- বইয়ের নামঃ টুয়েস ডে ক্লাব মার্ডার
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী
টুয়েস ডে ক্লাব মার্ডার
১. রেমণ্ড ওয়েস্ট
টুয়েস ডে ক্লাব মার্ডার (মিস মারপল)
রেমণ্ড ওয়েস্ট একরাশ সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে, নিজের ভেতর মগ্ন হয়ে কথাটা উচ্চারণ করল। চোখে মুখে একটা আত্মতৃপ্তি ফুটে উঠল। অনুদঘাটিত রহস্যাবলী কথাটি আবার উচ্চারণ করে তৃপ্তি সহকারে ঘরের চারদিকটা দেখে নিল।
প্রাচীন ঘর। পুরানো ঐতিহ্যের সাক্ষী বিশাল কড়িবরগাগুলি। আবসুল কাঠের কারুকার্য করা আসবাবপত্রগুলো প্রাচীনতার সঙ্গে খাপ খেয়ে গেছে। বাইরে ঝরছে ঝির ঝির করে তুষার, আর ভেতরে বিরাট ফায়ার প্লেসের উষ্ণ আমেজ। রেমণ্ড একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক। এই ধরনের ত্রুটিহীনতাই তার পছন্দ। পিসিমা জেন-এর প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত বাড়ি, ব্যক্তিত্বপূর্ণ চারিত্রিক দৃঢ়তা, সব কিছুর মধ্যে মাধুর্যতা আর লেখকমনের সন্তুষ্টি।
চুল্লীর পাশে বিশাল আরামকেদারায় বসে আছেন পিসিমা মিস জেন মারপল। কালো ব্রোকেডের পোশাক পরিহিতা। উর্ধাঙ্গে মেকলিন লেম, তুষার শুভ্র চুল ঢাকা পরেছে সূক্ষ্ম কাজের লেমের টুপিতে। সাদা পশমের পোশাক বুনছিলেন। আবছা নীল চোখ, স্নেহভরা দৃষ্টি, মুখে মৃদু হাসি। প্রশান্তির দৃষ্টি নিয়ে তাকালো ভাইপো এবং অতিথিদের দিকে।
রেমণ্ড একজন স্ফুর্তিবাজ আত্মসচেতন যুবক। পাশে জয়েস লেমপ্রিয়ের। জয়েস একজন চিত্র-শিল্পী। মরাল গ্রীবা, ছোট করে ছাঁটা রেশম কালো চুল, হালকা সবুজ চোখ, ধারালো নাকে-মুখে খুব আকর্ষণীয়া। তার দৃষ্টি পড়ল স্যার হেনরি ক্লিারিং নামে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ভদ্রলোকের দিকে। তাছাড়া আছেন সৌম্য বৃদ্ধ যাজক ডাঃ পেনডার, আইনজীবী মিঃ পেথোরিক।
অনুদঘাটিত রহস্য না যেন কি বললে রেমণ্ড? ওটা কি ব্যাপার? অভ্যাসমতো কেশে গলা পরিষ্কার করে কথাগুলো বললেন।
আমার মনে হয় ওসব কিছু নয়। গুরুগম্ভীর রাশভারী শব্দ রেমণ্ডের পছন্দ। হয়তো কোনো মানেই নেই। বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল তেমপ্রিয়ের। ভ্রু-কুঁচকে কপট ভঙ্গীতে তাকাল রেমণ্ড।
জয়েস চাউনি দেখে শব্দ করে হেসে বলল–আচ্ছা পিসি, রেমণ্ডের কথার কি মাথামুণ্ড আছে? আপনি সব জানেন?
