রেইনগার্ড স্টুডিওতে। কিছুদিন অ্যান্ড্রু কুইল্প-এর সঙ্গে ছিলাম। ওনার কাছ থেকেই অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।
-আপনি সেভেন স্প্রিং-এ থাকতেন, তাই না?
–আপনি তো আমার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানেন দেখছি।
–আপনি তো একজন স্বনাম খ্যাত ফোটোগ্রাফার, আপনার সম্বন্ধে কাগজপত্রে তো বহুবার অনেককিছু লেখা হয়েছে। তা, আপনি ইংলন্ডে এলেন কেন?
-ও, আমি এই দেশটাকে পছন্দ করি। এখানেই জন্মেছি। অবশ্য খুব ছোটোবেলাতেই আমেরিকায় চলে গিয়েছিলাম।
–আমার মনে হচ্ছে আপনি আমাকে আরো কিছু বলতে পারেন।
–আপনি কি বলতে চাইছেন?
–আপনি যা বলছেন, তার চেয়ে অনেক ভালোভাবে মেরিনা গ্রেগকে চিনতেন।
–প্রমাণ করুন। আপনি কল্পনাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
-না, আমি তা করছি না, আর এটা আমি প্রমাণ করতে পারি। আপনার পাঁচবছর বয়েসে মেরিনা আপনাকে দত্তক নিয়েছিলেন। তাঁর কাছে আপনি চারবছর ছিলেন। এটা স্বীকার করছেন না কেন?
ক্রোধে লাল হয়ে উঠলো মার্গটের মুখ, উঠে দাঁড়ালো সে।
–ঠিক আছে, ঠিক আছে। এটা সত্যি। মেরিনা গ্রেগ আমাকে তার সঙ্গে আমেরিকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আমার মায়ের আটটি সন্তান ছিল, কোথাও কোনো বস্তিতে থাকতো সে। বোধহয় প্রায়ই চিত্রতারকাদের নিজের দুঃখ দৈন্যের কথা জানিয়ে চিঠি লিখতো, এরকম বহু লোকেই লিখে থাকে। নিজের সন্তান যাতে সব রকম সুখ সুবিধে পায়, যা সে নিজে কখনো দিতে পারবে না, তার জন্য তাকে দত্তক নিতে অনুরোধ করে। পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে জঘন্য বলে মনে হয়।
–আপনারা তিনজন ছিলেন। তিনটি শিশুকে ভিন্ন ভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল।
-হ্যাঁ, আমি, রড ও অ্যাংগাস। অ্যাংগাস আমার চেয়ে বয়সে বড়ো। রড ছিল একেবারেই শিশু। আমরা খুব সুন্দর জীবনযাপন করছিলাম। সব রকমের সুখ-সুবিধে ছিল। তার ওপর মেরিনা ছিলেন আমাদের মা, আমাদের আদর করতেন, আমাদের নিয়ে ছবি তুলতেন। অসাধারণ সুন্দর সেন্টিমেন্টাল সব ছবি।
-কিন্তু তিনি সত্যিই বাচ্চা চেয়েছিলেন, সবটাই পাবলিসিটি স্টান্ট নয়, তাই না?
–হয়তো তাই, তিনি সন্তান চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আমাদের চাননি, এটা একটা মহৎ অভিনয় মাত্র। আমার পরিবার, নিজের একটা পরিবার থাকা কত সুখময় ইত্যাদি দেখাতে চেয়েছিলেন। আর ইজি তাকে এটা করতে দিত, তার একটু বোঝা উচিত ছিল।
–ইজি মানে ইসিডোর রাইট?
–হ্যাঁ, মেরিনার তৃতীয় বা চতুর্থ স্বামী। আমি ভুলে গেছি। উনি সত্যিই খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি মেরিনাকে বুঝতেন, এবং মাঝে মাঝে আমাদের জন্য চিন্তিত হতেন। আমাদের প্রতি খুবই সদয় ছিলেন, কিন্তু কখনও আমাদের পিতা হবার ভান করতেন না। নিজের লেখা নিয়ে থাকতেই ভালোবাসতেন। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে তাকে একজন শক্তিমান নাট্যকার হিসেবে গণ্য করা হবে।
-এটা কতদিন ধরে চলেছিল?
