- বইয়ের নামঃ নেমেসিস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী
নেমেসিস
১. সেন্ট মেরী মিডে
নেমেসিস (১৯৭১) – আগাথা ক্রিস্টি
অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ
০১.
সেন্ট মেরী মিডে মিস মারপলের বাড়িতে প্রতিদিন সকালে দুটো খবরের কাগজ আসে।
সকালের চায়ে চুমুক দিতে দিতে একটা কাগজে তিনি চোখ বোলান। দ্বিতীয় কাগজটা নিয়ে বসেন বিকেলের দিকে।
পিঠে বাতের জন্য বিশেষ ভাবে বানানো সোজা একটা আরাম কেদারা বারান্দায় রাখা আছে। দুপুরের আহারের পর এখানে বসেই তিনি মিনিট কুড়ি ঘুমিয়ে নেন।
সেদিনও টাইমস পত্রিকা হাতে নিয়ে নির্দিষ্ট চেয়ারটিতে বসে পাতা ওল্টাচ্ছিলেন।
একে একে জম্ম, বিবাহ আর মৃত্যুর কলম দেখে নিয়ে তিনি চিঠিপত্রগুলো পড়লেন।
পরে আবার মৃত্যুর কলমে চোখ বোলাতে গিয়ে একটা নাম পড়ে একটু থমকে গেলেন।
র্যাফায়েল। জ্যাকসন র্যাফায়েল। বেলফোর্ড পার্ক, মেইডস্টোন।
নামটা কেমন পরিচিত লাগছে। মিস মারপলের মনে হল কোথাও আগে শুনেছেন নামটা।
আজকাল বয়স হয়েছে। সবকিছু ঠিক সময়ে মনে পড়ে না। অনেক কিছু মনেও করতে পারেন না।
কিছুক্ষণ চেষ্টা করলেন। কিন্তু র্যাফায়েল নামটা কোন্ সূত্রে পরিচিত মনে হয়েছে কিছুতেই মনে করতে পারলেন না।
অন্যমনস্ক ভাবে জানালা দিয়ে বাগানের দিকে তাকালেন তিনি। তার কাছে বড় আনন্দের ছিল এই বাগান। একসময় এর পেছনে অনেক পরিশ্রম করেছেন।
ডাক্তারদের নির্দেশ মানতে হয় এখন। চেয়ারে বসেই কেবল তাকিয়ে দেখেন।
অন্যমনস্ক ভাবটা কাটতেই হঠাৎ মনে পড়ে গেল-নীল সমুদ্র-ক্যারিবিয়ান সাগর। হা…মনে পড়ে গেছে…মিঃ র্যাফায়েল। ভাইপোর কল্যাণে ক্যারিবিয়ানে তিনি ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেন্ট অনরে দ্বীপ।
সেখানেও খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই বয়স্ক মেজর, তার একটা চোখ ছিল কাচের। বিরক্তিকর গল্প শোনাতেন আর সেই সূত্রেই ক্যারিবিয়ানের দিনগুলো অন্যরকম হয়ে উঠেছিল।
বেচারা মেজর…মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু তার নামটা মনে করতে পারলেন না মিস মারপল। কিন্তু মিঃ র্যাফায়েল, তার সেক্রেটারী মিসেস–মিসেস ওয়াল্টার্স…এসথার ওয়াল্টার্স আর তার অঙ্গসংবাহক সেই ছোকরা…কি নাম যেন..হা জ্যাকসন…সবই মনে পড়ছে।
বেচারা মিঃ র্যাফায়েল…হুইল চেয়ারে ছাড়া চলাফেরা করতে পারতেন না। তাহলে তিনি মারা গেছেন। অবশ্য তিনি জানতেন যে খুব বেশি দিন তার আয়ু নেই। কথাটা মিঃ র্যাফায়েল তাকে জানিয়েও ছিলেন।
অসম্ভব ধনী ছিলেন মিঃ র্যাফায়েল। আর একগুঁয়ে। ধনী বলে অবশ্য সকলেই মানিয়ে নিত। অমন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষকে সহজে ভোলা যায় না। এক বছরের মধ্যেই তিনি বিদায় নিলেন।
মিস মারপলের মন এবারে ক্যারিবিয়ানের সেই দ্বীপেই ঘুরে ফিরতে লাগল। সেই আর্থার জ্যাকসন…সে কি শেষ পর্যন্ত ছিল মিঃ র্যাফায়েলের কাছে?
