মনটা খুব খুশী আছে তার। ট্যাক্সি ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ঝোঁপঝাড়ের মধ্য দিয়ে হল-এ যাবার সর্টকার্ট রাস্তাটা ধরলো সে।
বাড়ির পেছনের দরজাটা নিজের চাবি দিয়ে খুললো সে। বাড়িটা অন্ধকার নিস্তব্ধতায় ভরা। বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল গিসিপ্পি। নিজের আরামদায়ক ঘরটিতে যাবার জন্য সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়, একঝলক ঠান্ডা হাওয়া লাগলো তার গায়ে, বোধহয় কোথাও কোনো জানলা খোলা আছে। এখন সেসব দেখার দরকার নেই। নিজের ঘরের দরজায় পৌঁছে চাবি বের করলো গিসিপ্পি। চাবি ঘুরিয়ে দরজাটা ঠেলে ঘরে ঢোকার সময়ই সে অনুভব করলো ঘাড়ের ওপর একটা কঠিন জিনিসের স্পর্শ।
ট্রিগারে দুবার চাপ পড়লো। সামনের দিকে ঢলে পড়লো গিসিপ্পি।
নিচের ঘরে পরিচারিকা বিয়াংকার ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎ। গুলির শব্দ হলো কি কোথাও। কিছুক্ষণ চুপ করে অপেক্ষা করলো সে। বোধহয় স্বপ্ন দেখছে সে। পরক্ষণেই আবার তলিয়ে গেল অতল নিদ্রায়।
হাঁপাতে হাঁপাতে এসে ঢুকলেন মিস নাইট। মিস মারপলকে দেখেই বলে উঠলেন,–কি সাংঘাতিক ঘটনা!
–আবার কিছু ঘটেছে নাকি?
–আমি আপনাকে বলতে চাই না ডিয়ার, এতে মানসিক আঘাত পেতে পারেন আপনি।
–আপনি না বললে, অন্য কেউ বলবে।
–তা অবশ্য খুবই সম্ভব। সবাই এত বেশি কথা বলে আজকাল।
–কি ঘটেছে?
–ঐ ইটালিয়ান বাটলারকে গত রাতে কেউ গুলি করে হত্যা করেছে।
-হ্যাঁ, এরকম একটা ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল। সে কিছু দেখেছিল বা জেনেছিল, এবং সে বিষয়ে মুখ খুলেছিল।
–আপনি কি আগে থেকেই এসব আন্দাজ করতে পেরেছিলেন নাকি? কি আশ্চর্য! কেন খুন করা হলে তাকে?
–সম্ভবত খুনীকে ব্ল্যাকমেইল করতে গিয়েছিল।
–ওরা বলছিল, গতকাল নাকি সে লন্ডনে গিয়েছিল।
–ওরা নাকি? ইনটারেস্টিং! বাইরে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের শব্দের সঙ্গে গানের সুর শোনা যেতেই মিস মারপল বুঝতে পারলেন, চেরী বেকার এসে গেছে। ডাকলেন তাকে,-চেরী আসবে একবার?
–কি বলছেন ম্যাডাম?
–গসিংটন হল-এর বাটলার গিসিপ্পি গতরাতে খুন হয়েছে, শুনেছো তুমি?
–কে বললো আপনাকে?
–মিসেস নাইট। বাজার থেকে শুনে এসেছেন।
–তা! এখানে আসার পথে আমার তো কারো সঙ্গে দেখা হয়নি, তাই খবরটা শুনতে পাইনি। সে খুন করলো ওকে?
জানা যায়নি। কাল সকালে নাকি ও লন্ডনে গিয়েছিল, রাত্রে ফিরেই খুন হয়েছে।
—লন্ডনে গিয়েছিল? তাহলে গ্ল্যাডিস কি ওর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিল তার আগে? কি জানি!
-গ্ল্যাডিস?
–আমার বন্ধুর মতো, আমাদের বাড়ির কাছাকাছি থাকে। স্টুডিও-র ক্যান্টিনে কাজ করে।
–সে কেন বাটলারের সঙ্গে দেখা করতে চাইছে?
