বিকেলবেলা বাড়তি এক শিলিং দক্ষিণার বিনিময়ে দর্শকরা গসিংটন হলের ঘরগুলি ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়ে উফুল্ল হয়ে উঠলো মেলার জনতা। স্থানীয় লোকেদের তো বিশ্বাসই হতে চাইলো না যে, এটা সেই তাদের বহুবার দেখা প্রাচীন গসিংটন হল।
বাগানের বড়ো ছাউনির তলায় চা এবং জলযোগের আয়োজন করা হয়েছিল। ভিড়ে ও গরমে সেখানে প্রাণ ওষ্ঠাগত ব্যান্ট্রি-এর। কিন্তু সব ব্যাপারটা বেশ সুদক্ষ হাতে পরিচালিত হচ্ছে, এবং মেলার মুখ্য উদ্দেশ্য যে সেন্ট জন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা, সেটাও আশাতীতভাবে সফল হতে চলেছে দেখে মনে মনে উৎফুল্লও হলেন তিনি।
এমন সময় জ্যাসন হ্যাড-এর একজন সহকারী হেইলি প্রেস্টন খুঁজে বার করলো মিসেস ব্যাট্রিকে। মেরিনা এবং জ্যাসন কয়েকজন বিশিষ্ট অতিথিকে আপ্যায়ন করছে চান, এই বাড়ির পুরোনো মালিক হবার সুবাদে ব্যান্ট্রিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সিঁড়িতে ওঠার মুখে কাউন্সিলার অ্যালকক ও তার পৃথুলা স্ত্রীর সঙ্গে দেখা। রীতিমতো হাঁপাচ্ছেন ভদ্রমহিলা, তবু ব্যাট্রিকে দেখে তার মনের সাধটি ব্যক্ত করতে ভুললেন না। এইসব চিত্রতারকাদের বিলাসবহুল বাথরুমগুলি কেমন হয়, সেটা দেখার খুব ইচ্ছে তাঁর, কিন্তু সেটা আর সম্ভব হবে?
সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন জ্যাসন হাড ও মেরিনা গ্রেগ। ভারি সহজ স্বাভাবিক ও সুন্দরী দেখাচ্ছে মেরিনাকে। কি গভীর অধ্যবসায়ের সাহায্যে নিজের এই ভাবমূর্তিটি তৈরি করেছেন মেরিনা, সেকথা কজনই বা জানে?
মিসেস ব্যাট্রিকে স্বাগত জানালেন মেরিনা। জ্যাসন তাঁর ও তাঁর সঙ্গীদের হাতে তুলে দিলেন তাদের পছন্দমতো পানীয়ের পাত্র। ইতিমধ্যে পরবর্তী অভ্যাগতরা এসে গেছে। এঁদের মধ্যে আছেন মিস্টার ও মিসেস বেডকক। মিসেস বেডকক সেন্ট জন অ্যাম্বুলেন্সের স্থানীয় সম্পাদিকা। আজকের এই অনুষ্ঠানটি সংঘটিত হওয়ার পেছনে তার পরিশ্রমই সবথেকে বেশি। মেরিনাকে কাছে পেয়ে উৎসাহে যেন টগবগ করে ফুটছিলেন এই ভদ্রমহিলা। সবিস্তারে শোনাতে লাগলেন বারো তেরো বছর আগে বাড়াতে কিভাবে মেরিনার সঙ্গে দেখা করার জন্য অসুস্থ শরীরে ডাক্তারের নিষেধ অমান্য করার জন্য চলে গিয়েছিলেন তিনি। অত্যন্ত ভদ্র হাসি ঠোঁটে রেখে মহিলার বকবকানি সহ্য করে যাচ্ছিলেন মেরিনা, দেখে মায়া হচ্ছিল মিসেস ব্যান্ট্রিরহঠাৎ মেরিনার দিকে চেয়ে চমকে উঠলেন তিনি, মেরিনার দৃষ্টি কিন্তু মিসেস বেডকক-এর দিকে নেই। সিঁড়ির ওপর টাঙানো শিশুকোলে ম্যাডোনার একটি ছবির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন মনে হলো। মুখ হয়ে গেছে কাগজের মতো সাদা। দেখে কেন জানি না টেনিসনের লেডি অব শ্যালট কবিতার কয়েকটি লাইন মনে পড়লো মিসেস ব্যান্ট্রির।