আর এসথার–এসথার ওয়াল্টার্স…তার কি হল? তার তো কিছু অর্থ পাওয়ার কথা ছিল। এত দিনে তা তার পাওয়া হয়ে গেছে নিশ্চয়।
মিস মারপলের মনে পড়ল, এক আঁধার ঘেরা রাতে ছুটে গিয়েছিলেন মিঃ র্যাফায়েলের কাছে। তিনি সেই মুহূর্তে নিয়তি বলে সম্বোধন করেছিলেন তাঁকে।
নিজের মনেই স্বগতোক্তি করলেন তিনি, আশা করি মিঃ রাফায়েল বেশি যন্ত্রণা ভোগ করেননি।
সেদিন বিকেলে চেয়ারে বসে বহুক্ষণ মিঃ র্যাফায়েলের কথা ভাবলেন মিস মারগল। ইংল্যাণ্ডে ফিরে তাঁর সঙ্গে দেখা হবে, এমনটি অবশ্য তিনি ভাবেননি। দেখাও হয়নি। অথচ প্রায়ই মনে হতো ভদ্রলোকের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। কোথায় যেন একটা অদৃশ্য যোগসূত্র অনুভব করতেন।
আরো কিছু পরে ধীর পায়ে বাগানে গিয়ে ঢুকলেন মিস মারপল। নিজের মনেই বকবক করছেন। জর্জ আজকাল ঠিকঠিক যত্ন নেয় না ফুলগাছগুলোর। তাকে আবার একটু ধমকে দিতে হবে।
হঠাৎ রেলিঙের বাইরে গলি থেকে কেউ বলে উঠল, আপনার বাগানটা খুব সুন্দর।
বক্তাকে চোখে দেখলেও চিনতে পারলেন না তিনি। মেদবহুল চেহারার এক ভদ্রমহিলা। মজবুত টুইডের স্কার্ট পরা। সবুজ পুলওভার স্কার্ফও আছে।
সেন্ট মেরী মিডের প্রায় সকলকেই চেনেন মিস মারপল। এই মহিলাকে কখনো দেখেছেন বলে মনে করতে পারলেন না।
এখন আর তেমন নেই। জবাব দিলেন মিস মারপল, আজকাল নিজে আর দেখাশোনা করতে পারি না।
–আমি নিজেও বাগান ভালবাসি। নিশ্চয় সবজান্তা বয়স্ক কেউ আপনার বাগান দেখাশোনা করে? জানতে চাইলেন বাগানের বাইরে দাঁড়ানো মহিলা।
আপনি এখানেই থাকেন?
–মিস হেস্টিংস নামে একজনের বাড়িতে আছি। মনে হয় তার কাছেই আপনার কথা শুনেছি। আপনিই তো মিস মারপল, তাই না?
-হ্যাঁ।
-আমি বাগান দেখাশোনা করি। আমার নাম বার্টলেট, মিস বার্টলেট। এখানে বিশেষ কিছু করার নেই বলে মাঝে মাঝে কেনা কাটার কাজও করি। আপনার বাগানের কাজে দরকার হলে দু ঘন্টা করে সময় দিতে পারি।
মিস হেস্টিংসকে মনে করতে পারলেন না মিস মারপল। জিব্রাল্টার রোডের নতুন বাড়িগুলোর কেউ হবে হয়তো মনে করলেন।
তিনি আর কথা বাড়ালেন না। আরও খানিকক্ষণ বাগানে ঘুরে বাড়িতে ফিরে এলেন।
টাইমসের খবরটা আবার মনে পড়ল। মিঃ র্যাফায়েলকে নিয়েই মন ব্যস্ত হয়ে পড়ল।