মারা গেছেন। কিভাবে?
বেশি মাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে। আমরা এখনই প্রেস-কে খবরটা দিতে চাই না। কাজেই আপনাকে অনুরোধ করছি, কথাটা কাউকে বলবেন না।
–নিশ্চয়ই। আচ্ছা, এটা কি একটা দুর্ঘটনা?
–আমার তাই মনে হয়।
–আত্মহত্যাও হতে পারে?
হতে পারে, কিন্তু সেটার সম্ভাবনা কম।
–অন্য কেউ ওঁর ওপর প্রয়োগ করতেও পারে।
–এর সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলেই আমি বিশ্বাস করি। সেটা প্রমাণ করাও অসম্ভব।
-আমি অত্যন্ত দুঃখিত। কিন্তু ডক্টর, আমাকে যে এখুনি মিস্টার হাড-এর সঙ্গে দেখা করতে হবে।
–এখানে অপেক্ষা করুন।
গিলক্রিস্ট ঘরে ঢুকতেই মুখ তুলে চাইলেন জ্যাসন হাড।
নিচে একজন বৃদ্ধা মহিলা বসে আছেন। তিনি আপনার সঙ্গে দেখা না করে এখান থেকে যাবেন না বলছেন। মনে হয় বিশেষ জরুরী কোনো কারণ আছে। আমার মনে হয় ওঁর সঙ্গে দেখা করাই ভালো।
–ঠিক আছে, পাঠিয়ে দিন এখানে। কিছুতেই আর কিছু এসে যায় না।
রোগা চেহারার বৃদ্ধাটিকে এগিয়ে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ালেন জ্যাসন।
-আপনি আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন? কি করতে পারি আপনার জন্য?
–আপনার স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে খুবই দুঃখিত হয়েছি আমি। এ সময়ে আপনাকে বিরক্ত করার কোনো অধিকার নেই আমার। কিন্তু কয়েকটা বিষয় পরিষ্কার করে না নিলে, একজন নিরপরাধীরা অহেতুক শাস্তি পাবে। তাই এভাবে আসতে বাধ্য হলাম।
-নিরপরাধী? কার কথা বলছেন?
–আর্থার বেডকক। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে গেছে।
কি আশ্চর্য! সে তো আমার স্ত্রীকে চেনেই না। তার কাছেও আসেনি সেদিন।
–সে আপনার স্ত্রীকে চেনে মিঃ হেড। আপনার স্ত্রীর প্রথম স্বামী ছিল এই আর্থার বেডকক।–কিন্তু তার নাম তো ছিল আর্থার বিডল।
–ইংল্যান্ডে এসে নামটা পাল্টে নিয়েছে সে। আমি আপনাকে কাল্পনিক গল্প শোনাচ্ছি না, এটাই বাস্তব সত্য।
খুবই আশ্চর্যজনক ঘটনা! তা আমি সেজন্য কি করতে পারি?
–সেদিন মেরিনা কোথায় দাঁড়িয়েছিলেন, সেই জায়গাটা একটু দেখতে চাই।
নিশ্চয় আসুন আমার সঙ্গে।
জ্যাসন দেখালেন কোথায় সেদিন দাঁড়িয়েছিলেন মেরিনা। সেখানে দাঁড়িয়ে চারদিক ভালো করে দেখলেন মিস মারপল। সিঁড়ির ঠিক ওপরেই আছে হাস্যমুখী মেরী ও শিশু যীশুর একটি প্রাণোচ্ছল ছবি।
–ধর্মীয় ছবি। কিন্তু একটা সুখী মা ও তার সন্তানের ছবিও বটে। তাই না মিস্টার হাড?
