- বইয়ের নামঃ দি মিরর মিস্ট্রি
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী
দি মিরর মিস্ট্রি
১. মিসেস ভ্যান রাইডক
দি মিরর মিষ্ট্রি (মিস মার্পল ধারাবাহিক) – আগাথা ক্রিস্টি
০১.
মিসেস ভ্যান রাইডক আয়নার কাছ থেকে সরে এসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে জেন মারপলের কাছ থেকে তার পোষাকটা সম্বন্ধে জানতে চাইলেন। মিস মারপল ভালো করে দেখে নিয়ে গাউনটির খুব প্রশংসা করলো। আবার মিসেস রাইডক লম্বা নিঃশ্বাস ফেললেন এবং তার বয়স্কা পরিচারিকা স্টেফানিকে সেটি খুলে নেওয়ার জন্য আদেশ জানালেন।
স্বল্পবাসে আচ্ছাদিত মিসেস রাইডক আয়নার সামনে দাঁড়ালেন। পরিমিত প্রসাধন ও পরিচর্যার জন্য তাঁর শরীরে এখনও লাবণ্যের রেশ মুছে যায়নি। সর্বাঙ্গে সযত্ন প্রয়াস সুস্পষ্ট।
রুথ ভ্যান রাইডক জেনকে কৌতুকের সুরে জিজ্ঞাসা করলেন, তারা যে সমবয়সী একথা কি প্রকাশ পায়?
মিস মারপলের বিস্মিত হয়ে তার মনের কথা জানালেন, তিনি কোনোমতেই তার বয়সকে এক মুহূর্তের জন্যও লুকিয়ে রাখতে পারেন না।
মিস মারপল মাথার কেশ শুভ্র। মুখের গোলাপি চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে। চোখ দেখলেই তার মনের নির্মল ভাবের কথা কারুর অবিদিত থাকে না। মিসেস রাইডকের সঙ্গে এখানেই তার ব্যতিক্রম।
মিসেস রাইডক জেনের সঙ্গে একমত হলেন। সোফার ওপর সমস্ত দেহের ভার ছেড়ে বসে তিনি স্টেফানিকে বিদায় দিলেন। স্টেফানি পোষাকটা নিয়ে বেরিয়ে গেল। স্টেফানি রাইডকের তিরিশ বছরের সঙ্গী। রাইডকের অতীতের চেহারা সম্বন্ধে সে-ই একমাত্র সাক্ষী। রাইডক জেনকে জানালেন যে তার সঙ্গে রাইডকের কিছু কথা আছে। জেন রাইডকের প্রতি মনোযোগ দিলেন। রাইডক জানালেন তিনি লুইজির সম্বন্ধে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
মিস মারপলের মন অতীতে পাড়ি দিল। ফ্লোরেন্সের বোর্ডিংবাড়ি। দুই মার্কিন প্রাণবন্ত মেয়ে। আকর্ষণীয় ব্যবহার। রুথ লম্বা আগ্রহী মেজাজী। ক্যারি লুইজি ছোট্টখাট্টো সাদাসিধে স্বপ্নালু। লুইজির সঙ্গে জেনের বহুদিন দেখা হয়নি। তাহলেও ক্রীসমাসের কার্ডের মধ্যে দিয়ে তাদের যোগাযোগ আছে।
তিনজনের জীবন তিন পথের পথিক হলেও প্রীতি বিনিময়ের মধ্যে দিয়েই পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ অবিছিন্ন রয়েছে। এদের মধ্যে রুথ ইওরোপে বেশি আসে। তাই মিস মারপলের সঙ্গে রুথের বেশি দেখা হয়। ক্যারি লুইজ ইংলণ্ডে থাকা সত্ত্বেও বিশ বছরের বেশি তার সঙ্গে দেখা হয়নি। হয়তো একজায়গায় থাকা হয় বলেই দেখা সাক্ষাতের আয়োজন কম হয়।
