–কেমন তদন্ত এগোচ্ছে ইনসপেক্টর? আমার জন্য ছিটেফোঁটা কিছু খবর নিয়ে এসেছেন নাকি?
-এখন নয়, পরে হয়তো দিতেও পারি।
–এই ঠেকিয়ে রাখার অভ্যেসটা সব পুলিশ অফিসারের মজ্জাগত, তাই না চীফ ইনসপেক্টর। আপনারা আমাদের কিছুতেই কিছু খবর দিতে চান না। তা এখানে কি মনে করে এসেছেন?
-তোমার কাছেই এসেছি।
–কি সর্বনাশ! আপনি কি মনে করেন আমি হিথার বেডকক-কে খুন করেছি, অথবা মেরিনা গ্রেগকে খুন করতে গিয়ে মিসেস বেডকককে খুন করে ফেলেছি?
-আমি ওরকম কিছু বলছি না।
না, আপনি তা বলছেন না, কেননা আপনি সবসময় সঠিক থাকতে চান। ধরে নিলাম, আমার সেদিন খুন করার সুযোগ ছিল, কিন্তু আমার মোটিভটা কি?
–আমি শুধু তোমার মুখ থেকে সেদিনের কথা শুনতে চাই।
-সে তো পুলিশকে আগেই বলেছি। ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ অপমানজনক। আমার মতো একজন সাংবাদিকের নাকের ডগায় খুনটা হলো, অথচ আমি টেরই পেলাম না যে খুনটা কে করলো? আমি কেবল ঐ মহিলাকে একটি চেয়ারে বসে খাবি খেতে খেতে মরে যেতে দেখলাম। আমার আরও দেখা, আরও জানা উচিত ছিল। তবে আমি নিশ্চিত যে বিষটা মেরিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্য নিয়েই গ্লাসে মেশানো হয়েছিল, মিসেস বেডকক-এর জন্য নয়।
–সে যাই হোক, তুমি যখন সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলে, তখন তোমার সঙ্গে কে কে ছিল?
লন্ডনের মার্গট বেনস, তার ক্যামেরা নিয়ে উপস্থিত ছিল।
–তুমি তার সঙ্গে পরিচিত?
-হ্যাঁ, প্রায়ই এখানে ওখানে দেখা হয়ে যায়। বেশ বুদ্ধিমতী মেয়ে। তার পেশায় বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। সিঁড়ির এমন জায়গায় ক্যামেরা রেখেছিল যেখান থেকে মেরিনার সঙ্গে প্রতিটি অতিথির সাক্ষাৎকারের ছবি তোলা যায়। লোলা ব্রিডস্টার আমার আগে আগে উঠছিলেন। আমি অবশ্য চুলের রং ও স্টাইল বদলে যাওয়ার কারণে প্রথমে ওঁকে চিনতে পারিনি।
–আচ্ছা, সেই সময় মেরিনার মধ্যে কি বিশেষ কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করেছিলেন?
-আশ্চর্য, সত্যিই তো! আমার তো এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল মেরিনা এখনই মূচ্ছা যাবেন, আপনি বললেন বলে মনে পড়লো।
-আচ্ছা! ধন্যবাদ। আমাকে আর কিছু বলার আছে তোমার?
–আর কি থাকতে পারে?
–আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না, তুমি কোনো কথা খেতেও পারো।
–একথাটা তাহলে বিশ্বাস করেন যে, এই হত্যাকাণ্ডে আমার কোনো হাত নেই। তাই তো? এর জন্যে ধন্যবাদ আপনাকে। কিন্তু ভেবে দেখুন, আমিই হয়তো মেরিনা-র প্রথম স্বামী। লোকটা এতই অকিঞ্চিত্বর ছিল যে, তার নামই কেউ জানে না।
–তাহলে তুমি বোধহয় প্রেপ স্কুলে থাকার সময় বা ন্যাপি পরে থাকার সময়ই সেই বিয়েটা করেছিলো। কেননা, সেটা অনেকদিন আগের ব্যাপার। আচ্ছা, চলি তাহলে। আমাকে এখনই ট্রেন ধরতে হবে।
নিউ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে টেবিলের সামনে বসেছিলেন ক্র্যাডক। সামনে স্তূপ করে রাখা কাগজগুলো দেখছিলেন। কাজ করতে করতে প্রশ্নগুলো ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন।
-লোলা ব্রিডস্টার কোথায় উঠেছেন?
