-কেন আপনার মনে হচ্ছে যে কেউ আপনাকে হত্যা করতে চাইছে?
চক্ষু বিস্ফারিত হয়ে গেল মেরিনার।
— কেননা যে গ্লাসে বিষ মেশানো ছিল, সেটা আমার ছিল! ঐ হতভাগ্য ভদ্রমহিলা ভুল করে সেটা পান করেছিলেন, অবশ্য পরিস্থিতির প্রয়োজনেও বলতে পারেন। এছাড়া
এছাড়া কি মিসেস গ্রেগ? খুলে বলুন।
–হ্যাঁ, জ্যাসন বলেছে, সবকিছুই যেন আমি বলে দিই।
–আপনি ওঁকে আপনার সন্দেহের কথা জানিয়েছেন?
–প্রথমে জানাতে চাইনি, কিন্তু ডাঃ গিলক্রিস্ট বললেন, আমার ওকে জানানো উচিত। দেখলাম, আমার মতো একই বিশ্বাস জ্যাসনেরও। কিন্তু আমি বিচলিত হয়ে পড়বো মনে করে আমাকে কিছু জানাতে চায়নি। বেচারা! আমাকে একেবারে বোকা বলে মনে করে।
–আপনি এখনও বলেননি, কেন আপনার সন্দেহ হয়েছে যে আপনাকে কেউ হত্যা করতে চাইছে।
একটু সময় অপেক্ষা করে থাকলেন মেরিনা, তারপর নিজের হ্যান্ডব্যাগটা টেনে নিয়ে তার থেকে একটুকরো কাগজ বের করে নিয়ে বাড়িয়ে দিলেন ক্র্যাডক-এর দিকে।
ইনসপেক্টর দেখলেন, একটি কাগজে টাইপ করে লেখা আছে, পরের বার আর তুমি রেহাই পাবে না।
–এটা কোথায় পেলেন?
–স্নান করে এসে দেখি, এটা আমার ড্রেসিংটেবিলের ওপর রয়েছে।
–তাহলে বাড়ির মধ্যেকারই কোনো লোক–
তা না হতেও পারে। আমার জানলার ধারের ব্যালকনিতে যে কেউই বেয়ে উঠে আসতে পারে, তারপর সেখান থেকেই ওটা ড্রেসিংটেবিলের ওপর ফেলে দিতে পারে।
–এ ধরনের বার্তা কি এই প্রথম পেলেন?
একটু ইতস্তত করলেন মেরিনা, তারপর বললেন,-না, তা নয়।
–অন্যগুলি সম্পর্কে কি আমাকে বলবেন?
–তিন সপ্তাহ আগে, আমরা যখনই এই বাড়িতে থাকতে এলাম, তখন একদিন, এ বাড়িতে নয়, স্টুডিওতে আমার হাতে এসেছিল এরকম একটা চিরকুট, তাতে লেখা ছিল, মৃত্যুর জন্য তৈরি হও। আমি ভেবেছিলাম কেউ ঠাট্টা করেছে আমার সঙ্গে। চিরকুটটা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম।
–কাউকে বলেননি এসব কথা?
-না, আসলে অত গুরুত্ব দিইনি। সেই সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের শুটিং নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিলাম।
-তারপর কি আর এরকম চিঠি এসেছিল?
-হ্যাঁ, ঐ মেলা যেদিন বসেছিল, সেদিনই। একজন মালি এসে বললো, একজন লোক আমাকে একটা চিঠি দিতে বলে চলে গেছে। আমি ভেবেছিলাম, সেদিনের উৎসবের আয়োজন বিষয়ে কিছু হবে। চিঠিটা খুলে দেখি, তাতে লেখা আছে, আজই তোমার জীবনের শেষ দিন।
–চিঠিটা কোথায়?
-ওটা তো মুড়ে তখন যে ড্রেসিংগাউনটা পরেছিলাম, তারই পকেটে রেখেছিলাম, পরে আর খুঁজে পাইনি।
-কে এই ধরনের চিঠি পাঠাতে পারে বলে আপনার মনে হয় মিস গ্রেগ?
