-তারপর কি হলো?
-উনি আমাকে চিনতেই পারলেন না, জানেন? পাঁচবছর বয়স থেকে নবছর বয়স পর্যন্ত আমি ওর সঙ্গে ছিলাম, তবু আমাকে একটুও চিনতে পারলেন না।
–আপনি তাকে আপনার পরিচয় দেননি?
–না, সেটা আমি কোনোদিনই করবো না।
–আপনি কি মেরিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, মিস বেনস?
হেসে উঠলো মেয়েটি।
–কি হাস্যকর প্রশ্ন করছেন ইনসপেক্টর। কিন্তু, আমার মনে হয়, এটা আপনার কাজেরই অঙ্গ। না, আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি, আমি ওকে হত্যা করতে চেষ্টা করিনি।
-কিন্তু কে ওঁকে হত্যা করতে চায়, সে বিষয়ে কি আপনার কোনো ধারণা আছে?
-না, এ বিষয়ে আমার নির্দিষ্ট কোনো ধারণা নেই, যে কেউই হতে পারে। গুডবাই চীফ ইনসপেক্টর। আমার সত্যিই আর কিছু বলার নেই।
ষোলো নম্বর অব্রে রোডে তরুণী মিসেস বেকার তার স্বামীর সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলো। প্রাতরাশ তৈরি করে দুটি প্লেটে সাজালো মিসেস বেকার, ওরফে চেরী। মিক্সড় গ্রীল-এর গন্ধ পেয়ে সচকিত হলো তার স্বামী জিম বেকার।
-কি ব্যাপার চেরী? স্পেশাল খাবার? আজ কি আমার জন্মদিন নাকি, না অন্য কিছু?
–তোমার বেশি করে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া উচিত।
–কে বলেছে?
–মিস মারপল। যদিও আমার মনে হয় ওনার নিজেরই আর একটু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। ঐ বুড়ী মিস নাইট কেবল ওঁকে কার্বোহাইড্রেট খাইয়ে রাখে।
ইনভ্যালিড-দের জন্য এটাই তো ঠিক পথ্য।
-উনি মোটেই ইনভ্যালিড নন, একটু বুড়ো হয়েছেন মাত্র। আর ঐ মিস নাইট কেবল আমাকে কিভাবে কাজ করতে হয় তা শেখাতে চেষ্টা করে। এমন কি রান্না নিয়েও জ্ঞান দিতে আসে, জানোনা? এ ব্যাপারটা অন্তত আমি ওর চেয়ে ভালো জানি।
নিশ্চয়ই! রান্নায় তোমাকে কেউ হারাতে পারবে না চেরী। তা তোমার মিস মারপল হঠাৎ আমার খাবার-দাবারের কথা বললেন কেন? যখন ওঁর বাড়িতে কল সারাই করার কাজে গিয়েছিলাম, আমাকে দেখে কি দুর্বল বলে মনে হয়েছিল ওঁর?
স্বামীর কথা শুনে হেসে উঠল চেরী,–না না। উনি আমাকে বললেন, তোমার স্বামী খুবই সুপুরুষ।
-তুমি কি তা মনে কর না?
–আরে শোনোই না। বললেন, ওকে তুমি ভালো ভালো রান্না করে পেট ভরে খাওয়াবে, পুরুষ মানুষদের এটা খুব দরকার। বাজার থেকে টিন ফুট বা রেডিমেট পাই কিনে এনে গরম করে খেতে দিও না। অবশ্য আমি সেরকম খুব কমই করি।
-আমার জন্য সেরকম করা তোমার পক্ষে সম্ভবও নয়। ওগুলোর স্বাদ আমার ভালো লাগে না।
-তোমার ঐ খেলনা জাহাজ তৈরি ছেড়ে খাবারের দিকে মন দাও দেখি। আর শোনো, খেলনা তৈরির ঐ কিটটা তুমি তোমার ভাগনে মাইকেলের জন্য কিনেছে বলে আমাকে ভোলাতে এসো না। ওটা তুমি নিজে খেলবে বলেই কিনেছো।
মাইকেলের এখনও এটা নিয়ে খেলার বয়স হয়নি চেরী। সলজ্জভাবে বললো জিম।
-তার মানে তুমি পুরো সন্ধেটা এটা নিয়েই কাটাবে। কিছু গান শুনলে হত না? যে নতুন রেকর্ডাটার কথা বলছিলে, সেটা কি এনেছো?
