- বইয়ের নামঃ ভ্যাম্পায়ারের দ্বীপ
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, কল্পকাহিনী
ভ্যাম্পায়ারের দ্বীপ
০১.
আগে চলো পিজ্জা কোভে যাই, মুসা বলল। আজকাল ওদের পিজ্জাগুলো আরও ভাল হয়েছে। বীফ আর মাশরূম দিয়ে যা বানায় না!
ওর বলার ধরনই বুঝিয়ে দিল, জিভে পানি এসে গেছে।
হাসল রবিন, বেরিয়েই আগে খাওয়ার চিন্তা?
তো আর কার করবে? খাওয়াই তো জীবন, মুসার কথায় সায় দিয়ে বলল টনি হাওয়াই। ঝাড়ুর শলার মত খাড়া খাড়া চুলে আঙুল চালানোর চেষ্টা করল। হেঁটে এত খাটো করে ফেলেছে, আঙুল ঢোকেই না। ওদের পিজ্জা আমারও খুব ভাল লাগে। প্রায়ই খাই।
আবার মাথা ঝাঁকাল রবিন। সেটাও জানি। তোমাকে চিনতেও কি আর। বাকি আছে নাকি আমার।
পিজ্জা কোভ আমার মোটেও ভাল লাগে না, জানিয়ে দিল টনির ছোট বোন সিসি। বছর সাতেক বয়েস। কিন্তু পাকা পাকা কথা বলার ওস্তাদ। পিজ্জা তো আরও পচা।
স্কুলে গরমের ছুটি হতেই খালার বাড়ি বেড়াতে চলে গিয়েছিল সিসি। সেজন্যে বাবা-মা আর ভাইয়ের সাথে একসঙ্গে আসেনি। দুদিন হলো ওর খালাত ভাই রেখে গেছে ওকে স্যান্ডি হোলোতে।
এসেই ভাইয়ের পেছনে লেগেছে সিসি। ভাই যেখানে যায়, তারও সেখানে যাওয়া চাই। নিতে চায় না টনি। কিন্তু না নিলে মায়ের ধমক খেতে হয়। কি আর করে বেচারা। নিতে বাধ্য হয়।
খেঁকিয়ে উঠল টনি, চুপ! তোকে কেউ জিজ্ঞেস করছে না। আইসক্রীমখোরের পিজ্জা কোভ ভাল লাগার কারণ নেই।
মেইন স্ট্রীট ধরে হাঁটতে হাঁটতে চারপাশে তাকাতে লাগল রবিন। সেই আগের মতই আছে স্যান্ডি হোলো৷ মিনি মার্কেটটা ছাড়া আর কোথাও তেমন কোন পরিবর্তন নেই।
আজই রকি বীচ থেকে মুসার সঙ্গে এসে হাজির হয়েছে সে। জিনাকে ভ্যাম্পায়ারের দ্বীপ থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে সাত দিন আগে। তার অবস্থা দেখে সেদিনই তাকে নিয়ে রকি বীচে ফিরে গেছেন তার বাবা-মা। সঙ্গে গিয়েছিল মুসা।
জিনার মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে। কোন কথা মনে করতে পারে। উল্টোপাল্টা আচরণ করে। বাধ্য হয়ে তাকে মেন্টাল হোমে ভর্তি করতে হয়েছে। ডাক্তারের ধারণা, বিষাক্ত কোন কিছু রক্তে ঢুকে যাওয়াতে মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে জিনার। ভ্যাম্পায়ারের কথা ডাক্তার কিংবা জিনার আব্বা-আম্মাকে বলতে যায়নি মুসা, তাকেও যদি পাগল ভেবে হাসপাতালে আটকে রাখে, এই ভয়ে। জন আর লীলার কথাও গোপন রেখেছে।
তবে কিশোর আর রবিনকে সব ঘটনা খুলে বলেছে সে।
ভ্যাম্পায়ারের কথা বিশ্বাস করেনি দুজনের কেউই, তবে কোন একটা রহস্য যে আছে, এ ব্যাপারে কিশোর নিশ্চিত। মুসা আর রবিনের সঙ্গে আসতে পারেনি সে। জরুরী কাজে রাশেদ পাশার সঙ্গে কোথায় নাকি যেতে হবে। রবিনকে নিয়ে স্যান্ডি হোলোতে ফিরে যেতে বলেছে মূসাকে। তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেছে। সময় করতে পারলে সে নিজেও স্যান্ডি হোলোতে চলে আসবে।
গালে এসে লাগছে ভেজা নোনা বাতাস। লম্বা, বাদামী চুল উড়ছে রবিনের। কেঁপে উঠল, বাপরে, খুব ঠাণ্ডা! শীত লাগছে।
শীতই তো মজা, উনি বলল। খোলা সৈকতে অগ্নিকুণ্ডের পাশে বসতে আরাম। ঠাণ্ডা পড়লে পার্টি জমে ভাল।
সবগুলো পাগল, সিসি বলল। নইলে শীতের মধ্যে কেউ করে এসব। ঘরে লেপের নিচে থাকা অনেক আরাম।
তাহলে সেটাই থাকতি, আমাদের সঙ্গে এলি কেন?
