ক্র্যাডক এসে তারিফ করলেন মিস মারপল-এর। গসিংটন হল-এ গিয়ে সাম্প্রতিক যে সব কথাবার্তা হয়েছে, সবই সবিস্তারে বললেন মিস মারপল মেরিনা-র দত্তক নেওয়া ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে বললেন ক্র্যাডক-কে। কেননা তার ধারণা দুঃস্থ অবস্থা থেকে তুলে এনে মেরিনা যাদের কয়েক বছর বিলাসব্যসনে রেখেছিলেন, এবং নিজের সন্তান সম্ভাবনা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যাদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু টাকাপয়সার ব্যবস্থা করে দিয়ে বিভিন্ন ফস্টার হোম-এ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, তাদেরও মনে ক্ষোভ থাকতে পারে, প্রতিহিংসার কামনা থাকতে পারে।
অবাক হলেন ক্র্যাডক, ঐ ছেলেমেয়েদের কথা তারও মনে হয়েছিল, কিন্তু মিস মারপল কেন সেকথা ভাবছেন?
এই ফিল্ম ম্যাগাজিনগুলো থেকেই জেনেছি তারা আর মেরিনার কাছে থাকে না। তার মানে, মেরিনা তাদের ওপর উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল। শিশুরা খুবই সংবেদনশীল হয়, তারা এটা কখনই ভালোভাবে নিতে পারে না।
–তারা তো এখন অনেক বড়ো হয়ে গেছে। তবে দেখি, তাদের খোঁজখবর নিয়ে, কে কি করছে। আচ্ছা, হত্যাকারীর যে আসল লক্ষ্য ছিল মেরিনা গ্রেগ, সেটা আপনি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলেন?
-মিসেস বেডককের খুন হওয়ার পেছনে কোনো মোটিভ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না যখন, তখন তো অন্য কিছু ভাবতেই হবে।
-ঐ মহিলা সেক্রেটারিকে বেশ এফিসিয়েন্ট বলে মনে হলো, সেই সঙ্গে জ্যাসন হাড-এর প্রতি বেশ অনুরক্তও।
বহু সেক্রেটারিই তাদের বস্-এর প্রেমে পড়ে, তাই বলে তারা তাদের বস-এর স্ত্রীকে খুন করে না। আচ্ছা, মেরিনা কি জানে, তাকে খুন করার চেষ্টা হয়েছিল?
ডাক্তার গিলক্রিস্ট-এর কথা থেকে তো সেরকমই মনে হলো, মেরিনা জানে, কিন্তু স্বামীকে জানাতে চায় না। এদিকে জ্যাসনও এরকমই সন্দেহ করে, কিন্তু স্ত্রীকে জানাতে চায় না, তার ধারণা, এত অতিরিক্ত আবেগসম্পন্ন মেরিনার আবার নার্ভাস ব্রেকডাউন হতে পারে।
শহরের মেয়রকে সন্দেহের তালিকায় রাখা গেলে খুবই খুশি হতেন ইনসপেক্টর কর্ণিশ। আত্মগর্বী, ধূর্ত স্বভাবের এই লোকটি সব সময়েই আইন বাঁচিয়ে কাজ করেন, এটাই তার আক্ষেপ। যাই হোক, এখন ক্র্যাডকের সঙ্গে বসে মিসেস বেডকক-এর আগে এবং ঠিক পরে যে কজন অভ্যাগত এসেছিলেন, তাদের মধ্যে কার পক্ষে পানীয়ের সঙ্গে ঐ বিষটি মিশিয়ে দেওয়া সম্ভব হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন তিনি। বিখ্যাত আমেরিকান অভিনেতা মিঃ ফেন এবং অভিনেত্রী লোলা ব্রিডস্টার এসেছিলেন। অতীতে মিঃ ফেন-এর সঙ্গে মেরিনার যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়েছিল, আর মেরিনার তৃতীয় স্বামী মেরিনাকে বিয়ে করার জন্য ঐ লোলা ব্রিডস্টারকে ডিভোর্স করেছিলেন। কাজেই ঐ দুজনের মেরিনার ওপর রাগ থাকতেই পারে।
কিন্তু পনেরো বছর পরে খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে এই মানুষের ভিড়ের মধ্যে তারা আসবেন কি?