-হ্যাঁ। ওইতো।
–ঐ রেকর্ডগুলো ফুল ভলুমে না শুনলে, পুরো মজাটা পাওয়া যায় না। কিন্তু তার তো উপায় নেই। এখনই পাশের ফ্ল্যাটের মহিলা দেওয়ালে আওয়াজ করে শব্দ কমাতে বলবেন। এভাবে কি থাকা যায়?
-হ্যাঁ, ঐ রেকর্ডগুলো আস্তে শোনার কোনো মানে হয় না। সবাই সেটা জানে। আর, ওর বেড়ালটা যে যখন তখন আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে, বাগানে গর্ত করে, তখন?
-সত্যি জিম, প্রথমে বাড়িটা পছন্দ হলেও, এখন আর একটুও ভালো লাগছে না, শুধু ঐ কুচুটে প্রতিবেশীদের জন্যে। একটুও প্রাইভেসি নেই এখানে।
–ট্রে-টা একটু সরিয়ে নেবে চেরী, এগুলো ঠিকমতো বিছিয়ে রাখতে পারছি না।
-তুমি আছো তোমার খেলনা নিয়ে, গান শোনার উপায় নেই, আমি বরং গ্ল্যাডিস ডিক্সনের কাছ থেকে ঘুরে আসি, একটা প্যাটার্ন আনবো ওর কাছ থেকে।
–ঠিক আছে ডার্লিং।
নতুন ড্রেস তৈরি করতে ব্যস্ত ছিল গ্ল্যাডিস। বান্ধবীকে দেখে উঠে দাঁড়াল। ফিল্ম স্টুডিও-র ক্যান্টিনে কাজ করে সে।
–স্টুডিওতে আজ নতুন কিছু খবর শুনলে নাকি গ্ল্যাডিস?
–মেরিনা গ্রেগ কাল এসেছিল স্টুডিওতে। ওঃ যা চেঁচামেচি করছিল না।
–কি নিয়ে চেঁচামেচি?
-আরে, একটাই পট থেকে সবাইকে কফি দেওয়া হয়েছিল, অথচ মেরিনা একটু চুমুক দিয়েই বললো, তার সন্দেহ হচ্ছে কফিতে কেউ বিষ মিশিয়ে দিয়েছে।
–তারপর কি হলো?
–মিঃ হাড, সবাইকে শান্ত করলেন। সত্যি, এ ব্যাপারে ওঁর তুলনা হয় না। মেরিনার কফিটা সিঙ্কে ঢেলে ফেলে দিলেন।
-কাজটা খুব হয়েছে।
তার মানে? কোন কাজটা?
কফিটা ফেলে দিলেন কেন? যদি সত্যিই ওর মধ্যে কিছু মেশানো থাকে, সেটা তো আর জানা যাবে না।
–তোমার কি মনে হয়, সত্যিই কফিতে বিষ ছিল?
-সেদিন পার্টিতে ওঁর গ্লাসেই তো বিষ মেশানো ছিল। একবার ব্যর্থ হয়েছে খুনী, আবারও তো চেষ্টা করতে পারে!
সেদিন মেরিনা তার চেয়ার থেকে উঠে যাবার পরক্ষণেই ওপর থেকে মার্বেলের একটা মূর্তি ঐ চেয়ারের ওপর পড়ে, চেয়ার ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। মেরিনা ওখানে থাকলে কি হত বল তো? আমি ভাবছি, স্টুডিও-র কাজটা ছেড়ে দেবো।
-সে কি? কেন?
–আরে, মেরিনাকে মারতে গিয়ে খুনী একবার ভুল করে মিসেস বেডকককে মেরেছে, পরের বার যদি ভুল করে আমাকে মেরে ফেলে!
–হ্যাঁ, কথাটা ভাববার মতো বটে।
–জানো চেরী, সেদিন তো আমি ঐ পার্টিতে সাহায্য করতে গিয়েছিলাম? মেরিনার কাছে কাছেই ছিলাম।