- বইয়ের নামঃ দ্য মুভিং ফিংগার
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী
দ্য মুভিং ফিংগার
১-৫. লিমন্টকের শান্ত গ্রামীণ পরিবেশ
দ্য মুভিং ফিংগার / আগাথা ক্রিস্টি / অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ
০১.
লিমন্টকের শান্ত গ্রামীণ পরিবেশেই শেষ পর্যন্ত একটা বাড়ি পছন্দ হল আমাদের।
বাড়িটার নাম লিটল ফার্জ। যোয়ানা খুব খুশি বাড়ি দেখে। আমিও নিশ্চিন্ত হলাম।
লিমন্টকের আধমাইল বাইরে জলাভূমির দিকে যাওয়া রাস্তার ওপরেই। সুন্দর সাদা রঙের বাড়ি। সামনে ভিক্টোরীয় যুগের হালকা সবুজ রঙ করা বারান্দা। মিস বার্টন নামে এক অবিবাহিত মহিলা বাড়িটার বর্তমান মালিক।
এরকম একটা অজানা অচেনা পরিবেশে আসার উৎসাহ দিয়েছিলেন আমার ডাক্তার মার্কাস কেন্ট।
তিনি বলেছিলেন, আপনার স্নায়ু আর পেশী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে নিশ্চিত, তবে একটু সময় লাগবে। খুব তাড়াতাড়ি সেরে ওঠার জন্য ব্যস্ত হবেন না। দীর্ঘদিন ওষুধের ওপর রয়েছেন, স্বাভাবিক ভাবেই স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই শরীরের সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুকেও সেরে ওঠার সময় দিতে হবে। বোনকে নিয়ে গ্রামের দিকে চলে যান।
একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে গ্রামীণ পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাবার চেষ্টা করুন। আপনাকে চিকিৎসক হিসেবে এটাই আমার পরামর্শ।
বিমান ভেঙ্গে পড়ে জবরদস্ত জখম হয়েছিলাম। নার্সিংহোমে টানা পাঁচ মাস চিকিৎসাধীন থাকতে হয়েছে। এখন ডাক্তার কেন্টের পরামর্শ মতো লিমন্টকের ভাড়া বাড়িতে নতুন আস্তানা হল আমার আর যোয়ানার।
বয়সে আমি যোয়ানার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট।
লিটল ফার্জ ভাড়া নেওয়া হল ছমাসের জন্য। চুক্তিতে আরও তিন মাসের সংস্থান রাখা হয়েছে।
এমিলি বার্টন ছোটখাট চেহারার চমৎকার মহিলা। বাড়িটা ভাড়া দেবার ইচ্ছা ছিল না। আমাদের সঙ্গে কথা বলে তার ভাল লেগেছিল, তাছাড়া আমার অবস্থার কথাও শুনেছিলেন, তাই খুশি হয়েই বাড়িটা আমাদের ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন।
এমিলি বার্টন জানিয়েছিলেন, তার পনেরো বছরের পার্লারমেইড ফ্লোরেন্স সম্প্রতি বিয়ে করেছে। ওদের হাই স্ট্রীটে একখানা চমৎকার বাড়ি আছে। সেখানে একেবারে ওপরের তলাতেই তিনি থাকবেন।
ওখানে আমাদের নতুন পরিচারিকার সন্ধান করতে হয়নি। এমিলি বার্টনের পরিচারিকা পারট্রিজ আমাদের কাছেই কাজ করতে রাজি হয়ে গেল।
তাকে সাহায্য করবার জন্য একটা মেয়েও রইল-বিট্রিস নাম তার। রোজ সকালে এসে সে পারট্রিজকে সাহায্য করবে।
