মিস মারপল এবার সেই মেলার দিনের ঘটনার খুঁটিনাটি বিবরণ নতুন করে জানতে চাইলেন। সেদিন যে সব ছবি তোলা হয়েছিল, তার মধ্যে থেকে একটি ছবি মিস মারপলকে দেখালেন ক্র্যাডক।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে মেরিনা গ্রেগ-এর একটু পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন জ্যাসন। একটু তফাতে আর্থর বেডকককে দেখা যাচ্ছে, সলজ্জভাবে মুখে হাত দিয়ে আছেন। তার স্ত্রী মেরিনা-র হাত ধরে, তার মুখের দিকে চেয়ে কথা বলছেন। কিন্তু মেরিনা তার মাথার পেছনদিকে তাকিয়ে আছেন, মিসেস বেডকক-এর মুখের দিকে নয়। আর; মেরিনার মুখের ভাব হয়ে উঠেছে অনির্বচনীয়।
-হ্যাঁ, মেরিনার মুখে ভাবের এই অভিব্যক্তির কথাই আমি শুনেছিলাম ডলি ব্যান্টিং-এর কাছ থেকে। রিপোর্টার ভদ্রলোকও তোমাকে বলেছিলেন শুনেছি।
–হ্যাঁ, উনি বলেছিলেন, মনে হয় মেরিনা যেন হঠাৎ শক পেয়েছিলেন।
–আচ্ছা, সেদিন মিসেস বেডক মেরিনার সঙ্গে যে সব কথা বলেছিলেন সে সম্বন্ধে আশেপাশের লোকেরা তোমাকে ঠিক কি কি বলেছিল?
–মোটামুটি সবাই একই কথা বলেছিলেন। মিসেস ব্যান্ট্রি বলেছেন, মিসেস বেডকক বলেছিলেন, তিনি নাকি আশৈশব মেরিনা-র ফ্যান। একবার মেরিনাকে দেখার জন্য চিকেন পক্স নিয়েই বিছানা থেকে উঠে চলে গিয়েছিলেন। জ্যাসন হাড ঐ ধরনেরই কথা বলেছিলেন, তবে অসুখটা বলেছিলেন ইনফ্লুয়েঞ্জা। আর্থার বেডককও বলেছিলেন, তার স্ত্রী তাকে ঐ ঘটনার কথা কয়েকবার বলেছেন। সে প্রায় দশ-বারো বছর আগেকার ঘটনা।
এবার, ইচ্ছে করে পানীয়ের পাত্রটি ফেলে দেবার ঘটনাটা নিয়ে ভাবা দরকার। কেন তিনি নতুন জামাটা নষ্ট করেছিলেন?
–কে? মিসেস বেডকক?
-হ্যাঁ। ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে, যদি না–আরে তাই তো! কি বোকা আমি, ব্যাপারটা অন্য দিক থেকে ভাবিনি। সেদিকটার দিকে এবার একটু আলো ফেলতে হবে।
–আচ্ছা আন্টি, আপনি তো প্রায় সব ঘটনারই অতীতের কোনো না কোনো ঘটনার সঙ্গে মিল দেখতে পান। এখানে কি সেরকম কিছু পাচ্ছেন?
-ঐ যে লরিস্টনদের পার্লারমেড ছিল যে মেয়েটা, তার কথা মনে পড়ছে। টেলিফোন রিসিভ করা তারই কাজের মধ্যে পড়তো, কিন্তু সে প্রায় সময়ই যা শুনতো, তা ঠিকঠাক লিখে রাখতে পারতো না। এইসব ভুল সংবাদ নিয়ে বহুবার বহু অনর্থ ঘটেছে ওদের পরিবারে! ওঃ,
আমি সময়মতো মেয়েটিকে নিরাপদে বোর্নমাউথে পাঠিয়ে দিতে পেরেছি!
–মেয়েটি? কোন মেয়েটি?
–ঐ যে গ্ল্যাডিস নামের মেয়েটি। যে গিসিপ্পির কাছে গিয়েছিল সেদিন।
–আপনি ওকে বোর্নমাউথে পাঠিয়েছেন? কেন?
–আমি ওর সঙ্গে দেখা করে কিছু টাকা দিয়েছিলাম, আর বলেছিলাম, এখনই কদিনের ছুটি নিয়ে চলে যেতে।
–এটা কেন করতে গেলেন?
