নোটবুকে লেখা শেষ নামটির দিকে আর একবার তাকালেন ক্র্যাডক। ঐ মহিলার ফোন নম্বরে বারবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। মার্গট বেত্সকে নিজে গিয়েই ধরতে হবে।
মার্গট-কে পাওয়া গেল আউটডোরে বিজ্ঞাপনের ছবি তুলতে ব্যস্ত অবস্থায়। ইনসপেক্টর-এর আগমনে সে কাজ গুটিয়ে তাকে নিজের অফিসে নিয়ে এলো।
–আপনার জন্য আমি কি করতে পারি ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর ক্র্যাডক?
–গসিংটন হল-এর ঐ দুর্ঘটনার বিষয়ে যদি দয়া করে কিছু বলেন। শুনেছি, আপনি সেদিন ওখানে উপস্থিত ছিলেন।
-হ্যাঁ। আমি ওখানে ছবি তুলতে গিয়েছিলাম। মানে ঐ কাজের জন্য আমাকে নিয়োগ করা হয়েছিল।
প্রোফেশনাল ফোটোগ্রাফার হিসেবে?
–হ্যাঁ, আমাকে কয়েকটি বিশেষ ধরনের ছবি তুলতে বলা হয়েছিল। এরকম কাজ আমি প্রায়ই করি। ফিল্ম স্টুডিওর জন্যও অনেক ছবি তুলেছি। তবে, সেদিন আমি মেলা-র কয়েকটি ছবি তুলেছিলাম। এরপর মেরিনা ও জ্যাসন হাড-এর সঙ্গে বিশিষ্ট অতিথিদের সাক্ষাৎকারের কয়েকটা ছবি তুলেছি।
-বুঝতে পেরেছি। আপনি আপনার ক্যামেরাটা সিঁড়িতে বসিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, কিছু সময়ের জন্য। ওখান থেকে আমি বেশ ভালো করে একটা অ্যাংগেল পাচ্ছিলাম। নিচ থেকে যারা উঠছিলেন তাদের ক্যামেরায় পাওয়া যাচ্ছিল, এবং পরমুহূর্তে ক্যামেরা ঘুরিয়ে তারা মেরিনার কাছে পৌঁছে গিয়ে আপ্যায়িত হচ্ছেন, এটাও ধরা যাচ্ছিল। মানে, আমাকে খুব একটা নড়াচড়া করতে হচ্ছিল না।
–আপনি ওখান থেকে মেরিনাকে ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছিলেন?
–খুব ভালোভাবে।
–আর জ্যাসন হাডকে?
–সবসময় নয়। উনি খুবই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। পানীয় এনে দিচ্ছিলেন, অতিথিদের একে অন্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। এই ধরনের কাজ আর কি, আর আমি ঐ মিসেস বেডকক-কে পানীয় নিতে দেখিনি। আসলে কোনজন ছিলেন ঐ ভদ্রমহিলা, তা-ই আমি বুঝতে পারছি না।
–মেয়রের আসাটা মনে আছে আপনার?
-হ্যাঁ, মেয়রকে মনে আছে আমার। তিনি তো সরকারী পোশাক পরেই এসেছিলেন, চেন টেন সমেত। তার ছবিও তুলেছি। প্রোফাইলটা বেশ নিষ্ঠুর।
–তার ঠিক আগেই মিস্টার ও মিসেস বেডকক উঠেছিলেন।
–দুঃখিত, তা-ও আমার ওঁদের চেহারা মনে পড়ছে না।
-আপনি কি লক্ষ্য করেছিলেন, মেরিনাকে একটা সময় অসুস্থ দেখাচ্ছিল, বা তার মুখের ভাব অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল?
মার্গট বেনস সামনে ঝুঁকে পড়ে সিগারেট কেস থেকে একটা সিগারেট বের করে নিল। সেটাকে লাইটার দিয়ে জ্বালালো। যদিও প্রশ্নটার উত্তর দিল না, তবু ইনসপেক্টর তাকে উত্তর দেবার জন্য কোনো চাপ দিলেন না। তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন। একসময় মেয়েটি হঠাৎই বললো, আমাকে একথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?