পারট্রিজ কেমন একটু রুক্ষ প্রকৃতির তবে তার রান্নার হাত প্রশংসনীয়। আমার শরীর সেরে ওঠার জন্য যে ভাল খাবারদাবার দরকার এবিষয়েও সে যথেষ্ট সচেতন ছিল।
আমার বোন যোয়ানা খুবই সুন্দরী আর হাসিখুশি মেয়ে। নাচগান, হৈ হুল্লোড় করেই থাকতে ভালবাসে। প্রেম করে বেড়ানো ওর একটা বাতিক। তবে পল নামে একটা প্রতিভাবান ছেলেকে ও সত্যিই ভালবেসেছিল। কিন্তু সে ব্যাপারটা বেশিদূর গড়াতে পারেনি। খুবই আঘাত পেয়েছিল যোয়ানা। মনের মেরামতির জন্য তারও একটু নির্জনতার দরকার ছিল।
গ্রামের নতুন জীবনে একদিন একদিন করে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠতে লাগলাম। আমার সুন্দরী বোনের কাছেও গ্রামের জীবন বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠছিল।
বেশ চটকদার পোশাক পরেই সে ঘোরাঘুরি করে বেড়ায়। লিমণ্টকের হাই স্ট্রিটে লোকেরা ওর দিকে কেমন হাঁ করে তাকিয়ে থাকে বেশ রসিয়ে রসিয়ে সেই গল্প সে করে আমাকে।
এসব নিয়ে আমি অবশ্য তাকে পরিবেশের অনুকূল পোশাক ও মেকআপের কথাই বারবার স্মরণ করিয়ে দেই। আমার কথা শুনে যোয়ানা খুব মজা পায়, হেসে লুটিয়ে পড়ে।
লিমন্টকে এক সপ্তাহের জীবনেই আমরা মিস এমিলি বার্টন সহ নতুন কিছু বন্ধু পেয়ে গেলাম। এরা হলেন এখানকার একজন উকিলের স্ত্রী মিসেস সিমিংটন, ডাক্তারের বোন মিস গ্রিফিথ, ভাইকারের স্ত্রী মিসেস ভেন ক্যালথ্রপ আর প্রিয়রস এণ্ডের মিঃ পাই।
মেলামেশার নতুন সঙ্গীদের পেয়ে যোয়ানা মন্তব্য করল, এই বেশ হলো, বেশ একটা সুখী পরিবারের মত। জানিস জেরি, আমার মনে হচ্ছে জায়গাটা সত্যিই ভাল। এখানে খারাপ কিছু ঘটে বলে মনে হয় না।
আমিও কথাটা স্বীকার করলাম। লিমণ্টকের মতো জায়গায় খারাপ কিছু ঘটতে পারে ভাবা যায় না। আমরা শান্তিতেই থাকতে পারব।
আমাদের ধারণাটা যে কত হাস্যকর এক সপ্তাহ পরেই হাড়ে হাড়ে বুঝে গেলাম। প্রথম চিঠিটা পেয়েই আমাদের সেই বোবোদয় হল।
.
লিমণ্টক জায়গাটা একটু খোলামেলা। পরিচয় না দিলে আমার এই কাহিনী ঠিক বুঝতে পারা যাবে না।
এই অঞ্চলের ইতিহাস খুবই প্রাচীন। নর্মান বিজয়ের সময় প্রধানত গির্জার জন্য লিমক বেশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল। একটা বিখ্যাত প্রায়রি এখানে ছিল। কয়েকজন ক্ষমতাশালী প্রিয়রও ক্রমান্বয়ে ক্ষমতা ভোগ করেছেন। ঈশ্বর সেবার উদ্দেশে ক্ষমতাবান লমবার্ড ও ব্যারনেরা অনেক জমিও দান করেন।
এসব কারণে লিমণ্টক কয়েক শতাব্দী ধরে বেশ গুরুত্ব পেয়ে এসেছে।
অষ্টম হেনরীর আমলেই সমসাময়িক অনেক গির্জার মতো লিমন্টকের গির্জারও গুরুত্ব খর্ব করা হয়েছিল।
তখন থেকেই ক্ষমতা অর্থ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে এক দুর্গ এখানে প্রধান শক্তির কেন্দ্র হয়ে ওঠে।