কালকে গসিংটন হল-এ যে মেলা বসেছিল, সেখানে হঠাৎ একজন মারা গেছেন?
–শুনিনি তো, কে মারা গেছেন?
–আপনি চিনবেন না। আমাদের ওদিকে থাকেন। মিসেস বেডকক।
মিসেস বেডকক? হ্যাঁ, চিনি বই কি, ওঁর বাড়ির সামনেই তোত আমি পড়ে গিয়েছিলাম। খুবই সহৃদয় ব্যবহার করেছিলেন আমার সঙ্গে।
-ওঃ হিথার বেডকক দয়ালু ছিলেন তো বটেই, বোধহয় একটু বেশিমাত্রাতেই দয়ালু, মানে লোকে তাই বলে আর কি। তিনিই মারা গেছেন।
-কিভাবে? তাকে তো যথেষ্ট স্বাস্থ্যবতী বলেই মনে হয়েছিল।
–ঠিক জানি না, সেন্ট জন-এর সেক্রেটারি হিসেবে ওপরের পার্টিতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে নাকি একপাত্র পানীয় পান করার পাঁচ মিনিটের মধ্যে মারা গেছেন। কারণটা কেউ বুঝতেই পারছে না।
–কি ভয়ংকর ঘটনা! ওঁর কি হার্টের কোনো রোগ ছিল?
-সেরকম তো কিছু শুনিনি, তবে শুনলাম, ওঁর মৃতদেহ নাকি পোস্টমর্টেম-এর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, তিনি আগে মিসেস বেডকক-এর কোনো অসুখের চিকিৎসা করেননি। বুঝতে পারছেন না ঠিক কিভাবে এই মৃত্যু হলো।
ভদ্রমহিলাকে চিনতে তুমি?
-খুব একটা আলাপ ছিল না। এমনিতে উনি খারাপ লোক নন। কিন্তু অন্যের উপকার করার উৎসাহে বা কথা বলার সময়, অন্যের ওপর সেটার কি প্রতিক্রিয়া হবে, সেটা একটুও ভাবতেন না।
চেরী চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই মিসেস ব্যান্ট্রি এসে ঢুকলেন।
-তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে জেন।
কাল যে মৃত্যুটা ঘটেছে গসিংটনে, সে সম্বন্ধে?
–তুমি সব সময়েই সব খবর পেয়ে যাও, কিভাবে পাও, কিছুতেই বুঝতে পারি না।
–যেভাবে সকলে পায়। আমার রোজকার সহকারিণী চেরী বেকার খবরটা দিয়েছে এখনই। দেখো, মিস নাইটও নিশ্চয়ই এতক্ষণে রুটিওয়ালার কাছ থেকে খবরটা জানতে পেরে গেছেন।
-তা, এ বিষয়ে তোমার কি মনে হয়?
–কি বিষয়ে?
–না বোঝার ভান কর না জেন, আমি তোমাকে হাড়ে হাড়ে চিনি। এই যে সম্পূর্ণ সুস্থ ও প্রাণোচ্ছল মিসেস বেডকক হঠাৎ এ ভাবে মারা গেলেন, এ বিষয়ে তুমি মনে মনে কি ভাবছো?
–এ রকম তো যে কোনো মানুষেরই হতে পারে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে হয়তো জানা যাবে
-অত সহজ নয় ব্যাপারটা, শুনলাম ডক্টর স্যানফোর্ড পুলিশকে ফোন করেছেন।
–সেটা আবার জানলে কিভাবে?
–পুরানো পদ্ধতি। মালী বুড়ো বিগ্রস ওঁর স্টাডির কাছেই বাগানের কাজ করছিল, সে শুনেছে সে তার মেয়েকে বলেছে, সেখান থেকেই এসেছে খবরটা। যাই হোক, এ বিষয়ে তুমি কি ভাবছো?
-প্রথমে অবশ্য মহিলার স্বামীর কথাই মনে হচ্ছে। সে কি ওখানে উপস্থিত ছিল?
নিশ্চয়ই। আচ্ছা, তুমি কি এটাকে আত্মহত্যা বলে ভাবছে।
–না, আমি তাকে যতটুকু দেখেছি সেদিন, ঐ মনের মানসিকতা তার থাকতেই পারে না।
-স্বামীকেও তো দেখেছো, কেমন লোক বলে মনে হলো? সে কি স্ত্রীকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে পারে? এই ধরনের তোমার চেনা কোনো চরিত্রের সঙ্গে কি তার কোনো মিল খুঁজে পেয়েছে?
