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বন্ধু নির্বাচনে তার সতর্ক হওয়া উচিত; যে সবকিছু সহজেই বিশ্বাস করে তাই ঠকে যায়।
মিঃ হেনরি মারপলকে বলেন–তিনি নিউম্যানের আসল রূপটা ধরে ফেলেছেন। কি করে সম্ভব হল।
নিউম্যানের অতীত জীবন অন্ধকারময়। ডুবে যাওয়া ওটারনাটো জাহাজের সোনা চুরির পাণ্ডা সে। কারণ সোনাগুলির বেশির ভাগ মেলে পল হাউসের বাগানে।
জাহাজ উদ্ধারের নামে পুরানো কোম্পানিটা কিনে লোকজন লঞ্চ ডুবুরি এনেছিল নির্জন জায়গায়। পল হাউস কিনে ঘাটি গেড়ে বসে। যেন, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালানোর কায়দায়। শুধু ছিল সাক্ষীর প্রয়োজন।
যখন জানতে পারল রেমণ্ড যোড়শ শতাব্দীর পটভূমিকায় উপন্যাস লিখতে বইয়ের সন্ধান করছিল, তখন মতলবটা তার মাথায় আসে। জাহাজ ডোবা নিয়ে রোমাঞ্চকর গল্প বানিয়ে পল হাউসে, তাকে নিমন্ত্রণ করল। গল্পের আসল উদ্দেশ্য ছিল ওটারনাটো থেকে সোনা অপহরণ।
খ্যাতনামা সাহিত্যিক হওয়ায় রেমণ্ডের সাক্ষ্য অত্যন্ত দামী ছিল, এবং পুলিশ যাতে তাকে সন্দেহ না করতে পারে সেইজন্য কেলডিনকে সামনে রাখে।
জয়েস, লরির চাকার প্রসঙ্গ তুলতেই মারপল বলেন–নিউম্যানের লোকেরাই কেলডিনের লরির চাকা খুলে তার লরিতে লাগিয়েছিল। ডুবুরি দিয়ে সোনা তুলে দুর্গম গুহায় রাখছিল।