-যখন এই অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন মেরিনা। না, তা অবশ্য পুরোটা ঠিক নয়, তিনি যখন জানতে পারলেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। নিজের সন্তান পেতে চলেছেন, ততদিন পর্যন্ত। তারপর ওঁর কাছে আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল। আমাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাদীক্ষার জন্য অনুদানের ব্যবস্থা করে দিয়ে ফস্টার হোম-এ পাঠিয়ে দেওয়া হলো। কেউ বলতে পারবে না মেরিনা আমাদের জন্য ভালো ব্যবস্থা করে দেননি। কিন্তু সে আমাদের কখনো চায়নি। সে শুধু নিজের গর্ভজাত সন্তান চেয়েছিল।
–এজন্য তাকে দোষ দিতে পারা যায় না।
–নিজের সন্তান চাওয়ার জন্য দোষ দিচ্ছি না তাকে। কিন্তু আমাদের কথা কে ভেবেছিলো? তিনি আমাদের নিজের বাবা-মা-এর কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলেন, আমাদের নিজস্ব স্থান থেকে তুলে এনেছিলেন। আমার নিজের মা, কিন্তু তাঁর নিজের সুবিধের জন্য আমাকে বিক্রি করে দেননি। ঐ বোকা মহিলাটি আমার সুখ-সুবিধের কথাই ভেবেছিলেন, আমার শিক্ষাদীক্ষা, সমৃদ্ধিময় জীবনযাপন, ইত্যাদির কথা। ভেবেছিলেন, আমার পক্ষে সবথেকে ভালো জিনিসটাই দিচ্ছেন আমাকে। আমার পক্ষে ভালো? যদি তিনি জানতেন–
–এখনও আপনার মনে তিক্ততা আছে?
-না, এখন আর নেই। পুরোনো কথা বলা মানে সেই তিক্ত অতীতে ফিরে যাওয়া, তাই এরকম মনে হচ্ছে।
-মেরিনার শিশুটির কথা তখনই তোমরা জেনেছিলে?
–নিশ্চয়ই, সবাই জানতো, আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন মেরিনা তখন। আর শিশুটি জন্মালো জড়বুদ্ধি হয়ে। উপযুক্ত শিক্ষাই হয়েছে মেরিনার। তিনি আর আমাদের ফিরিয়ে নেননি।
–তাকে আপনি খুব ঘৃণা করেন?
–কেন করবো না? কোনো মানুষের প্রতি যতখানি অবিচার করা যায়, তাই করেছেন উনি। প্রথমে আমাদের বুঝতে দিলেন যে আমাদের তিনি চান, ভালোবাসেন। তারপরেই জানা গেল, ঐ সবটাই তাঁর মুখোশ। প্রবঞ্চনা।
–তোমার ঐ দুটো ভাই-এর কি হলো।
–আমরা পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। রড মিক্স ওয়েস্টের কোথাও চাষবাস করছে, তার স্বভাবটাই খুব আনন্দময়, বরাবরই তাই ছিল। অ্যাংগাস এখন কোথায় আছে জানি না।
মেরিনা কি সেদিন আপনাকে দেখে আশ্চর্য হয়েছিলেন? নাকি আপনাকে খুশি করার জন্যই ফোটোগ্রাফার হিসেবে আপনাকে ডেকেছিলেন?
-আরে, উনি তো এসব ব্যবস্থাপনার কথা কিছুই জানতেন না। আমিই তাকে দেখতে চেয়েছিলাম তাই একটু চেষ্টা করেছিলাম, কাজটা পাওয়ার জন্য। দেখতে চেয়েছিলাম, এখন মেরিনা-কে দেখতে কেমন হয়েছে।