সেই দিনই একটু বেলায় মিঃ সিমিংটনের সঙ্গে আমার দেখা হলো।
আমি নিজেই উপযাচক হয়ে মেগানের কথাটা পাড়লাম।
-ও আমাদের কাছে কদিন থাকুক। নিশ্চয়ই আপনার অসুবিধে হবে না। যোয়ানাও একজন সঙ্গী পেয়ে খুশি হয়েছে।
-মেগান, ও হ্যাঁ হ্যাঁ-আপনারা সত্যিই খুব ভাল।
মনে হল, মেগানের কথা যেন তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন, আমি বলতে মনে পড়ল। ভদ্রলোকের প্রতি মনটা আমার বিরূপ হয়ে পড়ল। স্ত্রীর প্রথম স্বামীর সন্তানকে তিনি যে ভাল চোখে দেখেন না, তা বুঝতে কিছুমাত্র অসুবিধা হল না আমার।
বললাম, ওর সম্পর্কে কি করবেন বলে ভাবছেন? মেগানকে নিয়ে?
ইয়ে…ও তো বাড়িতেই থাকবে…এ বাড়ি তো ওরও।
.
বিকেলে এলেন মিস এমিলি বার্টন। আমি তখন বাগানে ছিলাম। সেখানেই আমার সঙ্গে কথা বললেন।
দু-এক কথার পরেই বললেন, বেচারা মেয়েটা, মেগানের কথা বলছি, খুবই অস্বস্তিকর ব্যাপারের সঙ্গে জড়িয়ে গেল।
–ব্যাপারটা সম্পর্কে আপনার কি ধারণা? আমি আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলাম। ব্যাপারটা সত্যি বলে মনে করেন?
–কখনোই না। একদম বাজে। মিসেস সিমিংটন এরকম একটা কাজ–না, না, অসম্ভব। তবে এটাকে ঈশ্বরের একটা বিচারই বলতে পারেন।
–ঈশ্বরের বিচার? আমি অবাক হলাম।
-হ্যা! এই যে সব নোংরা চিঠি–তার ফলে মানসিক যন্ত্রণা,-এ সব কিছুরই পেছনে একটা উদ্দেশ্য কাজ করেছে নিশ্চয়।
-কোন হীন উদ্দেশ্য যে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বললাম আমি।
–আপনি আমার কথা ঠিক ধরতে পারেননি মিঃ বার্টন, চিঠিগুলো যে লিখছে, সেই নীচমনা লোকের কথা আমি বলছি না, আমি বলছি, এরকম ঘটনা হয়তো ঈশ্বরের অভিপ্রেত–আমাদের দোষত্রুটির কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য।
–মানুষ নোংরা কাজ নিজের ইচ্ছেতেই করে মিস বার্টন, কিন্তু আশ্চর্য হল, তার এই কাজের দায়ভাগ ঈশ্বরের ওপরে চাপিয়ে দিতেই অভ্যন্ত। এভাবে আমরা নিজেরাই শাস্তির ব্যবস্থা করে রাখি–বুঝতে পারি না। এসবের মধ্যে ঈশ্বরকে টেনে আনার প্রয়োজন করে না।
–আমিও স্বীকার করি মিঃ বার্টন।
তারপর গলার স্বর খাটো করে এনে বললেন, সবাই বলছে, এসব কাজ করছে মিসেস ক্লিট। তবে আমি এসব বিশ্বাস করি না। আগে এখানে এসব কিছু ছিল না। সুন্দর সুখী একটা গ্রামীণ সমাজ ছিল। এখন এসব দেখে খুবই খারাপ লাগছে।
–আপনি–এধরনের কিছু পাননি?
