–যেদিকে তাকিয়ে ছিলেন মেরিনা, সেদিকে কি ছিল?
হতে পারে যীশু কোলে ম্যাডোনার ছবিটির দিকে, অথবা সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসা কোনো অতিথি বা ক্যামেরা নিয়ে থাকা মেয়েটির দিকে, বা অন্য কোনো পরিচালকদের দিকে, তা বলতে পারবো না।
যাই হোক, তারপর কি হলো?
–তারপরে তো আমি মহিলাদের সঙ্গে বাথরুমগুলো দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানেই মেরিনার মহিলা সেক্রেটারিটি এসে জানালো কেউ একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। খুব সাদাসিধে ভাবেই ইনকোয়েস্ট হয়ে গেল। জানা গেল খুব বেশি মাত্রায় স্নায়ু উত্তেজনা প্রশমনকারী একটি ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল মিসেস বেডককের পানীয়ের মধ্যে। কিভাবে এটা করা হয়েছিল, তা জানা যায়নি।
ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর ফ্র্যাংক কর্ণিশ একান্তে ডেকে নিলেন আর্থার বেডকককে। বললেন, তার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চান তিনি। এই কদিনেই যেন আরও শীর্ণ ও অবসন্ন হয়ে পড়েছেন আর্থার বেডকক। কি করে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল, তা বুঝতে না পেরে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছেন তিনি।
কর্ণিশের গাড়িতেই আর্থার-এর বাড়িতে নিরিবিলিতে কথা বলতে এলেন দুজন। পাশের বাড়ির একজন বিধবা মহিলা এদের জন্য চা-এর ব্যবস্থা করে দিয়ে গেলেন। আর্থারের কাছ থেকে অবশ্য তেমন কিছু শোনা গেল না। তবে জানা গেল, কোনো অসুখের ইতিহাস নেই মিসেস বেডকক-এর। এখানে বাড়ি নেওয়ার পর বছর ঘুরে গেছে ওদের, তার মধ্যে একবারও ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি তাকে। যে ওষুধের প্রয়োগে তার মৃত্যু হয়েছে সেটার নামও শোনেননি কখনও।ইনসপেক্টর জানালেন ওষুধটি ক্যালমো নামে আমেরিকায় প্রচলিত। সাধারণত ছায়াছবির জগতে বাসিন্দারা অতিরিক্ত টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটা অল্প মাত্রায় সেবন করে থাকেন। গসিংটন হলের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ওই ওষুধের শিশি পাওয়া গেছে।
আর্থার দৃঢ়ভাবেই জানালেন টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার বা মানসিক প্রফুল্লতা আনার জন্য কোনো ওষুধই ব্যবহার করার অভ্যেস ছিল না তার স্ত্রীর।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আর্থার বললেন, কারো হাত লেগে তার স্ত্রীর হাতের পানীয়ের গ্লাসটি পড়ে ভেঙে যায়। মেরিনা তাঁর নিজের হাতের গ্লাসটি নিতে অনুরোধ করেন তাকে। সেটি নিয়ে একটু এগিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসেন মিসেস বেডকক, এবং গ্লাসে দু-এক চুমুক দিয়েই ঢলে পড়েন, ডাক্তার এসে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সব ব্যাপারটা যেন এক লহমার মধ্যে ঘটে গেল, যে এখনও সত্যি বলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আর্থারের।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের চীফ ইনসপেক্টর ক্র্যাডক সেন্ট মেরী মিড গ্রামটির নাম শুনেই চমকে উঠলেন। সেখানকার গসিংটন হল-এ একটি মৃত্যু হয়েছে, সেই সমস্যার সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের দ্বারস্থ হয়েছে। ঐ গ্রামের বাসিন্দা মিস জেন মারপল-কে বহুদিন আগে থেকেই চেনেন ডার্মাট ক্র্যাডক। বহু রহস্য সমাধানে তার কাছ থেকে পেয়েছেন অমূল্য সাহায্য। অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার মেরিনা গ্রেগ, গসিংটন হল, মিসেস বেডকক সম্বন্ধে সব কিছু জানালেন ক্র্যাডক-কে। অবিলম্বে একজন সহকারীকে নিয়ে সেন্ট মেরী মিড-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পরামর্শ দিলেন তাকে।
ক্র্যাডককে দেখে আনন্দে গোলাপী হয়ে উঠলো জেন মারপলের মুখ। কতদিন পরে দেখা এই ছেলেটির সঙ্গে, অবশ্য এখন আর একে ছেলেটি বলা যায় না, চাকরিতেও যথেষ্ট উন্নতি করেছে, সেটা পদমর্যাদা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ক্র্যাডক জানালেন, এখানকার গসিংটন হলের কাজটা পেয়েই তিনি আন্টি জেন-এর কাছে চলে এসেছেন, কেননা এটাকেই তিনি এখানকার হেডকোয়ার্টার বলে মনে করেন।
কিন্তু আমি তো এখন আর তেমন বাইরে বেরোতেই পারি না, কাজেই সেরকম কোনো খবরও পাই না।
-কিন্তু আপনি একদিন বেরিয়েই মিসেস বেডকক-এর বাড়ির সামনে পড়ে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছিলেন। সেই মহিলাই তো খুন হয়েছেন?
–কোথা থেকে এত খবর পেলে?
–আপনি তো নিজেই একবার বলেছিলেন, গ্রামে সবাই সবারকার কথা জানতে পারে। তা আপনি কি তখনই মহিলাকে দেখে বুঝতে পেরেছিলেন, যে তিনি খুন হতে চলেছেন?
-কি অসম্ভব কথা! সেরকম মনে হবে কেন?
-তার স্বামীকে দেখে কিছু মনে হয়নি? অতীতের কোনো পত্নীহন্তার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাননি?
-মোটেই না, আর্থার বেডকক খুবই সাদাসিধে, ভালোমানুষ। অবশ্য আমার মনে হয় না স্ত্রীর অভাবে তেমন কষ্ট পাবেন ভদ্রলোক। কেননা ভদ্রমহিলা খুব সহৃদয় এবং সেবাপরায়ণ ছিলেন বটে, তবে অন্য লোকের মনের কথা তেমন বুঝতে পারতেন না, অথবা, চেষ্টা করার কথা ভাবতেনই না। এসব ক্ষেত্রে স্বামীরা খুবই একা মনে করে নিজেকে। সে যাক, মূল ঘটনা আমি তেমন ভাবে জানি না। তুমি আমার বান্ধবী ডলি ব্যান্ট্রির সঙ্গে দেখা কর। অনেক কিছু জানতে পারবে।
–তিনি কি ঐ ফিল্ম জগতের লোক?
-না না। এখানকার পুরোনো বাসিন্দা, গসিংটন হল-টা ওঁদেরই ছিল, বিক্রি করে দিয়েছেন। উনি সেদিন পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি পার্টিতে ছিলেন? বিশেষ কিছু লক্ষ্য করেছিলেন?
–উনিই বলবেন, উনি কি দেখেছেন, তবে বিশেষ করে লেডি অব শ্যালট-এর কথা জিজ্ঞেস করো। তাহলে ওর সেই কথাটি মনে পড়বে।
-ওটা কি কোনো কোড ওয়ার্ড নাকি?