মিসেস ব্র্যান্টির কাছে জানা গেল, বেশ কয়েকবার হাতবদল হওয়ার পর বাড়িটি সত্যিই এখন মেরিনা গ্রেগ কিনেছেন, বাড়িটির ভেতরের অংশ বহু অর্থব্যয় করে বিপুল সুবিধাজনক পরিবর্তন করেছেন, এবং বর্তমানে এখানেই থাকতে আসছেন। মেরিনা-র সঙ্গে বেশ কিছুদিন আগে ক্যালিফোর্নিয়ায় আলাপ হয়েছিল মিসেস ব্র্যান্টি-র। খুবই আকর্ষণীয় মহিলা এই চিত্রতারকাটি। এই জনপদের কয়েক মাইলের মধ্যেই হেলিংফোর্থ-এর নতুন স্টুডিওটিতে মেরিনার স্বামী জ্যাসন হ্যাড-এর পরিচালনায় একটি ছায়াছবি তৈরির কাজ চলছে। তাতে অস্ট্রিয়ার এলিজাবেথ-এর ভূমিকায় অভিনয় করছেন মেরিনা।
কিছুদিন পরেই গসিংটন হলে সেন্ট জন অ্যাম্বুলেন্স-এর উদ্যোগে একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তাতে অংশ নেবেন মেরিনা।
মেরিনার প্রসঙ্গ শেষ করে এবার মিস মারপল-এর খবরাখবর নিয়ে ব্যস্ত হলেন মিসেস ব্র্যান্টি। তিনি শুনেছেন, ফ্ল্যাটবাড়িগুলি দেখতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন জেন মারপল। কিন্তু ওখানে যাওয়ার দরকার কি ছিল?
অবাক হলেন জেন?
–তুমি কি করে জানলে?
-আরে, ঐ ফ্ল্যাটবাড়িগুলির একটি থেকেই তো আমার বাড়ি রোজ কাজ করতে আসে। মিসেস মিভি। এই সেন্ট মেরী মিড-এ কোনও খবর গোপন থাকে না জেন। তা তুমি কি করতে গিয়েছিলে সেখানে?
-দেখতে গিয়েছিলাম জায়গাটা কেমন, ওখানকার মানুষগুলো কেমন?
–কেমন দেখলে?
–অন্য আর পাঁচজনের মতোই, খুবই চেনা চরিত্র। দেখে বেশ স্বস্তি পেলাম।
–কেন?
–চরিত্রগুলো চেনা হলে খুব সুবিধে হয়, ধরো যদি কোনো তেমন ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে কেন হলো, কার জন্য হলো, এসব বুঝতে তেমন অসুবিধে হয় না।
ঘটনা মানে? খুন জখমের কথা ভাবছো নিশ্চয়ই?
–আমি যে সব সময় খুন-এর কথাই ভাবি, এ কথা মনে করছো কেন?
–তোমাকে তো কম দিন ধরে দেখছি না জেন, আচ্ছা নিজেকে অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলে জাহির করতে আপত্তি কোথায় তোমার?
-কেননা, আমি সেরকম কিছুই নই। এরকম একটা গ্রামে থাকলে মানব চরিত্র সম্বন্ধে মোটামুটি একটা জ্ঞান অর্জন করাটা তেমন অসম্ভব কিছু নয়। যাই হোক, এবার আমি চলি, নইলে মিস নাইট ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
সত্যিই উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠেছিলেন মিস নাইট, এই ভদ্রমহিলাকে নিয়ে পেরে ওঠা মুস্কিল। মিস মারপলকে নিরাপদে ফিরতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন তিনি। সর্বনামে বহুবচন ব্যবহার করা অভ্যেস তার, গম্ভীরভাবে বললেন।
–আমরা এখন নিশ্চয়ই খুবই ক্লান্ত?
–তুমি ক্লান্ত হলেও হতে পারো, আমি কিন্তু একটুও ক্লান্ত নই।
–আগুনের পাশে একটু আরাম করে বসুন। এক কাপ ওভালটিন খাবেন, না কি হরলিক্স?