–হ্যাঁ।
-এখন আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা সরল, পরিষ্কার হয়ে গেছে। আপনার কাছেও নিশ্চয়ই আর কিছু অস্পষ্ট নেই।
নিচে পায়ের শব্দ ও গলার আওয়াজ শোনা গেল। চী ইনসপেক্টর ক্র্যাডক এসে যোগ দিলেন তাদের সঙ্গে। মিস মারপলকে এখানে দেখে অবাক হয়ে গেলেন তিনি।
সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়েই সেদিনের ঘটনার প্রেক্ষাপট, মেরিনার চেহারায় লেডি শ্যালটের মতো ধ্বংস নেমে আসার ইঙ্গিত ইত্যাদি নিয়ে কথা হলো, একটা নতুন কথা বললেন মিস মারপল। তিনি বুঝতে পেরেছেন ধ্বস নেমে আসছিল সেদিন মেরিনার ওপর নয়, মিসেস বেডকক-এর ওপর আর তার বীজ লুকিয়ে ছিল মিসেস বেডককের একটি কথার ওপর।
–সে কথা তো আমার সবাই শুনেছি, তার অসুস্থতা সত্ত্বেও কিভাবে মেরিনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।
-হ্যাঁ, কিন্তু তার অসুখটা ছিল জার্মান মিসেস। এই রোগটা অত্যন্ত ছোঁয়াচে। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের পক্ষে মারাত্মক। আর, সেই সময় মেরিনা গর্ভবতী ছিলেন, তাই না মিস্টার হাড?
-হ্যাঁ। চিকিৎসক ওকে বলেছিলেন, গর্ভাবস্থায় ঐ রোগ হওয়ার জন্যই তার সন্তান সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে জন্মাতে পারেনি। এটা মেরিনা কখনো ভুলতে পারেনি। অবশ্য সে জানতো না, এই অসুখের সংক্রমণটা তার হয়েছিল কার কাছ থেকে।
তাই জানতে পেরেই এতদিনের রুদ্ধ বেদনা ক্রোধের আকার নিল। মিসেস বেডকককে শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন মেরিনা। তার গ্লাসটা হাতের ধাক্কায় ফেলে দিয়ে নিজের বিষ মেশানো গ্লাসটি তুলে দিয়েছিল মিসেস বেডককের হাতে। মেরিনার সঙ্গেই থাকতো ঐ ওষুধ। প্রায়শই নিজের পানীয়ে মিশিয়ে নিতে সে, তাই ব্যাপারটা কেউ লক্ষ্য করে দেখেনি।
মেরিনা-ই যে ইচ্ছাকৃতভাবে গ্লাসটা ফেলে দিয়েছিল, সেটা দেখেছিল গ্ল্যাডিস এবং সম্ভবত এলা। গ্ল্যাডিসের কাছ থেকে খবর পেয়ে গিসিপ্পি এবং এলা, এরা দুজনেই মেরিনাকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে। অবশ্য এলা শুধু ভয়ই দেখিয়েছিল টেলিফোন মারফত। গিসিপ্পি চেয়েছিল টাকা। প্রথম দফার টাকাটা সে লন্ডনে ব্যাংকে রেখেও এসেছিল। কাজেই তাদের সরাতে না পারলে মেরিনার বিপদ কাটছিল না। তাই আরও দুটি হত্যা করলো মেরিনা, আর, নিজেই নিজের কফিতে বিষ মিশিয়ে, ভুয়ো চিঠি দেখিয়ে নিজেকে সন্দেহের উর্দ্ধে রাখার চেষ্টা করতে লাগলো। এটা আপনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাই না মিস্টার হাড? আর্থার বেডকককে কি চিনেছিলেন আপনার স্ত্রী।
-মনে হয় না। তাহলে আমাকে নিশ্চয় বলতো।
জ্যাসনের সঙ্গে মেরিনাকে দেখতে এলেন মিস মারপল। দুগ্ধধবল বিছানায় শুয়ে থাকা মেরিনাকে দেখাচ্ছে পরীর দেশের মেয়ের মতো। বিছানার কাছে হাঁটু গেড়ে বসলেন জ্যাসন, ভাঙা গলায় বললেন,–এটাই কি ভালো হলো না মিস মারপল, অনেক কষ্ট পেয়েছে জীবনে। মৃত্যুতে অন্তত শান্তি পেল।
–সেই শান্তি হয়তো আপনিই এনে দিয়েছেন, তাইনা। আপনি তাকে এত ভালোবাসতেন –এত সুন্দর, এত ভালো ছিল মেরিনা অথচ সবাই ওকে কেবল কষ্ট দিয়েছে, কেউ ওর মনের কথা বোঝেনি।