সম্ভব নয়। সমবেত সকলেই তো তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। বিখ্যাত অভিনেতা অভিনেত্রী বলে কথা। তাদের পক্ষে ঐ অল্প সময়ে সবার অলক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।
-মাগৰ্ট বেনস নামে যে মহিলা ফোটোগ্রাফারটি সিঁড়ি থেকে ছবি তুলছিল, সে হয়তো কিছু দেখতে পারে। এছাড়া বাটলার গিসিপ্পি, পানীয় তো সেই ঠিক করে রাখছিল, কোনো পাত্রে ক্যালমো মিশিয়ে দেওয়া তার পক্ষেই তো সবথেকে সুবিধে। স্টুডিওর ক্যানটিনের দুজন মহিলা কর্মীও সেদিন এই পার্টিতে কাজে সাহায্য করতে এসেছিল, এদের সকলের সঙ্গেই কথা বলতে হবে।
এছাড়া এরকম ক্ষেত্রে স্বামীকেই তো সর্বপ্রথম আসামীর তালিকায় রাখা হয়।
–হ্যাঁ, জ্যাসন হাড। তবে সে যে তার স্ত্রীকে খুবই ভালোবাসে, একথাটাও স্টুডিও-মহলে খুবই উচ্চারিত তথ্য। স্ত্রীকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যই বিপুল অর্থব্যয়ে একটি ছবি করছে সে। মেরিনার হাত থেকে মুক্তি পাবার বাসনা থাকলে তাকে তো ডিভোর্স করতেই পারতো সে।
দুজনের কথোপকথনের মধ্যেই টেলিফোন বেজে উঠলো। গসিংটন হল থেকে জানানো হচ্ছে মেরিনা গ্রেগ ইনসপেক্টরের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত আছেন। একটুও সময় নষ্ট না করে ঝড়ের গতিতে গসিংটন হল-এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন ক্র্যাডক। চিত্রতারকা বলে কথা, এদের মত পরিবর্তিত হতে কতক্ষণ।
দোতলায় নিজের শোবার ঘর সংলগ্ন ব্যক্তিগত বসার ঘরে ক্র্যাডককে দর্শন দিলেন মেরিনা। ডার্ট ক্র্যাডক ভেবেছিলেন অসুস্থ, শয্যাশায়ী মেরিনাকে দেখবেন। কিন্তু দেখলেন, সোফায় গা এলিয়ে বসে আছেন মেরিনা, বেশ প্রাণোচ্ছল চেহারা। খুব অল্প প্রসাধন সত্ত্বেও তাঁর প্রকৃত বয়স বোঝা যাচ্ছে না, যথেষ্ট আকর্ষণীয়া দেখাচ্ছে। ক্র্যাডককে দেখে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন মেরিনা।
চীফ ইনসপেক্টর ক্র্যাডক? আমি অত্যন্ত লজ্জিত, আপনার সঙ্গে আগে কথা বলতে পারিনি বলে। এই দুর্ঘটনা ঘটার পর আমি নিজেকে সংযত রাখতে পারিনি। বড়ো রকমের একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম, তাই এই অসুস্থতা।
–আপনি আপসেট হয়ে পড়বেন, এটাই তো স্বাভাবিক।
–সে তো সকলেই অল্পবিস্তর হয়েছে, মাঝ থেকে আমিই একটু বাড়াবাড়ি করে ফেললাম।
–তার কি বিশেষ কোনো কারণ ছিল না?
-হ্যাঁ, আপনি ঠিকই অনুমান করেছেন, বিশেষভাবে বিচলিত হওয়ার কারণ অবশ্যই ছিল আমার। আমি একেবারেই সাহসী নই। বুঝতে পেরেছিলাম, কেউ আমাকে মারার চেষ্টা করছে, কিন্তু ইনসপেক্টর, আমি মরতে চাই না।