–বিন্দুমাত্র ধারণা নেই আমার।
–আপনি একজন বিখ্যাত মহিলা। জীবনে বহুবার সার্থকতার মুখ দেখেছেন। পেশাগত ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত জীবনে। বহু মানুষ আপনার প্রেমে পড়েছে, আপনাকে বিবাহ করতে চেয়েছে। মহিলারা আপনাকে ঈর্ষা করেছে। আপনার কাছে প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বহু পুরুষ। আপনার জীবনে এধরনের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রটা খুবই বিস্তৃত। তবু, এর মধ্যে থেকে কোনো ইঙ্গিত কি আপনি পাচ্ছেন না?
–এরকম চিঠি এদের মধ্যে যে কেউই লিখতে পারে। বিশেষ করে কাউকে সন্দেহ করতে পারছি না।
-না মিস গ্রেগ, যে কোনো লোকই হতে পারে না। কোনো একটি বা দুটি বিশেষ নামের কথা কি আপনার মনে পড়ছে না? স্টুডিও-র কোনো কর্মী, বা আপনার বন্ধুগোষ্ঠীর মধ্যে কেউ?
এমন সময় দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন মেরিনা-স্বামী জ্যাসন হাড। তার দিকে ফিরে আবেদনের হাত বাড়িয়ে দিলেন মেরিনা।
-জ্যাসন, প্রিয়তম; ইনসপেক্টর বলছেন ঐ চিঠিগুলো কে লিখেছে সেটা আমার জানা উচিত। কিন্তু তুমি তো জানো, আমি তা জানি না, এ সম্বন্ধে আমাদের দুজনেরই কোনো ধারণা নেই।
ইনসপেক্টর ক্র্যাডকের মনে হলো, মেরিনা যেন ভয় পাচ্ছেন, তাঁর স্বামী কিছু বলে ফেলতে পারেন, তাই আগে থেকে তাকে সাবধান করে দিলেন।
চোখে একরাশ ক্লান্তি ও মুখে বিমর্ষতা নিয়ে এগিয়ে এলেন জ্যাসন হাড।
-আমি জানি, কথাটা আপনার কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না ইনসপেক্টর। কিন্তু সত্যি বলছি এ ব্যাপারে মেরিনা বা আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।
–তার মানে আপনাদের কোনো শত্রু নেই বলে মনে করেন? ইনসপেক্টরের গলায় চাপা বিদ্রুপের সুর।
-শত্রু? না ঠিক সেই অর্থে শত্রু কেউ নেই। আমাদের সঙ্গে স্বার্থে সহমত নয়, আমাদের কাজকর্ম পছন্দ করে না, এমন অনেক লোক হয়তো আছে, কিন্তু তাই বলে পানীয়ে বিষে মিশিয়ে হত্যা করতে চাইবে, এমন প্রতিহিংসাপরায়ণ কেউ নেই।
-কিন্তু সেই কাজটা করার সুযোগ তো অল্প কয়েকজনেরই ছিল সেদিন, তাই না মিস গ্রেগ?
-কিন্তু আমি তো কিছুই দেখিনি, আমার নিজের গ্লাসের পানীয়ে অন্য কেউ কিছু মেশাতে গেলে আমি নিশ্চয়ই দেখতে পেতাম ইনসপেক্টর।
–অমার মনে হচ্ছে, আপনি যতটুকু জানেন, ততটুকু বলছেন না মিস গ্রেগ।
–না, এটা সত্যি নয়, জ্যাসন! তুমি ওঁকে বল এটা সত্যি নয়, আমি কিছুই গোপন করছি না। আর একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞেস করি মিস গ্রেগ। সেদিন সমবেত অতিথিদের মধ্যে একজন বলেছেন, মিসেস বেডককের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আপনি একসময় সম্পূর্ণ অন্যমনস্ক হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলেন। আপনার মুখে ফুটে উঠেছিল আতংকের ছাপ, আপনি কি কাউকে দেখে ভয় পেয়েছিলেন?