–কেননা, আমি চাইনি ঐ মেয়েটিও খুন হোক।
.
দুদিন পরে মিস মারপলকে ব্রেকফাস্ট দিতে এসে মিস নাইট জানালেন, তার এক পরিচিত ভদ্রমহিলা শীতটা একটি বিলাসবহুল হোটেল-এ কাটাবেন। তিনি সঙ্গিনী হিসেবে মিস নাইটকে চেয়ে চিঠি লিখেছেন। যেতে পারলে মিস নাইট যে খুব খুশী হতেন, তা বোঝাই যাচ্ছিল। কিন্তু মিস মারপলের ভাইপোকে কথা দিয়েছেন মিস নাইট, যে তিনি এখানেই বরাবরের মতো থাকবেন, কাজেই এই প্রস্তাবটা তার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ব্যাপারটা নিয়ে ভাবেত বসলেন মিস মারপল। তিনি এখনও সেরকম স্থবির হননি, এবং হতেও চান না, যে মিস নাইট-এর পরিচর্যা ছাড়া চলবে না। এই অতিরিক্ত পরিচর্যা তাকে ক্লান্ত করে তুলেছে।
ডক্টর হেডককে ডেকে পাঠালেন মিস মারপল। তাঁর বক্তব্য, বয়সের পক্ষে যথেষ্ট সুস্থ আছেন জেন মারপল। তবু একা একটা বাড়িতে তার থাকা উচিত নয়। মিস নাইটকে পছন্দ না হয়, অন্য কাউকে নিয়োগ করলেই হবে।
অল্প কয়েকটি কথা বলার পরেই বিদায় নিলেন মারপল। সময় নেই, প্রচুর জার্মান মিসেসের রোগী আছে তার হাতে।
ডাক্তারের এই শেষ কথাটা কেমন একটা নাড়া দিল মিস মারপলকে। জার্মান মিসে? অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ ওটা।
বাইরে চেরী-র ভ্যাকুয়াম ক্লিনার-এর শব্দ শোনা গেল। একমুহূর্ত কি ভেবে নিয়ে তাকে ভেতরে ডাকলেন মিস মারপল।
-কি ব্যাপার ম্যাডাম? আপনাকে এত অস্থির দেখাচ্ছে কেন?
–আমি খুব অসহায় বোধ করছি চেরী। খুব বুড়ো, আর খুব অসহায়।
–এসব চিন্তা করবেন না, আপনি মোটেই দুর্বল বা অসহায় নন। আমাদের ওখানকার সবাই জানে, আপনি কত অসাধারণ সব সমস্যার সমাধান করেছেন। তারা কেউ আপনাকে অসহায় ভাবে না। ঐসব চিন্তা আপনার মাথায় ঢুকিয়েছে ঐ মহিলাটি।
-মহিলা?
-ওই যে আপনার মিস নাইট। সর্বক্ষণ এত পুতুপুতু করে আপনাকে নিয়ে, যে মনে হয় আপনি একেবারেই অথর্ব। ওকে একেবারে পাত্তা দেবেন না।
–ভদ্রমহিলা খুবই সহৃদয় চেরী।
–অতিরিক্ত যত্ন বেড়ালকেও মেরে ফেলে ম্যাডাম। কেউ আপনার ওপর জোর করে দয়া চাপিয়ে দিলে, সেটা আপনার মোটেই ভালো লাগার কথা নয়।
–কি করা যাবে চেরী। আমাদের প্রত্যেককেই নিজের নিজের সমস্যার সঙ্গে সমঝোতা করে চালিয়ে নিতে হয়।
–তা অবশ্য খুবই সত্যি কথা। এই যে আমার প্রতিবেশিনী মিসেস হার্টওয়েল। ওঁর পাশাপাশি বেশিদিন থাকতে হলে, কবে যে একটা দুর্ঘটনাটা ঘটে যাবে। সবসময় পরচর্চা আর অভিযোগ নিয়েই আছে। গতকালই তো আমার জিম-এর সাথে খুব একচোট ঝগড়া হয়ে গেছে ওনার। কি না আমরা একটু জোরে মিউজিক চালিয়েছিলাম।