-যখন মিসেস বেডকক মারা গেলেন?
-না না, যখন ওঁর হাতের পানীয়ের পাত্রটা পড়ে গেল। ওটা ইচ্ছে করে করেছিল, আমি স্পষ্ট দেখেছি। ভদ্রমহিলা কি সুন্দর করে একটা ড্রেস পরেছিলেন, একদম নতুন! সেটা কেউ ওভাবে নষ্ট করে? আমি যদি ওরকম একটা ড্রেস পেতাম! সে যাই হোক, ঐ মজার ঘটনাটা মানে ইচ্ছে করে গ্লাস ফেলার ঘটনাটা ওদের বাটলার গিসিপ্পিকে নিশ্চয়ই বলবো।
–ঐ ইটালিয়ান বাটলারটা, ওকে কেন?
–আরে কিছু একটা কথা বলা যাবে তো ওর সঙ্গে। কি সুন্দর দেখতে না? আর, কেমন অভিজাত চাল চলন, তাই না?
ইটালিয়ানদের চক্করে পড়তে যেও না গ্ল্যাডিস। তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি।
–আমি ওকে শুধু কথাটা বলবো, আর জিজ্ঞেস করবো, এ ব্যাপারে আমার কি করা উচিত।
–তোমার ইচ্ছে। যাই হোক, প্যাটার্নটা দাও, ঐ ভোগ এরটা। চলি গ্ল্যাডিস। বাই।
–বাই চেরী।
ডক্টর হেডক, মিস মারপলকে উলের জট ছাড়াতে দেখে মৃদু হাসলেন,-খুনের রহস্যটারও কি সমাধান করে ফেলেছেন মিস মারপল?
–আমার ব্রেনটা আর আগের মতো কার্যকরী নেই ডক্টর। ওটারও বয়স হয়েছে।
–আমাকে বোকা বানানো যাবে না জেন মারপল। আপনাকে আমি আজ থেকে চিনছি না।
–সত্যিই বুঝতে পারছি না, গ্লাসে বিষটা মেশালো কি করে?
–কোনো আইড্রপের মধ্যে করে বিষটা এনেছিল হয়তো।
–তা, সেটা দেওয়ার সময় কেউ দেখতে পাবে না, এতটা নিশ্চিত হলো কি করে? কুড়ি জনের মধ্যে একজন অন্তত তো দেখেছে, কিন্তু সে কথাটা কাউকে বলেনি।
-কেন বলেনি বলে মনে হয়।
–হয়তো সে ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারেনি। অথবা এইসব চিত্রতারকারা যখন তখন পানীয়ের সঙ্গে নানারকম ওষুধ মিশিয়ে খায় শুনেছি, সেরকমই একজন কেউ এটা করেছে বলে, যে দেখেছে, তারও কোনো সন্দেহ হয়নি।
এছাড়া আর কি হতে পারে?
–সেটাই সবচেয়ে দুশ্চিন্তার। হয়তো যে দেখেছে, সে হত্যাকারীকে ব্ল্যাকমেল করার জন্য চুপ করে আছে, অথবা এতক্ষণে করতে শুরু করে দিয়েছে। এই ব্যাপারটা ভাবতেই কেমন আশংকা হচ্ছে আমার।
-সেক্ষেত্রে তো আরও খুন হবার সম্ভাবনা থেকে যায়?
–ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবো, সেরকম যেন না হয়।
রিসিভারটা নামিয়ে রেখে নিজের মনেই হাসলো এলা। খুব ভয় পাইয়ে দেওয়া গেছে। চীফ ইনসপেক্টর নিজেকে যতই চালাক মনে করুক না কেন, এলা-র মনের কথা বার করা তার কর্ম নয়। টেলিফোনে খুব ভয় পাইয়ে দেওয়া গেছে খুনীকে। এবার দেখা যাক, কি হয়?
কিন্তু এই হে-ফিভারটা বড় জ্বালাচ্ছে।
অফিসে আসতেই জ্যাসনের গম্ভীর মুখ দেখে বিস্মিত হল এলা।
–কি হয়েছে কি?
–ঐ কফি, যেটা মেরিনার কাপে ছিল, সেটা পরীক্ষা করে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
–কিন্তু ওটা তো তুমি ফেলে দিয়েছিলে?
