-কে বলেছে একথা? কাকে দেখে ভয় পাবো?
–তখন সিঁড়ি দিয়ে যারা উঠে আসছিলেন, তাদের কাউকে দেখে?
–অসম্ভব। আমি ওঁদের দেখে ভয় পাবো কেন? তবে একটা কথা আপনাকে বলতে পারি। আমাদের জীবনটাই এমন, ভক্ত দর্শকদের কাছ থেকে আমাদের দিনের পর দিন একই ধরনের কথা শুনতে হয়। মুখে হাসি ফুটিয়ে সেই সব কথা শোনার চেষ্টাও করি। কিন্তু সব সময়, সব অবস্থায় সেটা বেশিক্ষণ সহ্য করা যায় না। তাই সে সময় আমরা মাঝে মাঝে কিছুই শুনি-না, কিছুই দেখি না, মনকে সম্পূর্ণ শূন্য করে দিই, নাহলে সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়বো। সেরকমই কিছু হয়তো ঘটেছিল সেদিন, তাই না জ্যাসন?
-হ্যাঁ ডারলিং, তুমি অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলে, আমি তোমাকে সচকিত করার জন্য মৃদু ধাক্কা দিয়েছিলাম, তারপরেই তোমাদের দুজনকে পানীয়ের গ্লাস দেওয়া হয়।
–মিঃ হাড, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আপনার স্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ে চিন্তিত হবার যথেষ্ট কারণ আছে? ওঁর জীবনের ওপর একবার আক্রমণের চেষ্টা হয়েছে, ভয় দেখানো চিঠি এসেছে বেশ কয়েকটি। এতে কি এটাই মনে হয় না, যে এমন কেউ সেদিন মেলায় এসেছিল, হয়তো এখনও এ বাড়িতেই আছে, আপনাদের খুবই পরিচিত কোনোও মানুষ, সেই অপরাধী হতে পারে? কাজেই ওনার নিরাপত্তার জন্যই সবকিছু জানা দরকার আমার।
স্ত্রীর দিকে ফিরে বললেন জ্যাসন হাড,-শুনলে তো ইনসপেক্টর কি বললেন? দোহাই তোমার মেরিনা, এমন যদি কোনো কথা থাকে, যা আমি জানি না, অথচ তুমি জানো, সেটা এখন প্রকাশ করে দাও।
প্রায় কান্নার মতো শোনালো মেরিনার কথাগুলি।
-কিন্তু সত্যিই আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। বিশ্বাস করো আমাকে।
–সেদিন আপনি ভয় পেয়েছিলেন?
–আমি কাউকে ভয় পাই না।
-শুনুন মিস গ্রেগ। সিঁড়ি দিয়ে তখন আপনার দুজন পুরোনো বন্ধু উঠছিলেন, যাঁদের দেখে আপনি খুব অবাক হয়েছিলেন। এঁদের সঙ্গে বহুদিন যোগাযোগ ছিল না আপনার। আমি মিঃ ফেন ও মিস লোলা ব্রিডস্টার-এর কথা বলছি। আপনি জানতেন না ওঁরা আসবেন, তাই না?