আমার ইচ্ছে।
তাহলে ওদেরও ইচ্ছে। কোনটা বেশি আরাম, তোর কাছে জিজ্ঞেস করবে নাকি?
করলে ভাল করত… কথা শেষ না করেই চিৎকার করে উঠল সিসি, দেখ দেখ, ওই যে আইসক্রীমের দোকান! নতুন হয়েছে, তাই না, টনি? আগের বার কিন্তু দেখিনি।
ভাইকে নাম ধরে ডাকে সিসি। ভাইয়া ডাকতে বললে ডাকে না, বলে ওসব পুরানো ঢঙ তার ভাল লাগে না। নাম ধরে ডাকাটা অনেক বেশি আধুনিক।
মুচকি হাসল রবিন। ভাইবোনের এই ঝগড়া ভালই লাগছে ওর। টনিকে বোকা বোকা লাগছে।
প্রিন্সেস-এর আইসক্রীম পারলার আর ভিডিও আর্কেডের দিকে তাকিয়ে চোখ চকচক করছে সিসির। ভাইয়ের হাত আঁকড়ে ধরে কো-কো শুরু করল, টনি, দে না একটা আইসক্রীম কিনে। বেশি করে যদি দিস, যা, আজ থেকে তোকে ভাইয়া ডাকাই শুরু করব।
ঘোঁৎ-ঘোৎ করে উনি বলল, পরে।
দিবি তো?
দেখা যাক। তুই কতখানি জ্বালাতন করিস, দেয়া না দেয়া তার ওপর নির্ভর করবে।
মেইন স্ট্রীটের শেষ মাথায় গিয়ে ঘুরে আবার যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে ফিরে চলল ওরা।
মিনি মার্কেটটায় লোকের ভিড় তেমন নেই। সৈকতে চলে গেছে সব। এখানে তো আর কেনাকাটা করতে আসে না ট্যুরিস্টরা, বেড়াতেই আসে।
গরমকালটা এখানে ভালই কাটত, অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলল মুসা, যদি না
থাক থাক, কি বলতে চায় মুসা বুঝে ফেলেছে রবিন, তাড়াতাড়ি বাধা দিল, এখন ওসব কথা…
কি কথা? জানতে চাইল টনি।
বললাম তো থাক। তারচেয়ে বরং নাটকের কথা বলো। হচ্ছে তো এবার?
হ্যাঁ, হবে। না হওয়ার কোন কারণ নেই। কবে লোক বাছাই করা হবে, দুএকদিনের মধ্যেই ঘোষণা দেবেন মিসেস রথরক…
নাটকের কথা শুনতে আমার ভাল্লাগে না, সিসি বলল।
তুই থাম! ধমক দিল টনি। কোনটাই তো তোর ভাল লাগে না, তাহলে এসেছিস কেন?
লাগে তো–বেড়াতে আর আইসক্রীম খেতে…
চুপ থাক! নইলে পাবি না।
মেইন স্ট্রীট থেকে বেরিয়ে ডানে মোড় নিল ওরা। এগিয়ে চলল সৈকতের দিকে। গোমড়া মুখে তিনজনের পিছে পিছে চলল সিসি। আইসক্রীম ছাড়া সৈকতে যেতে মোটেও ইচ্ছুক নয় সে।