এই অবস্থা থেকে মেরিনাকে উদ্ধার করলেন তার স্বামী জ্যাসন। মেরিনা-র প্রিয় পানীয়ের দুটি পাত্র তিনি তুলে দিলেন স্ত্রী ও মিসেস বেডককের হাতে। পানীয়ের পাত্র হাতে নিয়ে এবার এগিয়ে যেতে বাধ্য হলেন মিসেস বেডকক। মেরিনা সদ্য আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
মিসেস ব্যান্ট্রি তখন চললেন কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে দোতলার বাথরুমগুলো দেখতে। এমন জিনিস তারা আগে কখনো দেখেননি। বিলাস ও বৈভবের মণিকাঞ্চন যোগ ঘটেছে যেন এখানে।
এমন সময় মেরিনার সেক্রেটারি এলাকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখা গেল বাথরুমের দিকে। মিসেস বেডকক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, বাথরুমের ম্যাডিকেল ক্যাবিনেটে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ পাওয়া যায় কিনা দেখতে এসেছে সে।
সদলবলে হন্তদন্ত হয়ে ঘটনাস্থলে ফিরে এলেন মিসেস ব্যান্ট্রি, সিঁড়ির মুখে জ্যাসন হাড-এর সঙ্গে প্রায় ধাক্কা লাগছিল তার। জ্যাসনের কাছেই জানা গেল, আর কোনো সাহায্যেরই দরকার নেই মিসেস বেডকক-এর। সেই স্বাস্থ্যবতী প্রণোচ্ছল মহিলাটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।
মিস মারপলের বিছানায় প্রাতরাশের ট্রে নিয়ে এলেন মিস নাইট। জানালেন, একটু আগে মিসেস ব্যান্ট্রি ফোন করেছিলেন, কিন্তু প্রাতরাশ খাওয়ার আগে মিস মারপলকে এটা জানানো তিনি উচিৎ বলে মনে করেননি। কথাটা শুনে একটু অসন্তুষ্ট হলেন মিস মারপল। জানালেন, বন্ধুদের ফোন এলে, সেটা তিনি সঙ্গে সঙ্গেই জানতে চান। প্রাতরাশটা বেশ যত্ন নিয়েই তৈরি করেন মিস নাইট, সেটা অবশ্য জানাতে বাধ্য হলেন মিস মারপল। জলযোগ শেষ করে মিসেস ব্যাট্রিকে ফোন করলেন তিনি, কিন্তু জানা গেল, তিনি বাড়ি নেই, মিস মারপল বুঝতে পারলেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্যই আসছেন বান্ধবীটি।
বাইরে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের আওয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে তরুণী মিসেস চেরী বেকার-এর গান। মিস নাইট মোটেই পছন্দ করেন না ব্যাপারটা, আগেকার দিনের পরিচারিকারা গান গাইতে গাইতে কাজ করছে, এটা ভাবাই যেত না। জেন মারপলের কিন্তু বেশ লাগে এই প্রাণোচ্ছল মেয়েটিকে। নিজে প্রায় গৃহবন্ধীর জীবনযাপন করেন, বাইরের জগৎ সম্বন্ধে তার চিরকালের অনুসন্ধিৎসা কিন্তু একটুও কমেনি। সেই অভাবটা অনেকটাই মিটিয়ে দেয় এই মেয়েটি।
দরজায় টোকা দিয়ে ঘরে ঢুকলো চেরী। উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে সে, কালকের খবরটা শুনেছেন কি মিস মারপল?
-কিসের খবর?