ক্যারি লুইজকে নিয়ে রুথের দুশ্চিন্তার কারণ মিস মারপল জানতে চাইল, কিন্তু কারণটা অজানা বলেই রুথ জানাল তার চিন্তা এত বেশি। তার স্বাস্থ্য বা সুখ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। সংসারের স্বরূপ লুইজের অজানা আর সেইখানেই রুথের যত চিন্তা। এদের মধ্যে লুইজি আদর্শবাদী সারাজীবন সেবা ও ধর্মের মধ্যেই জীবন নিয়োগ করবে এই ছিল জেনের চিন্তা। আর রুথ হলো শক্ত মনের মানুষ। সমাজের কাছ থেকে কিছু আশা করে না। তবে ক্যারি লুইজ সম্বন্ধে রুথের একটাই চিন্তা–কেবলই আদর্শবাদী লোকেদের বিয়ে করে, যারা রুথের মতে মাথা খারাপ লোকেদের দলে। উচ্চ ভাবনার কথায় লুইজের মন বিগলিত হবেই। যে কোনও বয়সের মানুষকেই সে সমস্ত বিচার বিবেচনা হারিয়ে নিজের করে নিতে পারত। তাদের মধ্যে গুলব্রাজেন একজন। যার খ্যাতি পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। তিনি তার সমস্ত ধনসম্পদ সকাজে দান করেছেন। ক্যারি বত্রিশ বছর বয়সে বিধবা হয়।
অবিবাহিত মিস মারপল একমনে রুথের কথা শুনে যায়। রুথ বলে চলে, জনি বেষ্টারিককে ক্যারি যখন বিয়ে করেছিল তখন সে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিল। জনি ছিল অতি স্বার্থপর, বিলাসী ও অলস তবে স্বামী হিসেবে নিরাপদ। বিলাসবহুল জীবন ছাড়া সে আর কিছু চাইত না। জনির থিয়েটার নিয়ে মাথা ঘামানো বা সীন আঁকা এইসবেই লুইজির মন গলেছিল। মাঝখান থেকে শিল্পের দিকে জনিকে ঠেলতে গিয়ে লুইজি তাকে হারাল। একটা যুগোশ্লাভ মেয়ে জনিকে বশ করল। মজার কথা এই, যে লুইজি তার ক্ষমাসুন্দর মন নিয়ে সমস্ত ঘটনাটা খুব সহজভাবে নিল। জনির আগের পক্ষের দুই ছেলেকে নিজের কাছে এনে রাখল। জনির সঙ্গে মেয়েটার বিয়েতে কিছুই অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালো না। জানা যায় মেয়েটা নাকি জনিকে প্রচুর যন্ত্রণা দিয়ে গাড়িসুদ্ধ খাদে ফেলে দেয়।
মিসেস রাইডক আয়নায় একবার মুখটা দেখে নেয়। তারপর বলে চলে লুইজি আর এক পাগল লিউইসকে বিয়ে করে। সবার জীবনে উন্নতি ঘটানোই যার লক্ষ্য। তবে সে তার স্ত্রীকে ভালোবাসে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উপকার করার পদ্ধতিও পাল্টায়। এখন শিশু অপরাধীদের নিয়ে সকলে ভাবতে বসেছে। এদের ব্যাপারে লিউইসের প্রচণ্ড উৎসাহ। লুইজির কাছে এর আবেদন অবর্ণনীয়। এসব ব্যাপার রুথের ভালো লাগে না। গুলব্রাজেন সম্পত্তির অছিদের পরামর্শমত লুইজির বাড়ির জমিতে একটা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। সেখানে এই অপরাধীদের শিক্ষা দেওয়া হয়। এদের মাঝেই লিউইস আর লুইজ বাস করে।
মিসেস রাইডক অসহায় ভঙ্গীতে মিস মারপলের দিকে তাকালো। কিন্তু মিস মারপল বুঝে উঠতে পারে না ভয়ের কারণটা ঠিক কি। রুথ জানায় তার সাথেও কারণটা স্পষ্ট নয়। ওদের বাড়িতে সেদিন গিয়ে তার পরিবেশটা ভালো লাগেনি। অ্যামালগ্যায়েটেড সিরিয়ালন কোম্পানী ডোববার আগেই জুলিয়ানকে সব শেয়ার বেচে দেওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছিল। তার দৃঢ় বিশ্বাস কোনো গণ্ডগোল ক্রমশ দানা বাঁধছে। এদিকে লিউইস নিজের খেয়ালে মগ্ন, ক্যারি লুইজিও স্বপ্নের ঘোরে থাকতে ভালোবাসে, বাস্তবের সঙ্গে ওর কোনও যোগাযোগ নেই। রুথ জেনকে তাড়াতাড়ি ওখানে গিয়ে গোলমালের সূত্রটা অনুসন্ধান করতে বলে।