ওহ না! রক্ষে করুন।
মুখচোখ লাল হয়ে উঠল তার। আমি দ্রুত ক্ষমা চাইলাম।
এরপর বাইরে থেকেই তিনি বিদায় নিলেন। তাকে বেশ চিন্তিতই মনে হল আমার।
বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। ড্রইংরুমে চুল্লীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে যোয়ানা। চোখে পড়ল তার হাতে একখানা খোলা চিঠি।
-জেরি, এসেছিস, ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল যোয়ানা, এই চিঠিটা বাক্সে পেলাম, কেউ হাতে করে ফেলে গিয়েছে।
-কি আছে, ওতে? তিক্ত স্বরে বললাম আমি।
–সেই একই নোংরা কথা।
কথা শেষ করে চিঠিখানা আগুনে ছুঁড়ে দিল ও। আমি চকিতে ঝাঁকুনি দিয়ে নুয়ে পড়ে সেটা টেনে নিয়ে এলাম–আগুনে ধরে উঠবার আগেই।
–বোকার মতো কাজ করছিস কেন? এটা আমাদের দরকার হবে। পুলিসকে দিতে হবে।
স্থানীয় থানার সুপারিন্টেন্ডেন্ট ন্যাস পরদিন সকালে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। খুবই যোগ্য অফিসার। সামরিক অফিসারের মতো দীর্ঘ বলিষ্ঠ চেহারা। চিন্তাশীল চোখ। প্রথম দৃষ্টিতেই তাকে আমার ভাল লাগল।
প্রাথমিক সৌজন্যমূলক কথাবার্তার পর তিনি বললেন, সেই বেনামী চিঠির ব্যাপারে এসেছিলাম। শুনেছি, এরকম একটা চিঠি আপনিও পেয়েছেন।
-হ্যাঁ। এখানে আসার কিছু দিন পরেই।
–কি লেখা ছিল ওতে?
আমি সংক্ষেপে সেই চিঠির বিষয়বস্তুর কথা খুলে বললাম। ধৈর্য ধরে সবকথা শুনলেন ন্যাস।
–চিঠিটা কি আপনি
–দুঃখিত মিঃ ন্যাস, চিঠিটা সঙ্গে সঙ্গেই নষ্ট করে ফেলি। আসলে এত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি তখন, ভেবেছি, কোন ঈর্ষাপরায়ণ লোক আমাদের এখানে আসা মেনে নিতে না পেরে লিখেছে।
-ওরকম চিঠি আমাদের হাতে পৌঁছন দরকার। বললেন ন্যাস।
–তবে আমার বোন গতকালই একটা চিঠি পেয়েছে। ও পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল। আমি দিইনি।
-ধন্যবাদ, মিঃ বার্টন। খুবই বুদ্ধির কাজ হয়েছে এটা।
আমি ড্রয়ার খুলে চিঠিটা বার করে ন্যাসের হাতে দিলাম।
চিঠিটা পড়লেন ন্যাস। মাথা ঝাঁকালেন। তার কপালে বিরক্তির ছাপ পড়ল। চিঠিটা ভাঁজ করে পকেটে চালান করলেন।
–এটা কি আগের চিঠির মতোই আপনার মনে হচ্ছে–মানে খামের সঙ্গে আসল চিঠির তফাৎ।
-হ্যাঁ, এক রকমই তো মনে হচ্ছে আমার। বললাম আমি, খামের ওপরে নাম টাইপ করা আর ছাপা অক্ষর কেটে আঠা দিয়ে কাগজে সেঁটে চিঠিটা লেখা হয়েছে–একই রকমে।
–আমরা কয়েকজনকে নিয়ে একটা আলোচনা করতে চাই। কোন অসুবিধা না হলে, আপনাকে আমার সঙ্গে থানায় আসতে অনুরোধ করব। এতে আমাদের হয়রানি কিছুটা কমবে মনে হয়।
–নিশ্চয়ই আসব, বললাম আমি, আমার অসুবিধার কিছু নেই।
এরপর পুলিসের গাড়িতেই আমরা থানায় রওনা হলাম।
আমি বললাম, এই বেনামী চিঠি-রহস্যের গোড়ায় পৌঁছতে পারবেন বলে আপনি মনে করছেন?
নিশ্চয়ই পারব, বললেন ন্যাস, কিছু সময় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যেতে হবে। আসলে দরকার আমাদের কাজের ক্ষেত্রে গণ্ডী ছোট করে আনা।
তার মানে, কিছু বাদ দেবার কথা ভাবছেন?
-হ্যাঁ। তারপর পদ্ধতি মাফিক এগনো। যেমন ডাকবাক্সের ওপর নজর রাখা, হাতের ছাপের পরীক্ষা, টাইপরাইটারের খোঁজ নেওয়া–এইসব।