–না, কাউকে না জানিয়ে একটুখানি পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলাম।
–তাহলে তো মেরিনা ঠিকই বলেছিল। কফিটা ওর বেশি তেতো লেগেছিল।
-না, ঠিক বলেনি। আর্সেনিকের কোনো স্বাদ নেই। কিন্তু ওর ইনস্টিংক্ট ঠিকই সাড়া দিয়েছিল।
-আর, আমরা ভেবেছিলাম ও শুধু শুধু হিস্টোরিক্যাল হচ্ছে।
–ও তো হিস্টোরিক্যালই! চোখের সামনে একটা মৃত্যু দেখেছে, একটার পর একটা ভয় দেখানো চিঠি আসছে, না হয়ে উপায় কি? আজ কি এরকম কোনো চিঠি এসেছে?
-না।
-কে যে এসব করছে। অবশ্য জানলা দিয়ে যে কেউই বাইরে থেকে চিঠি ফেলে দিতে পারে। দেখি, এ বিষয়ে আর কি সতর্কতা নেওয়া যায়। আচ্ছা, কাজের লোকদের কাউকে যদি টাকার লোভ দেখিয়ে মেরিনার খাবারে বিষ দিতে বলে? গিসিপ্পি যদিও আমাদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন আছে, তবু টাকার ব্যাপারে ওকে বিশ্বাস করা যায় না।
–এভাবে উল্টোপাল্টা সন্দেহ করে কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ জ্যাসন!
–সুখ কি চিরদিন মেরিনার কাছে অধরাই রয়ে যাবে এলা? এখানে প্রথম এসে কত আনন্দ পেয়েছিল, তুমি তো জান। খুব নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম আমি। হঠাৎ এই বিনা মেঘে বজ্রপাত।
–তুমি কি বিশ্বাস করেছিলে মেরিনা এখানে এসে চিরদিনের মতো সুখী হয়ে যাবে?
হাসলো জ্যাসন,–না, তা ভাবিনি, মেরিনাকে অনেকদিন ধরে চিনি তো! তৰৈ ভেবেছিলাম বছর দুইও যদি এখানে শান্তিতে থাকতে পারে, হয়তো ওর আত্মবিশ্বাস বাড়বে, নতুন এক মেরিনা-র জন্ম হবে। যখন খুশী থাকে, মেরিনাকে ঠিক শিশুর মতো মনে হয়। সেই খুশীটুকু দেখতে চেয়েছিলাম আমি।
-জীবনটা যে গোলাপের শয্যা নয়, তা তো তুমি ভালো করেই জানো জ্যাসন। যাই হোক, তোমাকে জানিয়ে রাখি, গিসিপ্পি আজ লন্ডনে গেছে। ওর কোনো আত্মীয় নাকি মোহে অঞ্চলে থাকে, সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকেই দেখতে গেছে। আজ রাতেই ফিরবে, মেরিনার সঙ্গে দেখা করে অনুমতি নিয়ে গেছে।
-ঠিক আছে।
-এই হাঁচিটা কিছুতেই কমাতে পারছি না। অ্যাটমাইজারের সাহায্য নিতেই হবে। আমি চলি জ্যাসন।
ক্ষুব্ধ মন নিয়ে নিজের ঘরে ফিরে এলো এলা। মেরিনা, মেরিনা, মেরিনা, এছাড়া অন্য কোনো চিন্তা কি আসতে নেই জ্যাসনের মনে।
অ্যাটমাইজার প্রথম বার স্প্রে করার সঙ্গে সঙ্গেই অবশ হয়ে গেল তার সমস্ত শরীর। তেতো অ্যামন্ড বাদামের গন্ধে ভরে গেল ঘর।
স্থানীয় ইনসপেক্টর কর্নিশ খবর পেলেন, লোলা ব্রিডস্টার, মিঃ ফেন এবং মার্গট বেনস তিনজনেই আজ নিজস্ব কাজে শহরের বাইরে গেছেন। গিসিপ্পিও নাকি সকালেই লন্ডনে চলে গেছে। অবশ্য তার গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য পুলিশের লোক নিয়োগ করা হয়েছে। এলার-র অ্যাটমাইজার-এ সায়োনাইড ঢেলে দেবার কাজটা করা গিসিপ্পির পক্ষে খুবই সহজসাধ্য ছিল। মধ্যরাত্রিরও পরে গসিংটন হল-এ ফিরলো গিসিপ্পি। সেন্ট মেরী মিড-এ আসার ট্রেনটা ধরতে পারেনি সে। তাই, মার্কেট বেসিং থেকে ট্যাক্সি নিয়ে আসতে হয়েছে।