-সেদিন পার্টিতে উপস্থিত ছিল তো, তা একটা নাকি মজার জিনিস দেখেছে। মিসেস বেডককের হাতের গ্লাসটা পড়ে যাওয়া নাকি ইচ্ছাকৃত। সেটাই বলবে বাটলারকে। আসলে ওসব একটা বাহানা, জানেন। ও ঐ গিসিপ্পিকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছে। একটু ঘনিষ্ঠতা করতে চায় আর কি।
মিস নাইটকে জানিয়ে দিলেন জেন মারপল, যে তিনি একটু একা থাকতে চান। একটু ভাবতে হবে তাকে। ঠিক কি দেখেছিল গ্ল্যাডিস? কে ইচ্ছাকৃতভাবে পানীয়টা ফেলেছিল? মিসেস বেডকক? কিন্তু কেন? মনে মনে অস্থির হয়ে উঠলেন মিস মারপল। কিছু একটা করতেই হবে। একা বাইরে যাওয়া নিষেধ, কিন্তু সেটা অমান্য করতেই হবে এবার।
সুদর্শন আমেরিকান যুবকটি এই রাস্তায় ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে বেশ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। রাস্তায় পাকা চুলের এক ভদ্রমহিলাকে দেখে এগিয়ে এলো সে।
–মাপ করবেন ম্যাডাম। আপনি কি বলতে পারেন ব্লেনহেম ক্লোজটা কোথায়?
এখান থেকে ডানদিকে সোজা এগিয়ে বাঁ দিকে মোড় ঘুরবেন, তারপর ডানদিকে ঘুরে সোজা যাবেন। আপনি কার ঠিকানা খুঁজছেন? কত নম্বর?
-ষোলো নম্বর। গ্ল্যাডিস ডিক্সনকে খুঁজছি।
–ও, সে তো হেলিংফোর্থ স্টুডিওতে কাজ করে। ক্যান্টিনে। সেখানেই ওকে পাবেন।
–সে আজ সকালে কাজে আসেনি। গসিংটন হল-এ আজ কাজের লোক কম, তাই ডাকতে এসেছি ওকে।
-হ্যাঁ, তা তো বটেই। বাটলারকে তো কাল গুলি করে হত্যা করেছে কেউ? তাই না?
–এখানে খবর খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায়, তাই না?
-সত্যিই তাই। মিস্টার হাড-এর সেক্রেটারিও কালই কিভাবে যেন মারা গেছেন শুনেছি। কি যে হচ্ছে চারদিকে।
সেই দিনই আর একটু বেলার দিকে ডিটেকটিভ সার্জেন্ট উইলিয়াম টিলার গ্ল্যাডিসের খোঁজ করতে তার বাড়িতে এলেন।
জানা গেল, গ্ল্যাডিস বাড়িতে নেই, কয়েকদিনের ছুটি কাটাতে গেছে। কোথায় যাচ্ছে সেটা পৌঁছে ফোন করে জানাবে। শুধু বলে গেছে, বিনে পয়সায় বেড়াতে যাবার একটা সুযোগ পেয়ে গেছে।
স্টুডিওতে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, গ্ল্যাডিস সকালেই ফোন করে জানিয়েছে, সে এক সপ্তাহ কাজে আসতে পারবে না। স্টুডিও মহল থেকে আরও জানা গেল, মেরিনা-র কফি-র কাপে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। তার স্বামী নিজে পরীক্ষা করিয়েছেন।
চীফ ইনসপেক্টর ক্র্যাডক দেখা করলেন মেরিনা-র স্বামী জ্যাসন হাড-এর সঙ্গে। অত্যন্ত বিচলিত দেখাচ্ছিল জ্যাসন হাড-কে।
–আমি যে কফিটা পরীক্ষা করিয়েছি, সেটা আমার নিজস্ব অধিকার বলেই করেছি ইনসপেক্টর।
যদি আপনি কফিতে কিছু মেশানো হয়েছে বলে সন্দেহ করে থাকেন, তবে আপনার উচিত ছিল, আমাদের সে কথা জানানো। আমারই ব্যবস্থা নিতাম।