–একটু ড্রাই শেরী নিয়ে এসো। প্রস্তাবটা পছন্দ হলো না মিস নাইট-এর,ডাক্তার এ ব্যাপারে মত দেবেন কি না–
–সে কাল সকালে তাকে জিজ্ঞেস করে নিলেই হবে, এখন নিয়ে এসো তো।
গসিংটন হল-এ চায়ের নেমন্তন্নে যোগ দিতে এলেন মিসেস ব্যান্ট্রি। পুরোনো বাড়িটিকে ভেঙে-চুরে মনের মতন করে সাজিয়েছেন নতুন বাসিন্দারা। সুমধুর ব্যবহার মেরিনার। এই মধ্যবয়সেও যথেষ্ট মনোহারিনী। তার স্বামী জ্যাসন হাড, আপাতদৃষ্টিতে কুদর্শন হলেও, গভীর চোখের দৃষ্টি ও অকপট হাসিতে ভেতরের মানুষটিকে চিনিয়ে দেয়। মেরিনা বারে বারেই বলছিলেন, এই বাড়িটি খুব ভালো লেগেছে তার, এখানেই থাকতে চান সারাজীবন। কিন্তু এমন কথা হয়তো আরও বহুবার বহু-জায়গার ক্ষেত্রেই মনে হয়েছে তার। মেরিনার সেক্রেটারি এলা-র সঙ্গে পরিচয় হলো। তারও ধারণা শিল্পীরা, বিশেষ করে চিত্রতারকারা এক জায়গায় বিশেষ করে বেশিদিন আটকে থাকতে পারে না। অশান্ত মন ছুটিয়ে নিয়ে যেতে থাকে তাদের। বাস্তবের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক নেই তাদের। আর, জীবনে এত বেশি উত্থান-পতন আর সুখ-দুঃখের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছে মেরিনা, যে তার ভাবাবেগগুলিও একটু অস্বাভাবিক ভাবেই প্রবল। এলার কাছ থেকেই জানতে পারলেন মিসেস ব্যান্ট্রি, জ্যাসন প্রচণ্ড ভালোবাসেন স্ত্রী মেরিনাকে। তাকে আনন্দে রাখার জন্য সব কিছুই করতে পারেন।
বহুদিনের বন্ধু ডাক্তার হেডক মিস মারপলকে দেখতে এসে একটি আশ্চর্য প্রেসক্রিপশান দিয়ে গেলেন, নতুন কোনো রহস্য সমাধানের চেষ্টা করাই জেন মারপলের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একমাত্র প্রয়োজনীয় ওষুধ। মিস নাইট মন্তব্য করলেন, ঐ নতুন আবাসনগুলিতে খুন জখমের মতো ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়, কেননা, ওখানে প্রচুর ছেলেছোকরা আছে, যাদের চেহারা ও গতিবিধি বেশ সন্দেহজনক বলে মনে হয়।
খুনটা সত্যিই হলো, তবে আবাসন-এ নয়।
সেন্ট জন অ্যাম্বুলেন্সের মেলা-র জন্য গসিংটন হল খুলে দেওয়া হয়েছে। এত ভিড় হয়েছে যে বলার কথা নয়। প্রবেশ মূল্যের পাহাড় জমে যাচ্ছে। চমৎকার আবহাওয়া আজ, পরিষ্কার রৌদ্রজ্জ্বল দিন, কিন্তু এত দর্শক সমাগমের সেটাই একমাত্র কারণ নয়, সকলেই গসিংটন হল-এর নতুন চেহারাটা দেখতে চায়, সেই সঙ্গে যদি মেরিনা গ্রেগকে একঝলক দেখতে পাওয়া যায়, তবে তো সোনায় সোহাগা।
সবথেকে বেশি আকর্ষণ করছে সুইমিং পুলটা। যদিও এখানকার আবহাওয়ায় সাঁতার কাটার মতো দিন খুবই কম পাওয়া যায়। এসব জিনিস হলিউড-এই মানায়। তবু বিস্ময় বিস্ফারিত নেত্রে মানুষজন এই বিপুল অর্থব্যয়ে গড়ে তোলা নয়নাভিরাম জলাশয়টি দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে লাগলো।