–স্যাভয় হোটেলে, স্যার। স্যুট এর নাম্বার ১৮০০। উনি আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।
–আর মিঃ ফেন?
–উনি ডরচেস্টারে আছেন, দোতলায় ১৯০ নম্বর ঘর।
–ঠিক আছে।
স্যাভয় হোটেল-এ গিয়ে লোলা ব্রিডস্টার-এর কাছ থেকে সাদর অভ্যর্থনা পেলেন ক্র্যাডক। মহিলা যে একসময়ে দারুণ সুন্দরী ছিলেন, তা এখনও বোঝা যায়। মেরিনা-র মতো শান্তশ্রী নয়, খুবই চটকদার। কড়া প্রসাধন করার অভ্যেস আছে।
স্থানীয় পুলিশের মতো আপনিও কি আবার একরাশ ভয়ংকর প্রশ্ন করবেন নাকি?
আশা করছি খুব ভয়ানক হবে না সেগুলি।
–আমার কিন্তু মনে হয়, তাই হবে। তাছাড়া আমি সন্দেহ করছি, খুব বড়ো রকমের একটা ভুল হয়ে গেছে, এই ঘটনায়।
–আপনিই কি সত্যিই তাই মনে করেন?
–নিশ্চয়, আপনি কি ঐ খবরের কাগজগুলোর মতো সত্যিই মনে করেন, মেরিনাকে কেউ খুন করতে চেয়েছিল? ওকে কেন কেউ খুন করতে চাইবে, সবাই ওকে খুব ভালোবাসে।
–আপনিও।
–আমি সবসময়েই মেরিনা-র প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিলাম।
-ওঃ সবসময় বলবেন না মিস ব্রিডস্টার, এগারো বছর আগে আপনাদের মধ্যে কি একটা গণ্ডগোল হয়েছিল না?
–সেটা? ও কিছু নয়, তখন আমি খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম অবশ্য। রব আর আমার মধ্যে সাংঘাতিক ঝগড়া হত সেসময়। তখন আমরা কেউই ঠিক স্বাভাবিক ছিলাম না। মেরিনা ওর প্রেমে পড়ে গেল, আর ওকে আমার সংসার থেকে নিয়ে গেল।
–আপনি কি খুব বেশি আঘাত পেয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, আমার তখন তাই মনে হয়েছিল। এখন কিন্তু মনে হয় আমার পক্ষে সেটা ভালোই হয়েছিল। আমি ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে বেশি অস্থির হয়ে উঠেছিলাম, ওদের কোনো ঘর থাকবে না, এটা আমি ভাবতে পারছিলাম না। ওদের জন্যই বিয়েটা ভাঙতে চাইছিলাম না।
আপনি সেসময় অনেক কথাই বলেছিলেন, তাই না? আপনি তো মেরিনাকে গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েছিলেন?
-ওরকম অবস্থায় অনেকেই অনেক কিছু বলে, তাই বলে এতদিন পরে এসে আমি মেরিনাকে খুন করবো নাকি। আপনি জানেন, তারপরেই আমি আবার বিয়ে করেছি, এবং সুখী হয়েছি। ওসব ইমোশান বেশিদিন টিকে থাকে না ইনসপেক্টর। আর তাছাড়া আমাদের বক্তব্য কার্যকলাপ ঐ ফিল্ম ম্যাগাজিনগুলোতে বেশ অতিরঞ্জিত করেই লেখা হয়, জানবেন।
এরপর ডরচেস্টারে গিয়ে মিঃ ফেন-এর সঙ্গে দেখা করলেন চীফ ইনসপেক্টর, তিনি জানালেন একসময় মেরিনার সঙ্গে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল তার, তবে চারবছর দেখা হয়নি তার সঙ্গে। সেদিন পার্টিতে অপ্রত্যাশিতভাবে তাকে দেখে খুবই খুশী হয়েছিল মেরিনা। আন্তরিকভাবেই স্বাগত জানিয়েছিল। এরপর তিনি পানীয়ের টেবিলের দিকে চলে যান, কাজেই মিসেস বেডককের মৃত্যুর কারণ বিষয়ে কোনো প্রত্যক্ষ দর্শনের অভিজ্ঞতা নেই তার। এটা ঠিক, মেরিনা তাকে প্রত্যাখ্যান করে অন্য পুরুষকে বরণ করায় মানসিকভাবে আহত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এসব ব্যক্তিগত ব্যাপারে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা মনে আসে না তার। এছাড়া আর কিছু বলার নেই তার।