জেন মারপল মৃদু হাসলেন। কিন্তু উত্তর দিলেন না।
যাজক মহাশয় শূন্যের দিকে গম্ভীরভাবে তাকিয়ে বললেন–মানবজীবনটাই অজানা অনুদঘাটিত রহস্য।
রেমণ্ড অধৈৰ্য্য হয়ে বিরক্ত সহকারে সিগারেটটা ছাইদানিতে রেখে বললেন, আমি যেটা বলতে চাই সেটা অন্য ব্যাপার। দার্শনিক কথাবার্তা নয়। আমার বক্তব্য হল কিছু ঘটনা, যা সত্য, প্রকৃতই ঘটেছে এবং যার কোনো ব্যাখ্যা কেউ করতে পারেনি।
মিস মারপল বললেন, তুমি যা ববাঝাতে চাইছ; সেরকম ঘটনাও আমি জানি। মিসেস ক্যারুদারসের একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। তিনি এলিঘটের দোকান থেকে দুটো গলদা চিংড়ি কিনলেন। দুটো দোকান ঘুরে যখন বাড়ি ফিরলেন দেখলেন মাছ দুটো উধাও। কোথাও খুঁজে না পেয়ে আবার দোকানে ফিরে গেলেন। না ওখানে ফেলে আসনেনি, গেল কোথায়? আমার তো বেশ আশ্চর্য মনে হচ্ছে।
স্যার হেনরি মন্তব্য করলেন, ঘটনাটা জোলো এবং একদম সাধারণ। অবশ্য এ ব্যাপারে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীতে অনেক ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। মিস মারপলের গাল উত্তেজনায় লাল হল। যেমন ধরা যাক, কেউ…।
রেমণ্ড মজা পাওয়ার ভঙ্গীতে, পিসি আমি এইসব গ্রাম্য ঘটনায় যাচ্ছি না। বলছি সত্যি খুন বা নিরুদ্দেশের কিনারা না হওয়া ঘটনাগুলি। স্যার হেনরি যদি জানেন এবং হাতে সময় থাকে তবে অনুদঘাটিত ঘটনার কয়েকটা কথা বলুন। উল্লেখ্য স্যার হেনরি কিছুদিন আগেও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কমিশনার ছিলেন।
স্যার হেনরি বিনীতভাবে বললেন, নিছক গালগল্প আমি ভালো বলতে পারি না।
জয়েস বলল, আমার মনে হয় অনেক খুন বা রহস্য আছে যা পুলিশ এখনও কিনারা করতে পারেনি।
পেশাগত গাম্ভীর্যে মিঃ পেথোরিক বলেন, এটা একটি স্বীকৃত সত্য। ভাবতে আশ্চর্য লাগে রহস্যের জট ছাড়াতে যে ধরনের কল্পনাপ্রবণ বুদ্ধি বা চাতুর্যতা দরকার তার খুবই অভাব পুলিশের রেমণ্ড মন্তব্য করল।
তিক্ত কণ্ঠে স্যার হেনরি বলেন–আমি মানি না। এগুলো একান্তভাবে অজ্ঞ মানুষের ধারণা।
হাসতে হাসতে জয়েস বলল–তাহলে এসব বিচারের জন্য কমিটি বসাতে হয়। দর্শক কল্পনা এগুলো লেখকদের একচেটিয়া সম্পত্তি। মাথা ঝুঁকিয়ে রেমণ্ডের প্রতি কপট শ্রদ্ধা জানাল জয়েস।
রেমন্ড গম্ভীর হয়ে ফায়ার প্লেস থেকে জ্বলন্ত কাঠ তুলে সিগারেট ধরিয়ে বলল, লেখককে মানুষের প্রকৃতির ভেতরটা জেনে লিখতে হয়। ফলে এক ধরনের অন্তদৃষ্টি জন্মায়। সাধারণ লোকে যা লক্ষ্য করতে পারে না, যেমন কোনো ব্যক্তির অভিসন্ধি
মারপল স্নেহের দৃষ্টিতে বললেন, সোনা জানি তোমার বইগুলো বিদগ্ধ। তোমার চরিত্রগুলি সত্যিই অতটা খারাপ?
শান্তভাবে রেমণ্ড বলে–পিসিমণি জগৎ ও মানুষের প্রতি তোমার বিশ্বাস আমি ভাঙতে চাই না।
মিস মারপল ভুরু দুটো কুঁচকে পশম বোনার ঘরগুলো মিশিয়ে বললেন, লোকগুলো সবাই খুব ভালো বা খুব খারাপ নয়, ভালো-মন্দ মিশিয়ে।
মিঃ পেথোরিক খুক খুক করে কেশে রেমণ্ডকে বলেন, আচ্ছা, তোমার কি মনে হয় না–তুমি কল্পনা ব্যাপারটাতে বেশি জোর দিচ্ছ? আমরা আইনজীবীরা ভালোই বুঝি কল্পনা কতটা সাংঘাতিক। সত্যি বলতে কী, এটা জানতে হলে তোমাকে নিরপেক্ষভাবে সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে হবে। বিচার বিবেচনা করে সত্যটা বের করতে হবে। এটাই তো বিচারের যুক্তিপূর্ণ পদ্ধতি। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এই পথেই সত্য প্রমাণিত হয়।