-না, তবে মিসেস বেডকক-এর সঙ্গে অ্যালিসন ওয়াইল্ড-এর মিল পেয়েছি। অর্থাৎ অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক চরিত্র। মানে স্বার্থপর বলছি না, তবে পৃথিবী, বা তার লোকজন সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই যাদের। নিজের দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখে সবকিছু। এমন কিছু বলে বা করে ফেলে, যার প্রতিক্রিয়া অন্যের মধ্যে কিভাবে হবে, তা একবারও ভেবে দেখে না। কাজেই বিপদে পড়লে আত্মরক্ষাও করতে পারে না।
-বুঝলাম না কিছুই।
দাঁড়াও, একটা কাল্পনিক গল্পের উদাহরণ দিয়ে বোঝাই তোমাকে। মনে কর, কোনো দোকানে গিয়ে তুমি পরিচিত দোকানদারের কাছে নিতান্ত অকারণেই বলে ফেললে তোমার ঘরে খুব একটা দামী জিনিস বা বেশ কিছু টাকা আছে, কিন্তু চাবি তালা লাগানোর ব্যাপারে তোমার খেয়াল খুব কম। সপ্তাহের কোনো একদিন সন্ধ্যেয় বাড়ি খালি রেখে তোমাকে কোথাও একটা যেতে হবে সে কথাও জানালে। দোকানীর বিগড়ে যাওয়া ছেলেটি যে সব কথা শুনছে, সেটা খেয়াল করলে না। সেই নির্দিষ্ট দিনে তুমি কোনোও কারণে হঠাৎ অসময়ে বাড়ি ফিরে দেখলে, সেই ছেলেটি চুরি করার উদ্দেশ্যে তোমার ঘরে ঢুকেছে। হাতে-নাতে ধরা পড়ে গিয়ে মরিয়া হয়ে সে তোমাকে আক্রমণ করে বসলো। এইভাবে নিজের বিপদ, নিজের স্বভাবের দোষেই তুমি ডেকে আনলে না কি?
তার মানে তুমি বলতে চাইছো মিসেস বেডকক না বুঝেই একটা বিপদজনক কাজ করে ফেলেছিল?
হতে পারে, আবার এ-ও হতে পারে, খুনটা অন্য কাউকে করার উদ্দেশ্যে ছিল, ভুলক্রমে উনি খুন হয়ে গেছেন।
আচ্ছা ডলি, তুমি তো পুরো ব্যাপারটা দেখেছো, ঠিক বলো তো, কি করে কি হলো?
–ওপরে গিয়ে দেখলাম, সিঁড়ি দিয়ে উঠেই যে বাড়তি বেডরুমটা ছিল সেটা ভেঙ্গে একটা চাতাল মতো করা হয়েছে। সেখানেই হচ্ছিল পার্টিটা। মেরিনা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে অতিথিদের সঙ্গে দু-একটা কথা বলছেন, তারপর তার স্বামী ও তাদের সহকারীরা অতিথিদের নিয়ে গিয়ে পানীয় দিয়ে আপ্যায়িত করছেন। আমার পরেই সিঁড়ি দিয়ে উঠেছিল মিস্টার ও মিসেস বেডকক। ভদ্রমহিলা বেশ কিছুক্ষণ একাই অধিকার করে রাখলেন মেরিনাকে। বকবকানি আর থামতেই চায় না, সেই কবে তরুণ বয়সে চিকেন পক্স নিয়েই মেরিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন না, কি যেন! ইত্যাদি ইত্যাদি, ভদ্রতাবশত মুখে হাসি নিয়ে শুনছিলেন মেরিনা। হঠাৎ একবার সেদিকে তাকিয়ে চমকে উঠেছিলেন, একদৃষ্টে মিসেস বেডককের মাথা ছাড়িয়ে বাঁদিকে তাকিয়ে আছেন মেরিনা, মুখে কেমন একটা বিবর্ণতা, যেন সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে তার। অবশ্য পরক্ষণেই জ্যাসন হাড স্ত্রীকে সচকিত করে দুজনের হাতে একইরকম পানীয়ের গ্লাস তুলে দিয়ে মিসেস বেডকককে সরিয়ে এনে অন্য অতিথিদের মেরিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দিলেন।