-না, ওঁরা যে আমেরিকা থেকে ইংলন্ডে এসেছেন, সেকথাই জানতাম না আমরা। জ্যাসন হাড বললেন।
মেরিনা বললেন, কিন্তু আমি ওঁদের দেখে আনন্দিত।
-লোলা ব্রিডস্টার আপনার তৃতীয় স্বামী রবার্ট ট্রাসকট-এর প্রথমা স্ত্রী ছিলেন, তাই না? এবার অসহিষ্ণু হলেন মেরিনা।
–ওঃ! সেকথা সবাই জানে। ওটা আপনি আবিষ্কার করেছেন বলে মনে করবেন না। সে সময় ব্যাপারটা নিয়ে একটু হট্টগোল হয়েছিল ঠিকই, তবে এর কোনোও রেশ থেকে যায়নি।
–মিস লোলা কি তখন আপনাকে ভয় দেখিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, কিন্তু এ ধরনের ভীতিপ্রদর্শনকে কেউ গুরুত্ব দেয় না। একটা পার্টিতে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল বটে। যদি লোলার হাতে তখন পিস্তল থাকতো, হয়তো আমায় গুলি করেই দিত, তবে সৌভাগ্যক্রমে সেটা ছিল না। এ সবই ঘটেছিল বহুবছর আগে। এই ধরনের ভাবাবেগগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তাই না জ্যাসন।
-হ্যাঁ, মেরিনার কথার মধ্যে সত্যতা আছে ইনসপেক্টর। তবে আমি আপনাকে বলতে পারি, সেদিন আমার স্ত্রী-র পানীয়ে বিষ মেশানোর কোনোও সুযোগই ছিল না। আমি লোলা ব্রিডস্টার-এর প্রায় সবসময়ই কাছেই ছিলাম। আর, এতবছর পরে ইংলন্ডে এসে লোলা আমার স্ত্রীকে খুন করতে উদ্যত হবে, এটা পুরোপুরি কল্পনা। এছাড়া মেরিনার গ্লাসের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগই পায়নি সে।
আর মিঃ ফেন?
-সে আমার এবং জ্যাসনের অনেকদিনের বন্ধু। বিশেষ করে আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন ছিল। তাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই আমার। ওঁকে দেখে আমি যেমন বিস্মিত, তেমনি আনন্দিত হয়েছিলাম। আমেরিকার টেলিভিশন জগতে এখন তিনি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের আসন অর্জন করেছেন।
–ধন্যবাদ মিস গ্রেগ। পরে যদি কখনো মনে হয় আমাকে বিশ্বাস করে আরো কিছু কথা বলতে চান, তবে তা করতে দ্বিধা করবেন না।
২. নিজের ছোটো বাগান
নিজের ছোটো বাগানটির একমনে পরিচর্যা করছিলেন মিসেস ব্যান্ট্রি। কাজ শেষ করে পরিতৃপ্ত হয়ে উঠে দাঁড়াতেই দেখলেন বাগানের সীমানার বাইরে রাস্তার পাবলিক টেলিফোন বুথ থেকে বেরিয়ে আসছে জ্যাসন ও মেরিনার সেক্রেটারি এলা।
তার লজ-এর পাশ দিয়ে যাবার সময় এলাকে ডেকে সুপ্রভাত জানালেন মিসেস ব্র্যান্ট্রি। বেশ চমকে উঠলো এলা।
ওঃ সুপ্রভাত। আমি একটু ফোন করতে গিয়েছিলাম, আমাদের ফোনটা আবার বিকল হয়েছে।
-সত্যিই ব্যাপারটা খুব বিরক্তিকর। তোমার যখনই দরকার হবে আমার ফোনটা ব্যবহার করতে পারো।
–ধন্যবাদ। বলেই হেঁচে ফেললো এলা।
–তোমার কি হে-ফিভার হয়েছে? আমার কাছে ভালো ওষুধ আছে।
-না না, আমার এটা প্রায়ই হয়। অ্যাটমাইজার-এর মধ্যে ওষুধ টেনে নিই আমি। ধন্যবাদ আপনাকে।
চলে যাবার পথে আরও বেশ কয়েকবার হাঁচলো সে।
কয়েক মুহূর্ত ভাবলেন মিসেস ব্যান্ট্রি; তারপর কৌতূহল দমন করতে না পেরে গসিংটন হল-এ ফোন করে জেনে নিলেন ওখানকার ফোন ঠিকই আছে। একান্তে কারো সঙ্গে কথা বলার জন্য এসেছিল এলা, মিথ্যে বলছে তাকে। বান্ধবী জেন মারপলকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে কথাটা জানিয়ে দিলেন তিনি।
কথা বলতে সব থেকে আগ্রহী বলে মনে হলো ডোনাল্ড ম্যাকলিনকে। এই সাংবাদিকটি সেদিন গসিংটন-হল এর পার্টিতে উপস্থিত ছিল।