-কেন না, এই প্রশ্নটার একটা বিশ্বাসযোগ্য উত্তর পাওয়া খুবই দরকার আমার।
–আমার উত্তরটা বিশ্বাসযোগ্য হবে বলে মনে হয় আপনার।
-হ্যাঁ, সত্যি কথা বলতে কি, আমার মনে হয়, মানুষের মুখের ভাব পরিবর্তন ক্যামেরার চোখ দিয়ে লক্ষ্য করা আপনার অভ্যেস আছে। কেননা, আপনি বিশেষ কোনো মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দী করার অপেক্ষায় থাকেন। আপনি কি সেদিন সেরকম কিছু দেখেছিলেন?
–আরও কেউ ওটা দেখেছে, তাই না?
–হ্যাঁ একাধিক লোক। কিন্তু সেটা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশ করেছে।
–যেমন?
-একজন বলেছে মেরিনাকে চমকে উঠতে দেখেছিল, আর একজন বলেছে, ওঁর দৃষ্টিতে একটা অদ্ভুত শীতলতা জমাট বেঁধে উঠতে দেখা গিয়েছিল।
-ফ্রোজেন লুক?
-হ্যাঁ। একজন আবার বলেছেন সেই মুহূর্তে মেরিনা-কে দেখে তার টেনিসনের লেডি অব শ্যালটকে মনে পড়ে গিয়েছিল, সেই যে–দি মিরর ক্র্যাকড় ফ্রম সাইড টু সাইড, দি ডুম হ্যাঁজ কাম আপন মি, ক্রায়েড দি লেডি অব শ্যালট।
-ওখানে কোনোও আয়না ছিল না, তবে থাকলে হয়তো সেটা ফেটে যেত।
একথা বলেই উঠে দাঁড়ালো মার্গট,একটু অপেক্ষা করুন। বর্ণনা করার থেকেও ভালো জিনিস দেখাবো।
অফিসঘরের একপ্রান্তের পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল মার্গট। একটু পরেই বেরিয়ে এলো সে-দেখুন, দরকারের সময় আসল জিনিসটা খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিও অবশেষে পেয়ে গেছি।
ক্র্যাডকের কাছে সে তাকে একটি ছবির প্রিন্ট দিল। ক্র্যাডক দেখলেন, মেরিনা গ্রেগ-এর একটি চমৎকার ফোটোগ্রাফ। যে মহিলাটির সঙ্গে তিনি করমর্দন করছেন, ক্যামেরার দিকে পিছন করে থাকায় তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু মেরিনা সেই মহিলার দিকে তাকিয়ে নেই। ক্যামেরার একটু বাঁদিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। মনে হচ্ছে সেদিকে কোনোও কিছু দেখে তার এমন মানসিক প্রতিক্রিয়া হয়েছে, যা অনুভূতির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা অসাধ্য। মরণোন্মুখ একটি মানুষের চোখে একবার এরকমই দৃষ্টি দেখেছিলেন ক্র্যাডক।
–ছবিটা কি আমি রাখতে পারি?
নিশ্চয়ই। এর নেগেটিভটা আছে আমার কাছে।
-এটা আপনি প্রেস-এ পাঠাননি কেন? এরকম নাটকীয় একটি ছবির জন্য কোন কোনো কাগজ ভালো দাম দিতে রাজি হতো।
-যদি হঠাৎ কোনো মানুষের ভেতরটা দেখতে পাওয়া যায়, তার থেকে আর্থিক ফায়দা তুলতে লজ্জা করে না কি?
-মেরিনা গ্রেগকে ভালোভাবে জানতেন?
–না।
–আপনি তো স্টেটস থেকে এসেছেন, তাই না?
-আমি জন্মেছি ইংলন্ডেই। ট্রেনিং নিয়েছি আমেরিকায়। তারপর এই বছর তিনেক হলো এখানে এসেছি।
-কোথায় ট্রেনিং নিয়েছেন?